হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
৭৪. কবীরা গুনাহ্’র কারণে কোন ক্ষমতাসীনকে কাফির সাব্যস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা

কবীরা গুনাহ্’র কারণে কোন ক্ষমতাসীনকে কাফির সাব্যস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা আরকটি কবীরা গুনাহ্।

এ জাতীয় ব্যক্তিকে আরবীতে খারিজী এবং একের অধিককে খাওয়ারিজ বলা হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় খারিজীদেরকে জাহান্নামের কুকুর এবং আকাশের নিচের সর্বনিকৃষ্ট নিহত বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইব্নু আবী আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـخَوَارِجُ كِلَابُ النَّارِ.

‘‘খারিজীরা হচ্ছে জাহান্নামের কুকুর’’। (ইব্নু মাজাহ্ ১৭২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

شَرُّ قَتْلَى قُتِلُوْا تَحْتَ أَدِيْمِ السَّمَاءِ، وَخَيْرُ قَتِيْلٍ مَنْ قَتَلُوْا، كِلَابُ أَهْلِ النَّارِ، قَدْ كَانُوْا هَؤُلَاءِ مُسْلِمِيْنَ فَصَارُوْا كُفَّارًا.

‘‘(খারিজীরাই হচ্ছে) আকাশের নিচের সর্বনিকৃষ্ট নিহত ব্যক্তি এবং তারা যাদেরকে হত্যা করবে তারাই হবে সর্বোৎকৃষ্ট নিহত ব্যক্তি। তারা হচ্ছে জাহান্নামীদের কুকুর। তারা ছিলো একদা মুসলিম অতঃপর হলো কাফির’’। (তিরমিযী ৩০০০; ইব্নু মাজাহ্ ১৭৫)

এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় খারিজীদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে সাওয়াবও ঘোষণা দিয়েছেন।

‘আলী ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَأْتِيْ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ حُدَثَاءُ الْأَسْنَانِ، سُفَهَاءُ الْأَحْلَامِ، يَقُوْلُوْنَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ، يَمْرُقُوْنَ مِنَ الْإِسْلَامِ كَمَا يَمْـرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْآنَ، لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، فَأَيْنَمَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاقْتُلُوْهُمْ، فَإِنَّ قَتْلَهُمْ أَجْرٌ لِمَنْ قَتَلَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘শেষ যুগে এমন এক জাতি আসবে যাদের বয়স হবে কম এবং তারা হবে বোকা। কথা বলবে সর্বশ্রেষ্ঠ কথা। তবে তারা ইসলাম থেকে তেমনিভাবে বের হয়ে যাবে যেমনিভাবে বের হয়ে যায় তীর শিকারের শরীর থেকে। তারা কুর‘আন পড়বে ঠিকই। তবে তাদের কুর‘আন গলা অতিক্রম করবে না তথা কবুল করা হবে না। তোমরা যেখানেই তাদেরকে পাবে হত্যা করবে। কারণ, তাদেরকে হত্যা করলে কিয়ামতের দিন সাওয়াব পাওয়া যাবে’’। (বুখারী ৩৬১১, ৫০৫৭, ৬৯৩০; মুসলিম ১০৬৬; ইব্নু মাজাহ্ ১৬৭)

ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোন অসদাচরণ দেখলে তা ধৈর্যের সাথে মেনে নিবে। এ জন্য তার আনুগত্য প্রত্যাখ্যান এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَرِهَ مِنْ أَمِيْرهِ شَيْئًا فَلْيَصْبِرْ، فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً.

‘‘যে ব্যক্তি নিজ ক্ষমতাসীনের পক্ষ থেকে কোন অসদাচরণ দেখে সে যেন তা ধৈর্যের সাথে মেনে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি চলমান প্রশাসন থেকে এক বিঘত সমপরিমাণ তথা সামান্যটুকুও বের হয়ে যায় সে জাহিলী যুগের মৃত্যু বরণ করবে’’। (বুখারী ৭০৫৩; মুসলিম ১৮৪৯)

‘আউফ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَلَا مَنْ وَلِيَ عَلَيْهِ وَالٍ، فَرَآهُ يَأْتِيْ شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِيْ مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ، وَلَا يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ.

‘‘জেনে রাখো, কারোর উপর কোন ব্যক্তি ক্ষমতাসীন হলে এবং সে ব্যক্তি কোন গুনাহ্’র কাজ করলে তার সে গুনাহ্কেই তুমি অপছন্দ করবে তবে তার আনুগত্য একেবারেই প্রত্যাখ্যান করবে না’’। (মুসলিম ১৮৫৫)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لَا حُجَّةَ لَهُ، وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِيْ عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً.

‘‘যে ব্যক্তি চলমান কোন প্রশাসনের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিলো সে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তখন এ ব্যাপারে তার কোন কৈফিয়ত শুনা হবে না এবং যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো যে, তখন সে কোন প্রশাসনের আনুগত্যের দায়বদ্ধতার তোয়াক্কা করেনি তা হলে সে জাহিলী যুগের মৃত্যু বরণ করবে’’। (মুসলিম ১৮৫০)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ بَعْدِيْ أَثَرَةً وَأُمُوْرًا تُنْكِرُوْنَهَا، قَالُوْا: فَمَا تَأْمُرُنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: أَدُّوْا إِلَيْهِمْ حَقَّهُمْ، وَسَلُوْا اللهَ حَقَّكُمْ.

‘‘নিশ্চয়ই তোমরা আমার মৃত্যুর পর (ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে) নিজ স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং আরো অনেক অসৎ কাজ দেখতে পাবে। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন আপনি আমাদেরকে কি করার আদেশ করছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তখন তোমরা তাদের অধিকার তথা আনুগত্য আদায় করবে এবং নিজ অধিকার আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট চাবে’’। (বুখারী ৭০৫২)

ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোন শরীয়ত বিরোধী কার্য পরিলক্ষিত হলে তা কখনো সমর্থন করা যাবে না। বরং তখন এ ব্যাপারে নিজের অসম্মতি অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কখনো অস্ত্র ধরা যাবে না যতক্ষণ না তারা নামায পরিত্যাগ করে অথবা তাদের পক্ষ থেকে শরীয়তের নিরেট প্রমাণ ভিত্তিক সুস্পষ্ট কুফরি পাওয়া যায়।

উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ، فَتَعْرِفُوْنَ وَتُنْكِرُوْنَ، فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ، وَمَنْ أَنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَلَا نُقَاتِلُهُمْ؟ قَالَ: لَا، مَا صَلُّوْا.

‘‘তোমাদের উপর এমন কতেক ক্ষমতাসীন আসবে যারা কিছু কাজ করবে শরীয়ত সম্মত আর কিছু শরীয়ত বিরোধী। যে ব্যক্তি তা অপছন্দ করবে সে কোনমতে নিষ্কৃতি পাবে আর যে তা মেনে নিতে অস্বীকার করবে সে সুন্দরভাবে নিরাপদ থাকবে আর যে তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয় সেই দোষী। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি এমন ক্ষমতাসীনদের সথে যুদ্ধ করবো না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, যতক্ষণ তারা নামায আদায় করে’’। (মুসলিম ১৮৫৪)

’উবাদাহ্ বিন্ স্বামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

بَايَعَنَا رَسُوْلُ اللهِ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، فِيْ مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا، وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ وَأَنْ نَقُوْلَ بِالْحَقِّ حَيْثُمَا كُنَّا، لَا نَخَافُ فِيْ اللهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ إِلاَّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাই‘আত করেছেন ক্ষমতাসীনদের কথা শুনতে এবং তাদের আনুগত্য করতে। চাই তা আমাদের ভালোই লাগুক বা নাই লাগুক, চাই তা সচ্ছল অবস্থায় হোক বা অসচ্ছল অবস্থায় অথবা আমাদের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করে নিজ স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার অবস্থায়ই হোক না কেন এবং আমারা যেন ক্ষমতাসীনদের সাথে ক্ষমতার লড়াই না করি। আমরা যেন সত্য কথা বলি যেখানেই আমরা থাকি না কেন। আমরা যেন আল্লাহ্ তা‘আলার ব্যাপারে কোন নিন্দাকারীর নিন্দাকে পরোয়া না করি যতক্ষণ না আমরা তাদের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কুফরি দেখতে পাই যে কুফরির ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে সঠিক প্রমাণ রয়েছে’’। (বুখারী ৭০৫৫, ৭০৫৬, ৭১৯৯, ৭২০০; মুসলিম ১৭০৯)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلَاحَ فَلَيْسَ مِنَّا.

‘‘যে ব্যক্তি মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে সে আমার উম্মত নয়’’। (বুখারী ৭০৭০; মুসলিম ৯৮)