উপদেশ ২৭. জান্নাত ও জাহান্নাম আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنْ اَبِىْ مُوْسَى الْاَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ حَجَرًا يُقْذَفُ بِهِ فِىْ جَهَنَّمَ هَوَى سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا قَبْلَ اَنْ يَبْلُغَ قَعَرَهَا.

আবু মূসা আশ‘আরী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, যদি একটি পাথর জাহান্নামের মুখ হ’তে নিক্ষেপ করা হয়, পাথরটি ৭০ বছর নীচে যেতে থাকে, তবুও জাহান্নামের শেষ প্রান্তে পৌঁছতে পারবে না (সিলসিলা ছাহীহা হা/১৪৯৬)। অত্র হাদীছ সমূহে জাহান্নামের এমন গভীরতা প্রমাণ হয়, যা মানুষের আয়ত্বের বাহিরে। কারণ একটি পাথর ৭০ বছর ধরে নীচে পড়তে থাকলে ঐ স্থানের গভীরতা কত হ’তে পারে তা অনুমান করা মানুষের পক্ষে অতীব কঠিন।

عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ اَتَدْرِىْ مَا سَعَةُ جَهَنَّمَ قُلْتُ لاَ قَالَ اَجَلْ وَاللهِ مَا تَدْرِىْ اَنَّ بَيْنَ شَحْمَةِ اُذْنِ اَحَدِهِمْ وَبَيْنَ عَاتِقِهِِ مَسِيْرَةُ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا تَجْرِى فِيْهَا اَوْدِيَةُ الْقَيْحِ وَالدَّمِ قُلْتُ اَنْهَارٌ قَالَ لاَ بَلْ اَوْدِيَةٌ ثُمَّ قَالَ اَتَدْرُوْنَ مَا سَعَةُ جَهَنَّمَ قُلْتُ لاَ قَالَ اَجَلْ وَاللهِ مَا تَدْرِى حَدَّثَنِى عَائِشَةُ اَنَّهَا سَأَلَتْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ قَوْلِهِ وَالْاَرْضُ جَمِيْعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِيْنِهِ فَاَيْنَ النَّاسُ يَوْمَئِذٍ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ هُمْ عَلَى جَسَرِ جَهَنَّمَ.

মুজাহিদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, ইবনে আববাস (রা.) আমাকে বললেন, আপনি কি জাহান্নামের প্রশস্ততা সম্পর্কে কিছু জানেন? আমি বললাম, জি-না। তিনি বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর কসম! আপনি জানেন না। নিশ্চয়ই জাহান্নামীদের কারো কানের লতি এবং তার কাঁধের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান হচ্ছে ৭০ বছরের পথ। তার মধ্যে চালু থাকবে পুঁজ ও রক্তের নালা। আমি বললাম সেগুলি কি নদী? তিনি বললেন, না; বরং সেগুলি হচ্ছে নালা বা ঝর্ণা। ইবনে আববাস (রা.) আবার বললেন, আপনি কি জাহান্নামের প্রশস্ততা সম্পর্কে কিছু জানেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর কসম! আপনি জানেন না। আয়েশা (রাঃ) আমাকে বলেছেন, তিনি রাসূল(সা.) -কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, وَالْاَرْضُ جَمِيْعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِيْنِهِ ‘ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত জমিন আল্লাহর হাতের মুষ্টিতে থাকবে আর সমস্ত আকাশ তার ডান হাতে পেঁচানো থাকবে (যুমার ৬৭)। হে আল্লাহর রাসূল (সা.) ! সেদিন মানুষ কোথায় থাকবে? নবী করীম(সা.) বললেন, সেদিন তারা জাহান্নামের পুলের উপর থাকবে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৫১৩)। অত্র হাদীছে জাহান্নামের প্রশস্ততা প্রমাণ হয়। কারণ জাহান্নামীদের কানের লতি ও কাঁধের দুরত্বের ব্যবধান যদি ৭০ বছরের পথ হয় তাহ’লে ব্যক্তি কত বড় হ’তে পারে এবং প্রতি হাজারে নয়শত নিরানহবই জন লোক যদি জাহান্নামে যায়, তবে জাহান্নাম কত বড়। তারপর আল্লাহর নবী বললেন, যেদিন আসমান যমিন আল্লাহ হাতে গুটিয়ে নিবেন সমস্ত সেদিন মানুষ জাহান্নামের পুলের উপর থাকবে। তাহ’লে জাহান্নাম কত বড় এবং পুল কত বড় তা মানুষ বিবেচনা করতে পারবে কি?

عَنْ اَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ عُنُقٌ مِنْ النَّارِ يَتَكَلَّمُ يَقُوْلُ وُكِّلْتُ الْيَوْمَ بَثَلاَثَةٍ بِكُلِّ جَبَّارٍ عَنِيْدٍ وَبِمَنْ جَعَلَ مَعَ اللهِ اِلَهًا آخَرَ وَبِمَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ فَيَنْطَوِى عَلَيْهِمْ فَيُقْذِفُهُمْ فِىْ غَمَرَاتِ جَهَنَّمَ.

আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে একটি গ্রীবা বা গলা বের হবে, সে কথা বলবে। সে বলবে, আজ তিন শ্রেণীর মানুষকে আমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছে। ১. প্রত্যেক অহংকারী, স্বেচ্ছাচারী, অবাধ্য ও জেদী মানুষকে ২. আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে মা‘বুদ হিসাবে গ্রহণ করত অর্থাৎ শিরক করত ৩. আর যে ব্যক্তি মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল। তারপর জাহান্নাম তাদেরকে ঘিরে ধরবে এবং জাহান্নামের গভীরতায় নিক্ষেপ করবে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৫২৩)। জাহান্নাম উক্ত তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলবে এবং তাদের ঘিরে ধরে জাহান্নামের গভীরতায় নিক্ষেপ করবে।

عَنِ السُّدِّى قَالَ سَأَلْتُ مَرَّةً الهَمْدَانِىَّ عَنْ قَوْلِ هَذَا وَاِنْ مِّنْكُمْ اِلاَّ وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا فَحَدَّثَنِىْ اَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ حَدَّثَهُمْ عَنْ رَسُوْلِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَرِدُ النَّاسُ كُلُّهُمُ النَّارَ ثُمَّ يَصْدُرُوْنَ مِنْهَا بِاَعْمَالِهِمْ فَاَوَّلُهُمْ كَلَمْعِ الْبَرَقِ ثُمَّ كَمَرِّ الرِّيْحِ ثُمَّ كَحَضَرِ الْفَرَسِ ثُمَّ كَالرَّاكِبِ ثًمَّ كَشَدِّ الرِّجَالِ ثُمَّ كَمَشْيِهِمْ.

মুফাসসির আল্লামা সুদ্দী (রহঃ) বলেন, আমি একদা হামদানী (রা.) -কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম,وَاِنْ مِّنْكُمْ اِلاَّ وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا আর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রম করবে না (মরিয়ম৭১)। হামদানী বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ আমাদেরকে বলেছেন। নবী করীম(সা.) আমাদের বলেছেন, সকল মানুষকেই জাহান্নামের উপর দিয়ে পার হ’তে হবে। তারা তাদের আমলের ভিত্তিতে জাহান্নামের উপর দিয়ে পার হয়ে যাবে। তাদের প্রথম দল পার হবে বিদ্যুৎ গতিতে, তারপরের দল পার হবে বাতাসের গতিতে, তারপরের দল পার হবে ঘোড়ার গতিতে, তারপরের দল স্বাভাবিক আরোহীর গতিতে, তারপরের দল পায়ে চলার গতিতে পার হবে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৫২৬)। সকল মানুষকেই জাহান্নামের উপর দিয়ে পার হ’তে হবে। মানুষ তাদের আমল অনুপাতে পার হবে। এ জন্য পার হওয়ার গতি বিভিন্ন ধরনের হবে।

عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا دَخَلَ اَهْلُ الْجَنَّةِ وَاَهْلُ النَّارِ يُجَاءُ بِالْمَوْتِ كَأَنَّهُ كَبْشٌ اَمْلَحٌ فَيُوْقَفُ عَلَى السُّوْرِ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَيُقَالُ يَااَهْلَ الْجَنَّةِ هَلْ تَعْرِفُوْنَ هَذَا فَيَشْرِفُوْنَ وَيَنْظُرُوْنَ وَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ هَذَا الْمَوْتُ وَكُلُّهُمْ قَدْ رَآهُ فَيُؤَمَّرُ بِهِ فَيُضْجَعُ فَيُذْبَحُ فَيُقَالُ يَااَهْلَ الْجَنَّةِ خُلُوْدٌ بِلَا مَوْتٍ وَيَااَهْلَ النَّارِ خُلُوْدٌ بِلَا مَوْتٍ ثُمَّ قَرَأَ رَسُوْلُ اللهِ وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ وَاَشَارَ بِيَدِهِ وَقَالَ اَهْلُ الدُّنْيَا فِىْ غَفْلَةٍ.

আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যখন জাহান্নামীরা জাহান্নামে চলে যাবে এবং জান্নাতীরা জান্নাতে চলে যাবে, তখন মরণকে সাদাকালো মিশ্রিত রং এর একটি ভেড়ার আকৃতিতে নিয়ে আসা হবে তাকে জাহান্নাম ও জান্নাতের মাঝে এক প্রাচীরের উপর দাঁড় করা হবে। বলা হবে হে জান্নাতের অধিবাসী তোমরা কি একে চিনতে পারছ? তারা মাথা উঁচু করে দেখবে এবং বলবে হ্যাঁ আমরা চিনতে পারছি এ হচ্ছে মরণ। তারা সকলেই তাকে দেখবে। অতঃপর বলা হবে, হে জাহান্নামের অধিবাসী! তোমরা কি একে চিনতে পারছ? তারা মাথা উঁচু করে দেখে বলবে হ্যাঁ আমরা চিনতে পারছি এ হচ্ছে মরণ। তারা সকলেই তাকে দেখবে। তারপর তাকে শুয়ে দিয়ে যবেহ করার আদেশ করা হবে। বলা হবে হে জান্নাতী তোমরা চিরদিন জান্নাতে থাক আর কোন দিন তোমাদের মরণ হবে না। হে জাহান্নামী তোমরা চিরদিন জাহান্নামে থাক তোমাদের আর কোনদিন মরণ হবে না। তারপর রাসূল(সা.) অত্র আয়াতটি পড়লেন, وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ তারপর হাতের ইশারা করে বললেন, দুনিয়াবাসীরা চায় অসাবধান থাকতে (তিরমিযী হা/৩১৫৬)

عَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا صَارَ اَهْلُ الْجَنَّةِ اِلَى الْجَنَّةِ وَاَهْلُ النَّارِ اِلَى النَّارِ جِئَ بِالْمَوْتِ حَتَّى يَجْعَلَ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ ثُمَّ يُذْبَحُ ثُمَّ يُنَادِىْ مُنَادِيًا اَهْلَ الْجَنَّةِ لَامَوْتَ وَيَااَهْلَ النَّارِ لَا مَوْتَ فَيَزْدَادُ اَهْلُ الْجَنَّةِ فَرْحًا اِلَى فَرْحِهِمْ وَيَزْدَادُ اَهْلَ النَّارِ حُزْنًا اِلَى حُزْنِهِمْ.

ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, যখন জান্নাতবাসীগন জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তখন মরণকে জাহান্নাম ও জান্নাতের মধ্যে উপস্থিত করে তাকে জবেহ করা হবে। অতঃপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসীগণ! এখানে তোমাদের আর কোন মরণ নেই। হে জাহান্নামবাসীরা! এখানে আর মরণ নেই। এতে জান্নাতীদের আনন্দের পর আনান্দ আরও বেড়ে যাবে, আর জাহান্নামীদের দুশ্চিন্তা আরও বেশি হয়ে যাবে (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৫২)