হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
১১৩. শরয়ী কোন কারণ ছাড়া কোন মুসলিমের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করা

শরয়ী কোন কারণ ছাড়া কোন মুসলিমের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِـمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثٍ، فَمَنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلَاثٍ فَمَاتَ دَخَلَ النَّارَ.

‘‘কোন মুসলিমের জন্য জায়িয নয় যে, সে তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কেউ তা করলে সে মৃত্যুর পর জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’।

(আবূ দাউদ ৪৯১৪ স’হীহুল জা’মি’, হাদীস ৭৬৩৫)

এক বছর কারোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা তো তাকে হত্যা করার ন্যায়।

আবূ খিরাশ্ সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ هَجَرَ أَخَاهُ سَنَةً ؛ فَهُوَ كَسَفْكِ دَمِهِ.

‘‘কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে এক বছর সম্পর্ক ছিন্ন করা মানে তাকে হত্যা করা’’। (আবূ দাউদ ৪৯১৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্ক ছিন্নতার একটি ধরনও উল্লেখ করেছেন। যা থেকে দোষী ব্যক্তির বাস্তব চিত্র সবার সামনে একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে যায় এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পরিচয়ও মিলে।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَكُوْنُ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَّهْجُرَ مُسْلِمًا فَوْقَ ثَلَاثَةٍ، فَإِذَا لَقِيَهُ سَلَّمَ عَلَيْهِ ثَلَاثَ مِرَارٍ ؛ كُلُّ ذَلِكَ لَا يَرُدُّ عَلَيْهِ ؛ فَقَدْ بَاءَ بِإِثْمِهِ.

‘‘কোন মুসলিমের জন্য জায়িয নয় যে, সে তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করবে। তা এমন যে, তার সাথে ওর সাক্ষাৎ হলে সে তাকে তিন বার সালাম দেয়; অথচ সে তার সালামগুলোর একটি বারও উত্তর দিলো না। এতে তারই গুনাহ্ হবে; ওর নয়’’। (আবূ দাউদ ৪৯১৩)

আবূ আইয়ূব আন্সারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَّهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، يَلْتَقِيَانِ ؛ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا، وَخَيْرُهُمَا الَّذِيْ يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ.

‘‘কোন মুসলিমের জন্য জায়িয নয় যে, সে তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করবে। তা এমন যে, তাদের পরস্পরের সাক্ষাৎ হলো; অথচ তারা একে অপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তবে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম সালাম বিনিময় কওে’’। (আবূ দাউদ ৪৯১১)

কারোর সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে মন কষাকষি হলে তথা পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষভাব জন্ম নিলে আল্লাহ্ তা‘আলার সাধারণ ক্ষমা থেকে তারা বঞ্চিত থাকবে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ كُلَّ يَوْمِ اثْنَيْنِ وَخَمِيْسٍ، فَيُغْفَرُ فِيْ ذَلِكَ الْيَوْمَيْنِ لِكُلِّ عَبْدٍ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا، إِلاَّ مَنْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيْهِ شَحْنَاءُ، فَيُقَالُ : أَنْظِرُوْا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا.

‘‘প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরোজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং উক্ত উভয় দিনেই সকল শির্কমুক্ত বান্দাহ্কে ক্ষমা করে দেয়া হয়। তবে এমন দু’জন ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় না যাদের পরস্পরে শত্রুতা রয়েছে। তাদের সম্পর্কে বলা হয়: এদেরকে আরো কিছু সময় দাও যাতে তারা সমঝোতায় আসতে পাওে’’। (আবূ দাউদ ৪৯১৬)

তবে সম্পর্ক ছিন্ন করা যদি শরয়ী কোন কারণে হয়ে থাকে তা হলে তা অবশ্যই জায়িয। যেমন: কেউ নামায পড়ে না অথবা কেউ প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করে। সুতরাং আপনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। তবে এ কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, যদি কারোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে তার মধ্যে পাপবোধ জন্ম নেয় অথবা তার সঠিক পথে ফিরে আসার বিশেষ সম্ভাবনা থাকে তা হলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা অবশ্যই দরকার। কারণ, তা অসৎ কাজে বাধা দেয়ার শামিল। তবে যদি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে আরো গাদ্দার অথবা আরো হঠকারী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা হলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করাই উচিৎ। বরং তাকে মাঝে মাঝে নসীহত করবে এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা স্ত্রীর সাথে চল্লিশ দিন কথা বলেননি। আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) তাঁর ছেলের সাথে মৃত্যু পর্যন্ত কথা বলেননি। ’উমর বিন্ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ্) জনৈক ব্যক্তিকে দেখে নিজ চেহারা ঢেকে ফেলেন।