চারটি আমলে ধারাবাহিকতা রক্ষার বিধান

নবীজীর বিদায় হজের আমল অনুসারে ১০ যিলহজের ধারাবাহিক আমল হল, প্রথমে কঙ্কর নিক্ষেপ করা, অতপর হাদীর পশু যবেহ করা, এরপর মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছোট করা। এরপর তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করা ও সা‘ঈ করা। সুতরাং ইচ্ছাকৃতভাবে এ দিনের এই চারটি আমলের ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করা তথা আগে-পিছে করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের পরিপন্থি কাজ। তবে যদি কেউ উযর বা অপারগতার কারণে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পারে, অথবা ভুলবশত আগে-পরে করে বসে, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ করার সময় সাহাবায়ে কিরামের কেউ কেউ এরূপ আগে-পিছে করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, কোনো সমস্যা নেই। ইবন আব্বাস রা. বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُسْأَلُ يَوْمَ مِنًى فَيَقُولُ : لاَ حَرَجَ ، لاَ حَرَجَ فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ : حَلَقْتُ قَبْلَ أَنْ أَذْبَحَ ، قَالَ : لاَ حَرَجَ قَالَ : رَمَيْتُ بَعْدَ مَا أَمْسَيْتُ قَالَ : لاَ حَرَجَ».

‘মিনায় (কুরবানীর দিন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন, ‘সমস্যা নেই, সমস্যা নেই’। এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমি যবেহ করার পূর্বে মাথা মুণ্ডন করে ফেলেছি।’ তিনি বললেন, ‘কোনো সমস্যা নেই।’ এক লোক বলল, ‘আমি সন্ধ্যার পর কঙ্কর মেরেছি।’ তিনি বললেন, ‘সমস্যা নেই’।[1]

‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ১০ যিলহজ রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে এল। তিনি তখন জামরার কাছে দাঁড়ানো ছিলেন। লোকটি বলল,

«يَا رَسُولَ اللهِ إِنّىْ حَلَقْتُ قَبْلَ أَنْ أَرْمِىَ. فَقَالَ: ارْمِ وَلاَ حَرَجَ ، وَأَتَاهُ آخَرُ فَقَالَ إِنِّى ذَبَحْتُ قَبْلَ أَنْ أَرْمِىَ. قَالَ : ارْمِ وَلاَ حَرَجَ ، وَأَتَاهُ آخَرُ فَقَالَ إِنِّى أَفَضْتُ إِلَى الْبَيْتِ قَبْلَ أَنْ أَرْمِىَ. قَالَ : ارْمِ وَلاَ حَرَجَ ، قَالَ فَمَا رَأَيْتُهُ سُئِلَ يَوْمَئِذٍ عَنْ شَىْءٍ إِلاَّ قَالَ : افْعَلُوا وَلاَ حَرَجَ».

‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে মাথা মুণ্ডন করে ফেলেছি। তিনি বললেন, নিক্ষেপ করো সমস্যা নেই। অন্য এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে যবেহ করেছি। তিনি বললেন, নিক্ষেপ কর সমস্যা নেই। আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে তাওয়াফে ইফাযা করেছি। তিনি বললেন, নিক্ষেপ কর, সমস্যা নেই। বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে প্রশ্নই করা হয়েছে তার উত্তরেই তিনি বলেছেন, কর, সমস্যা নেই।’[2]

এ বিষয়ে আরো অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। উযর কিংবা অপরাগতার কারণে সেসবের আলোকে আমল করলে ইনশাআল্লাহ হজের কোনো ক্ষতি হবে না। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে হাজীদের প্রচণ্ড ভিড় আর হাদী যবেহ প্রক্রিয়াও অনেক জটিল। তাই বিষয়টিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সহজভাবে দেখেছেন আমাদেরও সেভাবে দেখা উচিত। বিশেষ করে ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর প্রখ্যাত দুই ছাত্র ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. ১০ যিলহজের কাজসমূহে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারলেও দম ওয়াজিব হবে না বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।

ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ কিতাব বাদায়েউস্ সানায়েতে লিখা হয়েছে,

فَإِنْ حَلَقَ قَبْلَ الذَّبْحِ مِنْ غَيْرِ إحْصَارٍ فَعَلَيْهِ لِحَلْقِهِ قَبْلَ الذَّبْحِ دَمٌ فِي قَوْلِ أَبِي حَنِيفَةَ ، وَقَالَ أَبُو يُوسُفَ ، وَمُحَمَّدٌ ، وَجَمَاعَةٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ : أَنَّهُ لَا شَيْءَ عَلَيْهِ ،

‘যদি যবেহ করার পূর্বে মাথা মুণ্ডন করে তবে এর জন্য দম দিতে হবে আবূ হানীফা রহ.-এর মতানুযায়ী। আর ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহম্মদ ও একদল শরীয়ত বিশেষজ্ঞের মতানুযায়ী, এর জন্য তার ওপর কিছুই ওয়াজিব নয়।’[3]

[1]. ইবন মাজাহ্‌ : ৩০৫০।

[2]. মুসলিম : ২৩০৫।

[3]. বাদায়েউস্সানায়ে‘ : ২/১৫৮।