হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
৯৬. বিদ্‘আতী কিংবা প্রবৃত্তিপূজারীদের সাথে উঠা-বসা

বিদ্‘আতী কিংবা প্রবৃত্তিপূজারীদের সাথে উঠ-বসা করা হারাম। কারণ, তারা ইসলামের ব্যাপারে একজন খাঁটি মুসলিমের সামনে হরেক রকমের সংশয়-সন্দেহ উপস্থাপন করে তাঁর মূল পুঁজি তথা বিশুদ্ধ আক্বীদা-বিশ্বাসকেই নষ্ট করে দেয়।

আবূ সা’ঈদ্ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا، وَلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِيٌّ.

‘‘খাঁটি মু’মিনই যেন তোমার একমাত্র সঙ্গী হয় এবং একমাত্র পরহেযগার ব্যক্তিই যেন তোমার খাবার খায়’’। (আবূ দাউদ ৪৮৩২)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَا تُجَالِسْ أَهْلَ الْأَهْوَاءِ ؛ فَإِنَّ مُجَالَسَتَهُمْ مُمْرِضَةٌ لِلْقَلْبِ.

‘‘তোমরা প্রবৃত্তিপূজারীদের পার্শ্বে বসো না। কারণ, তাদের সাথে উঠা-বসা করলে অন্তর রোগাক্রান্ত হয়ে যায়’’। (ইবানাহ্ : ২/৪৪০)

ফুযাইল্ বিন্ ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

صَاحِبُ بِدْعَةٍ لَا تَأْمَنْهُ عَلَى دِيْنِكَ، وَلَا تُشَاوِرْهُ فِيْ أَمْرِكَ، وَلَا تَجْلِسْ إِلَيْهِ، وَمَنْ جَلَسَ إِلَى صَاحِبِ بِدْعَةٍ أَوْرَثَهُ اللهُ الْعَمَى.

‘‘তোমার ধর্মকর্ম একজন বিদ্‘আতীর হাতে কখনোই নিরাপদ নয়। সুতরাং তোমার কোন ব্যাপারে তার সামান্যটুকু পরামর্শও নিবে না। এমনকি তার নিকটেও কখনো বসবে না। কারণ, যে ব্যক্তি কোন বিদ্‘আতীর নিকট বসলো সে অচিরেই তার অন্তর্দৃষ্টি হারিয়ে ফেললো’’। (ইবানাহ্ : ২/৪৪২)

মুসলিম বিন্ ইয়াসা’র (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

لَا تُمَكِّنْ صَاحِبَ بِدْعَةٍ مِنْ سَمْعِكَ فَيَصُبُّ فِيْهِ مَا لَا تَقْدِرُ أَنْ تُخْرِجَهُ مِنْ قَلْبِكَ.

‘‘কোন বিদ্‘আতীকে কখনো তোমার কানের কাছে ঘেঁষতে দিবে না। কারণ, সে তখন তোমার কানে এমন কিছু ঢুকিয়ে দিবে যা আর কখনো তোমার অন্তর থেকে বের করতে পারবে না’’। (ইবানাহ্ : ২/৪৫৯)

মুফায্যাল্ বিন্ মুহাল্হাল্ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

لَوْ كَانَ صَاحِبُ الْبِدْعَةِ إِذَا جَلَسْتَ إِلَيْهِ يُحَدِّثُكَ بِبِدْعَتِهِ حَذِرْتَهُ وَفَرَرْتَ مِنْهُ، وَلَكِنَّهُ يُحَدِّثُكَ بِأَحَادِيْثِ السُّنَّةِ فِيْ بُدُوِّ مَجْلِسِهِ ثُمَّ يُدْخِلُ عَلَيْكَ بِدْعَتَهُ فَلَعَلَّهَا تَلْزَمُ قَلْبَكَ، فَمَتَى تُخْرِجُ مِنْ قَلْبِكَ ؟!.

‘‘যদি কোন বিদ্‘আতীর নিকট বসলেই সে তোমার সাথে বিদ্‘আতের কথা আলোচনা করে তা হলে তুমি তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে এবং তার থেকে দূরে সরে যেতে পারতে। কিন্তু সে তো তা করছে না বরং সে সর্বপ্রথম তোমাকে সুন্নাতের কিছু হাদীস শুনাবে অতঃপর তার বিদ্‘আত তোমার নিকট সাপ্লাই দিবে। তখন তা তোমার অন্তরের সাথে গেঁথে যাবে যা অন্তর থেকে বের করার সুযোগ আর কখনো তোমার হবে না’’। (ইবানাহ্ : ২/৪৪৪)

বর্তমান বিশ্বের অনেকেই অন্যের সাথে তার পারস্পরিক সম্পর্ক রাখার ব্যাপারটিকে সংখ্যাধিক্যের সাথে জুড়ে দেয়। তখন সে নিজ সুবিধার জন্য যাদের সংখ্যা বেশি তাদের সাথেই উঠাবসা করে এবং তাদের সাথেই বন্ধুত্ব পাতায়। কে সত্যের উপর আর কে মিথ্যার উপর তা সে কখনোই ভেবে দেখে না। অথচ ধর্মের খাতিরে তাকে একমাত্র সত্যের সাথীই হতে হবে। মিথ্যার নয়।

ফুযাইল্ বিন্ ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

اتَّبِعْ طُرُقَ الْـهُدَى، وَلَا يَضُرُّكَ قِلَّةُ السَّالِكِيْنَ، وَإِيَّاكَ وَطُـرُقَ الضَّلَالَةِ، وَلَا تَغْتَرْ بِكَثْرَةِ الْـهَالِكِيْنَ.

‘‘একমাত্র হিদায়াতের পথই অনুসরণ করো; এ পথের লোক সংখ্যা কম হলে তাতে তোমার কোন অসুবিধে নেই এবং ভ্রষ্টতার পথ থেকে বহু দূরে অবস্থান করো; সে পথের লোক সংখ্যা বেশি বলে তুমি তাতে ধোঁকা খেয়ো না’’। (আল্ ই’তিস্বাম : ১/১১২)