উপদেশ ২৬. কবরের শাস্তি আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتُعَادُ رُوْحُهُ فِيْ جَسَدِهِ وَيَأْتِيْهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَاهَذَا الرَّجُلُ الَّذِيْ بُعِثَ فِيْكُمْ فَيَقُوْلُ هُوَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُوْلَانِ لَهُ وَمَا يُدْرِيْكَ فَيَقُوْلُ قَرَأْتُ كِتَابَ اللهِ فَأَمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ فَيُنَادِيْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ اَنْ صَدَقَ عَبْدِيْ فَافْرِشُوْهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَالْبِسُوْهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوْا لَهُ بَابًا اِلَي الْجَنَّةِ قَالَ فَيَأْتِيْهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيْبِهَا وَيُفْسَحُ لَهُ فِيْهَا مَدَّبَصَرِهِ قَالَ وَيَأْتِيْهِ رَجُلٌ اَحْسَنُ الْوَجْهِ حَسَنُ الثِّيَابِ طِيْبُ الرِّيْحِ فَيَقُوْلُ أَبْشِرْ بِالَّذِيْ يَسُرُّكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِيْ كُنْتَ تُوْعَدُ فَيَقُوْلُ لَهُ مَنْ اَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِئُ بِالْخَيْرِ فَيَقُوْلُ اَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ.

বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, লাশ কবরে রাখা হলে তার আত্মা তার শরীরে ফিরে দেয়া হয়। অতঃপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। তারপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের মধ্যে যিনি প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি কে? সে বলে তিনি আল্লাহর রাসূল (সা.) । পুনরায় তারা তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি তা কি করে জানতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, অতঃপর তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আসমান হ’তে একজন আহবান করে বলেন, আমার বান্দা ঠিক বলেছে। সুতরাং তার জন্য একটি জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। এছাড়া তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। নবী করীম (সা.) বলেন, তখন তার নিকট জান্নাতের সুখ-শান্তি আসতে থাকে এবং তার জন্য তার কবরকে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয়। নবী করীম (সা.) বলেন, অতঃপর তার নিকট এক সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট সুবেশী ও সুগন্ধিযুক্ত ব্যক্তি আসেন এবং তাকে বলেন, তোমাকে খুশি করবে এমন জিনিসের সুসংবাদ গ্রহণ কর। আর এ দিনের ওয়াদাই তোমাকে দেওয়া হয়েছিল। তখন সে মৃতব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কে? তোমার চেহারা এত সুন্দর যে, কল্যাণের বার্তা বহণ করে। তখন সে বলে অমি তোমার সৎ আমল (আহমাদ, মিশকাত হা/১৫৪২, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ভাল ব্যক্তির জন্য কবরও জান্নাত। কারণ সে কবর থেকে জান্নাতের সব ধরনের সুখ ভোগ করতে পায়। তার জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে তার নিজের সৎ আমলগুলি এক সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট সুবেশী সুগন্ধিযুক্ত ব্যক্তির আকার ধারণ করে এসে বলবে, তোমার জন্য সুসংবাদ, আমি তোমার সৎ আমল, আমি কল্যাণের বার্তা বহনকারী।

عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتُعَادُ رُوْحُهُ فِيْ جَسَدِهِ وَيَأْتِيْهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُوْلُ هَاهْ هَاهْ لَاَدْرِيْ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَادِيْنُكَ فَيَقُوْلُ هَاهْ هَاهْ لَاَدْرِيْ فَيُنَادِيْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ اَنْ كَذَبَ فَافْرِشُوْهُ مِنَ النَّارِ وَالْبِسُوْهُ مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوْا لَهُ بَابًا الي النَّارِ قَالَ فَيَأْتِيْهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُوْمِهَا قَالَ وَيُضَيَّقُ عَلَيْهَ قَبْرُهُ حَتَّي يَخْتَلِفَ فِيْهِ اَضْلَاعُهُ وَيَأْتِيْهِ رَجُلٌ قَبِيْحُ الْوَجْهِ قَبِيْحُ الثِّيَابِ مَنْتَنُ الرِّيْحِ فَيَقُوْلَ أَبْشِرْ بِالَّذِيْ يَسُؤْكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِيْ كُنْتَ تُوْعَدُ فَيَقُوْلُ لَهُ مَنْ اَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِئُ بِالشَّرِّ فَيَقُوْلُ اَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيْثُ.

বারা ইবনে আযেব (রঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, লাশ কবরে রাখা হলে আত্মা তার দেহে ফেরত দেয়া হয়। তখন তার নিকট দু’জন ফেরেশ্তা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করেন তোমার প্রতিপালক কে? তখন সে উত্তরে বলে, হায়! হায়! আমি জানি না। তারপর জিজ্ঞেস করেন তোমার দ্বীন কি? তখন সে উত্তরে বলে হায়! হায়! আমি জানি না। তারপর জিজ্ঞেস করেন তোমাদের মধ্যে যিনি প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি কে? তখন সে উত্তরে বলে, হায়! হায়! আমি জানি না। এসময় আকাশের দিক হ’তে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন, সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। সুতরাং তার দিকে জাহান্নামের লু হাওয়া আসতে থাকে। আর তার কবর এত সংকীর্ণ হয়ে যায় যে, তার এক দিকের পাজর অপর দিকে ঢুকে যায়। এ সময় তার নিকট অতি কুৎসিত চেহারা বিশিষ্ট নোংরা বেশী দুরগন্ধযুক্ত লোক এসে বলে, তোমাকে দুঃখিত করবে এমন জিনিসের দুঃসংবাদ গ্রহণ কর। এদিন সম্পর্কে তোমাকে পৃথিবীতে ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল। তখন সে জিজ্ঞেস করে তুমি কে, কি কুৎসিত তোমার চেহারা, যা মন্দ সংবাদ বহন করে? সে বলবে, আমি তোমার বদ আমল (আহমাদ মিশকাত হা/১৫৪২, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে পাপাচার ব্যক্তি কবরেই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। আর সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে তার আমলগুলি এক কুৎসিত চেহারা বিশিষ্ট নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত লোকের আকৃতি ধারণ করে এসে বলবে, আমি তোমার বদ আমল তোমার জন্য দুঃসংবাদ বহন করে এনেছি।

عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قاَلَ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى جَنَازَةِ رَجُلٍ مِّنَ الْانَصارِ فَانْتَهَيْنَا اِلي الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدُ فَجَلَسَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ كَأنَّ عَلي رُؤُسِنَا الطَّيْرَ وَفِيْ يَدِهِ عُوْدٌ يَنْكُتُ ِبهِ الْاَرْضَ فَرَفَعَ رَاْسَهُ فَقَالَ اِسْتَعِيْذُوْا بِاللهِ مِنْ عَذابِ القبْرِ مَرّتَيْنِ اَوْثَلَثًا.

বারা ইবনে আযিব (রা.) বলেন, আমরা একবার নবী করীম(সা.) -এর সাথে আনছারদের এক লোকের জানাযায় গেছিলাম। আমরা কবরের নিকট গেলাম, কিন্তু তখনও কবর খোড়া হয়নি, তখন নবী করীম(সা.) বসলেন, আমরাও তার আশেপাশে বসলাম। আমরা এমন চুপচাপ বসে ছিলাম, যেন আমাদের মাথায় পাখি বসে আছে। তখন নবী করীম(সা.) -এর হাতে একটি কাঠের টুকরা ছিল, যা দ্বারা তিনি চিন্তিত ব্যক্তির ন্যায় মাটিতে দাগ কাটতেছিলেন। অতঃপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন আল্লাহর নিকট কবর আযাব হ’তে পরিত্রাণ চাও। তিনি কথাটি দুই-তিন বার বললেন (আহমাদ, মিশকাত হা/১৬৩০; বঙ্গানুবা মিশকাত হা/১৫৪২, হাদীছ ছহীহ)। কবরের শাস্তি গভীরভাবে ভাববার বিষয়। কবরের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ চাওয়ার জন্য নবী করীম(সা.) আদেশ করেছেন। কথাটি তিনি বারবার বলে মানুষকে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়েছেন।

عَنْ عُثْمَانَ اَنَّهُ كَانَ اِذَا وَقَفَ عَلي قَبْرٍبَكي حَتّي يَبُلَّ لِحْيَتَهُ فَقِيْلَ لَهُ تَذْكُرُ الْجَنّةَ وَالنَّارَ فَلَاتَبْكِيْ وَتَبْكِىْ مِنْ هذا فَقَالَ اِنّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال اِنّ الْقَبْرَ اَوَّلُ مَنْزِلٍ مِنَ مَنَازِلِ الْاَخِرَةِ فَاِنْ نَجَي مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ اَيْسَرَمِنْهُ وَاِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ اشَدُّمِنْهُ قَالَ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مَا رَاَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ اِلَّا وَالْقَبرَ اَفْظَعُ مَنْهُ.

ওছমান (রা.) হ’তে বর্ণিত তিনি যখন কোন কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন এমন কাঁদতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি জাহান্নামের এবং জান্নাতের কথা স্বরণ করেন, অথচ কাঁদেন না, আর কবর দেখলেই কাঁদেন, ব্যাপার কি? তিনি বললেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, পরকালের বিপদজনক স্থান সমূহের মধ্যে কবর হচ্ছে প্রথম। যদি কেউ সেখানে মুক্তি পেয়ে যায়, তা‘হলে তার পরের সব স্থানগুলি সহজ হয়ে যাবে। আর যদি কবরে মুক্তি লাভ করতে না পারে ত‘াহলে পরের সব স্থানগুলি আরও কঠিন ও জটিল হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি বললেন, নবী করীম (সা.) এটাও বলেছেন যে, আমি এমন কোন জঘন্য ও ভয়াবহ স্থান দেখিনি যা কবরের চেয়ে জঘন্য ও ভয়াবহ হ‘‘ত পারে। (তিরমিযি বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৫, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ হ’তে বুঝা গেল যে, পরকালের ভয়াবহ স্থানসমূহের প্রথম স্থান হচ্ছে কবর। কবরের বিপদ হ’তে রক্ষা পেলে, বাকি সব স্থানে রক্ষা পাওয়া যাবে। কবরের ভয়-ভীতি মনে করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা এবং কবরের শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চাওয়া উচিত।