হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
১৭৩. কাফিরদের সাথে যে কোনভাবে মিল ও সাদৃশ্য বজায় রাখা

কাফিরদের সাথে যে কোনভাবে মিল ও সাদৃশ্য বজায় রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ، وَلَا يَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ أُوْتُوْا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوْبُهُمْ، وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُوْنَ».

‘‘মু’মিনদের কি এখনো আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও অবতীর্ণ অহীর সত্য বাণী শুনে অন্তর বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি ?! উপরন্তু তারা যেন পূর্বেকার আহলে কিতাবদের মতো না হয় বহুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর যাদের অন্ত:করণ কঠিন হয়ে পড়েছিলো। মূলতঃ তাদের অধিকাংশই তো ফাসিক’’। (’হাদীদ : ১৬)

উক্ত আয়াতে যদিও তাদের ন্যায় অন্তরকে কঠিন বানাতে নিষেধ করা হয়েছে যা একমাত্র গুনাহ্’রই কুফল তবুও যে কোনভাবে তাদের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখাও শরীয়তে নিষিদ্ধ। যা বিপুল সংখ্যক হাদীস ভান্ডার কর্তৃক প্রমাণিত। যার কিয়দংশ বিষয় ভিত্তিক নিম্নে প্রদত্ত হলো:

নামায সংক্রান্ত:

শাদ্দাদ্ বিন্ আউস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

خَالِفُوْا الْيَهُوْدَ فَإِنَّهُمْ لَا يُصَلُّوْنَ فِيْ نِعَالِهِمْ وَلَا خِفَافِهِمْ.

‘‘ইহুদিদের বিপরীত করো। (অতএব জুতো পরে নামায পড়ো।) কারণ, ইহুদিরা জুতো ও মোজা পরে নামায পড়ে না’’। (আবূ দাউদ ৬৫২)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِذَا كَانَ لِأَحَدِكُمْ ثَوْبَانِ فَلْيُصَلِّ فِيْهِمَا، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ إِلاَّ ثَوْبٌ وَاحِدٌ فَلْيَتَّـزِرْ بِهِ، وَلَا يَشْتَمِلْ اشْتِمَالَ الْيَهُوْدِ.

‘‘কারোর দু’টি কাপড় থাকলে সে যেন উভয়টি পরেই নামায পড়ে। আর যদি কারোর একটি মাত্র কাপড় থাকে তা হলে সে যেন কাপড়টিকে নিম্ন বসন হিসেবেই পরিধান করে। ইহুদিদের মতো সে যেন কাপড়টিকে পুরো শরীর পেঁচিয়ে না পওে’’। (আবূ দাউদ ৬৩৫)

রোযা সংক্রান্ত:

বশীর খাস্বাস্বিয়াহ্ (রাঃ) এর স্ত্রী লাইলা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি দু’ দিন লাগাতার রোযা রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী বশীর তা আমাকে করতে দেয়নি। বরং তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন:

إِنَّمَا يَفْعَلُ ذَلِكَ النَّصَارَى، صُوْمُوْا كَمَا أَمَرَكُمُ اللهُ، وَأَتِمُّوْا الصَّوْمَ كَمَا أَمَرَكُمُ اللهُ، «وَأَتِمُّوْا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ» فَإِذَا كَانَ اللَّيْلُ فَأَفْطِرُوْا.

‘‘এমন কাজ তো খ্রিস্টানরাই করে। তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবিক রোযা রাখবে এবং তাঁর নির্দেশ মোতাবিকই তা সম্পূর্ণ করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: তোমরা রাত পর্যন্ত রোযা সম্পূর্ণ করো। সুতরাং রাত আসলেই তোমরা ইফতার করে ফেলবে’’। (আহমাদ ৫/২২৫)

হজ্জ সংক্রান্ত:

‘আমর বিন্ মাইমূন (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা ’উমর (রাঃ) মুয্দালিফায় ফজরের নামায শেষে দাঁড়িয়ে বললেন:

إِنَّ الـْمُشْرِكِيْنَ كَانُوْا لَا يُفِيْضُوْنَ مِنْ جَمْعٍ حَتَّى تُشْرِقَ الشَّمْسُ عَلَى ثَبِيْرَ، وَيَقُوْلُوْنَ: أَشْرِقْ ثَبِيْرُ )كَيْمَا نُغِيْرُ(، فَخَالَفَهُمُ النَّبِيُّ  فَأَفَاضَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ.

‘‘মুশ্রিকরা মুয্দালিফাহ্ থেকে রওয়ানা করতো না যতক্ষণ না সাবীর পাহাড়ের উপর সূর্য উদিত হতো। তারা বলতো: হে সাবীর পাহাড়! তুমি সকালে উপনীত হও যাতে আমরা রওয়ানা করতে পারি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরোধিতা করেই সূর্যোদয়ের পূর্বে রওয়ানা করেন’’।

(বুখারী ১৬৮৪, ৩৮৩৮)

কবর সংক্রান্ত:

জারীর বিন্ আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اللَّحْدُ لَنَا وَالشَّقُّ لِأَهْلِ الْكِتَابِ.

‘‘লাহ্দ্ তথা এক সাইড ঢালু করা কবর আমাদের জন্য আর মধ্যভাগ গর্ত করা কবর আহ্লে কিতাবদের জন্য’’। (আহমাদ ৪/৩৬৩(

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اللَّحْدُ لَنَا وَالشَّقُّ لِغَيْرِنَا.

‘‘লাহ্দ্ তথা এক সাইড ঢালু করা কবর আমাদের জন্য আর মধ্যভাগ গর্ত করা কবর অন্যদের জন্য’’।

(আবূ দাউদ ৩২০৮; তিরমিযী ১০৪৫)

জুন্দাব্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ، أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوْا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ، إِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ.

‘‘তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা নিজ নবী ও ওলী-বুযুর্গদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিতো। সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদ বানিও না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করছি’’। (মুসলিম ৫৩২)

পোশাক ও সাজ-সজ্জা সংক্রান্ত:

’হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَشْرَبُوْا فِيْ إِنَاءِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَا تَلْبَسُوْا الدِّيْبَاجَ وَالْحَرِيْرَ، فَإِنَّهُ لَهُمْ فِيْ الدُّنْيَا وَهُوَ لَكُمْ فِيْ الْآخِرَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘তোমরা সোনা ও রুপার পেয়ালায় কোন কিছু পান করো না এবং মোটা ও পাতলা সিল্কের কাপড় পরিধান করো না। কারণ, তা তো দুনিয়াতে কাফিরদের জন্য এবং তোমাদের জন্য আখিরাতে কিয়ামতের দিনে’’। (মুসলিম ২০৬৭)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

رَأَى رَسُوْلُ اللهِ  عَلَيَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ: إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ، فَلَا تَلْبَسْهَا، قُلْتُ: أَغْسِلُهُمَا ؟ قَالَ: بَلْ أَحْرِقْهُمَا.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গায়ে দু’টি ’উস্বফুর নামী উদ্ভিদ থেকে সংগৃহীত লাল-হলুদ রঙে রঙানো কাপড় দেখে বললেন: এগুলো কাফিরদের পোশাক। সুতরাং তুমি তা পরো না। আমি বললাম: আমি কি কাপড় দু’টি ধুয়ে ফেলবো? তিনি বললেন: না, বরং কাপড় দু’টি পুড়ে ফেলবে’’। (মুসলিম ২০৭৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى لَا يَصْبُغُوْنَ ؛ فَخَالِفُوْهُمْ.

‘‘ইহুদী ও খ্রিস্টানরা (মাথার চুল বা দাঁড়ি) কালার করে না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করবে তথা কালার করবে’’। (আবূ দাউদ ৪২০৩)

অভ্যাস ও আচরণ সংক্রান্ত:

‘আমর বিন্ শু‘আইব তাঁর পিতা থেকে তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوْا بِالْيَهُوْدِ وَلَا بِالنَّصَارَى ؛ فَإِنَّ تَسْلِيْمَ الْيَهُوْدِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ، وَتَسْلِيْمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفِّ.

‘‘সে আমার উম্মত নয় যে অমুসলিমদের সাথে কোনভাবে সাদৃশ্য বজায় রাখলো। তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে কোনভাবে সাদৃশ্য বজায় রাখো না। কারণ, ইহুদিরা সালাম দেয় আঙ্গুলের ইশারায়। আর খ্রিস্টানরা সালাম দেয় হাতের ইশারায়’’। (তিরমিযী ২৬৯৫)

এ ছাড়াও যে কোনভাবে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখা শরীয়তে নিষিদ্ধ।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.

‘‘যে ব্যক্তি কোন জাতির সাথে যে কোনভাবে সাদৃশ্য বজায় রাখলো সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত’’। (আবূ দাউদ ৪০৩১)