হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
৬০. কারোর সাথে কোন বিষয় নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা

কারোর সাথে কোন বিষয় নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্। তা এভাবে যে, কোন সত্য প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নেই বরং অন্যকে অপমান করা এবং নিজের কৃতিত্ব প্রকাশ করার উদ্দেশ্যেই কারোর কথায় দোষ-ত্রুটি বের করার চেষ্টা করা।

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে এ জাতীয় লোকদের লুক্কায়িত উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يُجَـادِلُوْنَ فِيْ آيَاتِ اللهِ بِغَيْرِ سُلْطَانٍ أَتَاهُمْ، إِنْ فِيْ صُدُوْرِهِمْ إِلاَّ كِبْرٌ، مَا هُمْ بِبَالِغِيْهِ، فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ»

‘‘নিশ্চয়ই যারা কোন দলীল ছাড়াই আল্লাহ্ তা‘আলার নিদর্শনসমূহ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় তাদের অন্তরে রয়েছে শুধু অহঙ্কার যা সফল হবার নয়। অতএব তুমি আল্লাহ্ তা‘আলার শরণাপন্ন হও। তিনিই তো সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’’। (গাফির/মু’মিন : ৫৬)

কারোর সাথে তর্ক করলে তা একমাত্র সত্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যেই এবং সুন্দর পন্থায় হতে হবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلَا تُجَادِلُوْا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلاَّ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ»

‘‘তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সাথে একমাত্র উত্তম পন্থায়ই তর্কে লিপ্ত হবে’’। (‘আন্কাবূত : ৪৬)

কারোর সাথে অনর্থক ঝগড়া-ফাসাদকারী আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট একেবারেই ঘৃণিত এবং তারাই তাঁর কোপানলে পতিত।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَبْغَضَ الرِّجَالِ إِلَى اللهِ الْأَلَدُّ الْـخَصْمُ.

’’নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ব নিকৃষ্ট ব্যক্তি হচ্ছে অহেতুক ঝগড়া-ফাসাদকারীই’’। (বুখারী ২৪৫৭, ৪৫২৩; মুসলিম ২৬৬৮)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ خَاصَمَ فِيْ بَاطِلٍ وَهُوَ يَعْلَمُهُ ؛ لَمْ يَزَلْ فِيْ سَخَطِ اللهِ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْهُ.

‘‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে কারোর সাথে বাতিল কোন জিনিস নিয়ে ঝগড়া-ফাসাদ করলো আল্লাহ্ তা‘আলা সত্যিই তার উপর অসন্তুষ্ট হবেন যতক্ষণ না সে তা ছেড়ে দেয়’’। (আবূ দাউদ্, হাদীস ৩৫৯৭; আহমাদ ৫৩৮৫)

কুর‘আন নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা কুফরি।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمِرَاءُ فِيْ الْقُرْآنِ كُفْرٌ.

‘‘কুর‘আন নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা কুফরি’’।

(আবূ দাউদ্, হাদীস ৪৬০৩; আহমাদ ৭৮৪৮ ইব্নু হিববান/মাওয়ারিদ্, হাদীস ৫৯ ’হাকিম ২/২২৩)

কোন ব্যক্তি হিদায়াতের রাস্তা থেকে ফসকে গেলেই অহেতুক ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত হয়।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوْا عَلَيْهِ إِلاَّ أُوْتُوْا الْجَدَلَ، ثُمَّ تَلَا رَسُوْلُ اللهِ  هَذِهِ الْآيَةَ: (مَا ضَرَبُوْهُ لَكَ إِلاَّ جَدَلًا، بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُوْنَ)

‘‘কোন জাতি হিদায়াত পাওয়ার পর আবারো পথভ্রষ্ট হয়ে গেলে (আল্লাহ্ তা‘আলা) তাদেরকে অহেতুক ঝগড়া-ফাসাদে ব্যস্ত করে দেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন: যার মর্মার্থ: তারা শুধু বাক-বিতন্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে এমন কথা বললো। বস্ত্তত তারা বাক-বিতন্ডাকারী সম্প্রদায়’’। [যুখরুফ : ৫৮ (তিরমিযী ৩২৫৩; আহমাদ ৫/২৫২-২৫৬; ইব্নু মাজাহ্ ৪৮ ’হাকিম ২/৪৪৮]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতের মধ্যে এ জাতীয় বাকপটু মুনাফিকের আশঙ্কাই করেছিলেন।

’ইমরান বিন্ ’হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَخْوَفُ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ كُلُّ مُنَافِقٍ عَلِيْمِ اللِّسَانِ.

‘‘আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে প্রত্যেক বাকপটু মুনাফিকেরই বেশি আশঙ্কা করছি’’। (ত্বাবারানী/কবীর খন্ড ১৮ হাদীস ৫৯৩; ইব্নু হিববান ৮০ বায্যার, হাদীস ১৭০)