সাফা ও মারওয়ায় সাঈর ফযীলত

ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَأَمَّا طَوَافُكَ بِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ كَعِتْقِ سَبْعِيْنَ رَقَبَةً»

‘যখন সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করবে, তা সত্তরজন গোলাম আযাদ করার নেকী বয়ে আনবে।’[1]

সঠিকভাবে সাঈর কাজ সম্পন্ন করবেন নিচের নিয়মে

১. সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে বলবেন,

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ، أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهِ.

(ইন্নাস্সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ। আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহী।)

‘নিশ্চয়ই সাফা মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন। আমি শুরু করছি আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন।’[2]

২. এরপর সাফা পাহাড়ে উঠে বাইতুল্লাহর দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন[3] এবং আল্লাহর একত্ববাদ, বড়ত্ব ও প্রশংসার ঘোষণা দিয়ে বলবেন,

اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ يحيى ويميت وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ.

(আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল্ মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ্।)

‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান![4] আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন। আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন; তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু-দলগুলোকে পরাজিত করেছেন।’[5]

৩. দো‘আ করার সময় উভয় হাত তুলে দো‘আ করবেন।[6]

৪. উল্লেখিত দো‘আটি এবং দুনিয়া-আখিরাতের জন্য কল্যাণকর যেকোনো দো‘আ সামর্থ্য অনুযায়ী তিন বার পড়বেন। নিয়ম হলো : উপরের দো‘আটি একবার পড়ে তার সাথে সামর্থ্য অনুযায়ী অন্য দো‘আ পড়বেন। তারপর আবার ঐ দো‘আটি পড়ে তার সাথে অন্য দো‘আ পড়বেন। এভাবে তিন বার করবেন।’ কারণ, হাদীসে স্পষ্ট উল্লিখিত হয়েছে, ‘তারপর তিনি এর মাঝে দো‘আ করেছেন। অনুরূপ তিনবার করেছেন।[7] সাহাবায়ে কিরাম রা. থেকে সাফা-মারওয়ায় পাঠ করার বিবিধ দো‘আ বর্ণিত হয়েছে।[8]

৫. সাফা পাহাড়ে দো‘আ শেষ হলে মারওয়ার দিকে যাবেন। যেসব দো‘আ আপনার মনে আসে এবং আপনার কাছে সহজ মনে হয় তা-ই পড়বেন। সাফা থেকে নেমে কিছু দূর এগোলেই ওপরে ও ডানে-বামে সবুজ বাতি জ্বালানো দেখবেন। একে বাতনে ওয়াদী (উপত্যকার কোল) বলা হয়। এই জায়গাটুকুতে পুরুষ হাজীগণ দৌড়ানোর মত করে দ্রুত গতিতে হেঁটে যাবেন। পরবর্তী সবুজ বাতির আলামত সামনে পড়লে চলার গতি স্বাভাবিক করবেন। তবে মহিলারা এই জায়গাটুকুতেও চলার গতি স্বাভাবিক রাখবেন। সবুজ দুই আলামতের মাঝে চলার সময় নিচের দো‘আটি পড়বেন,

«رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ، إِنَّكَ أَنْت َالأَعَزُّ الأَكْرَمُ».

(রাবিবগ্ফির্ ওয়ার্হাম্, ইন্নাকা আন্তাল আ‘য়ায্যুল আকরাম্।)

‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন এবং রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি অধিক শক্তিশালী ও সম্মানিত।’[9]

৬. এখান থেকে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে উঠবেন। মারওয়া পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে, সাফায় পৌঁছার পূর্বে যে আয়াতটি পড়েছিলেন, তা পড়তে হবে না।

৭. মারওয়ায় উঠার পরে কা‘বাঘরের দিকে মুখ করে দুই হাত তুলে আল্লাহর একত্ববাদ, বড়ত্ব ও প্রশংসার ঘোষণাসহ সাফার মত এখানেও দো‘আ করবেন।[10]

৮. মারওয়া থেকে নেমে সাফায় আসার পথে সবুজ বাতির কাছে পৌঁছলে সেখান থেকে আবার দ্রুত গতিতে চলবেন। পরবর্তী সবুজ বাতির কাছে পৌঁছলে চলার গতি স্বাভাবিক করবেন।

৯. সাফা পাহাড়ে এসে কা‘বাঘরের দিকে মুখ করে উভয় হাত তুলে আগের মত যিকর ও দো‘আ করবেন। সাফা মারওয়া উভয়টি দো‘আ কবুলের জায়গা। তাই উভয় জায়গাতে বিশেষভাবে দো‘আ করার চেষ্টা করবেন।

১০. একই নিয়মে সাঈর বাকি চক্করগুলোও আদায় করবেন।

[1]. সহীহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব : ১১১২।

[2]. মুসলিম : ১/৮৮৮।

[3]. মুসলিম : ১২১৮।

[4]. নাসাঈ : ২/ ৬২৪; মুসনাদে আহমদ : ৩/৩৮৮।

[5]. নাসাঈ ২/২২৪; মুসলিম : ২/২২২।

[6]. আবু দাউদ : ১/৩৫১।

[7]. মুসলিম : ২১৩৭।

[8]. উদাহরণ স্বরূপ দ্র. বাইহাকী : ৫/৪৯-৫০।

[9]. ইবন আবী শাইবা : ৪/৬৮; বাইহাকী : ৫/৯৫; তাবারানী, আদ্ দু‘আ : ৮৭০; আলবানী, হিজ্জাতুন নবী পৃ. ১২০।

[10]. নাসাঈ : ৪৭৯২।