হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
১৯. কোন ক্ষমতাশীল ব্যক্তির তার অধীনস্থদের উপর যুলুম করা অথবা তাদেরকে ধোঁকা দেয়া

কোন ক্ষমতাশীল ব্যক্তির জন্য তার অধীনস্থদের উপর যুলুম করা অথবা তাদেরকে যে কোন ব্যাপারে ধোঁকা দেয়া কখনোই জায়িয নয়। বরং তা কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। কোন ব্যক্তির জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّمَا السَّبِيْلُ عَلَى الَّذِيْنَ يَظْلِمُوْنَ النَّاسَ وَيَبْغُوْنَ فِيْ الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْـحَقِّ، أُوْلَآئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ»

‘‘শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই (শাস্তির) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। বস্ত্তত: এদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি’’।(শূরা’ : ৪২)

জা’বির বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اتَّقُوْا الظُّلْمَ، فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘‘কারোর উপর অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, এ অত্যাচার কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার রূপেই দেখা দিবে’’। (মুসলিম ২৫৭৮)

মা’ক্বিল বিন্ ইয়াসা’র মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:

مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيْهِ اللهُ رَعِيَّةً، يَمُوْتُ يَوْمَ يَمُوْتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلاَّ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْـجَنَّةَ.

‘আল্লাহ্ তা‘আলা কোন বান্দাহ্’র উপর সাধারণ জনগণের কোন দায়িত্বভার অর্পণ করলে অতঃপর সে তাদেরকে সে ব্যাপারে ধোঁকা দিয়ে মারা গেলে তার উপর জান্নাত হারাম করে দেন’’। (বুখারী ৭১৫১; মুসলিম ১৪২ আবূ ‘আওয়ানাহ্, হাদীস ৭০৪৫, ৭০৪৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

أَيُّمَا رَاعٍ غَشَّ رَعِيَّتَهُ فَهُوَ فِيْ النَّارِ.

‘‘যে কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার অধীনস্থ প্রজাদেরকে ধোঁকা দিলে সে জাহান্নামে যাবে’’। (সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ২৭১৩)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا مِنْ أَمِيْرِ عَشَرَةٍ إِلاَّ يُؤْتَى بِهِ مَغْلُوْلَةً يَدُهُ إِلَى عُنُقِهِ، أَطْلَقَهُ عَدْلُهُ أَوْ أَوْبَقَهُ جَوْرَهُ.

‘‘কোন ব্যক্তি দশ জনের আমীর হলেও তাকে (কিয়ামতের দিন) গলায় হাত বেঁধে উপস্থিত করা হবে। তার ইনসাফ তাকে ছাড়িয়ে নিবে অথবা তার যুলুম তাকে ধ্বংস করবে’’। (আহমাদ ৯৫৭৩ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ১২৬০২ বায্যার, হাদীস ১৬৩৮, ১৬৩৯, ১৬৪০, দারিমী ২/২৪০ বায়হাক্বী ৩/১২৯)

অত্যাচারী প্রশাসক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুপারিশ পাবে না।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِيْ لَنْ تَنَالَـهُمَا شَفَاعَتِيْ : إِمَامٌ ظَلُوْمٌ غَشُوْمٌ، وَكُلُّ غَالٍ مَارِقٌ.

‘‘আমার উম্মাতের মধ্য থেকে দু’ জাতীয় মানুষই (কিয়ামতের দিন) আমার সুপারিশ পাবে না। তাদের একজন হচ্ছে বড় যালিম প্রশাসক এবং অন্যজন হচ্ছে প্রত্যেক ধর্মচ্যুত হঠকারী ব্যক্তি’’ (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ৮ হাদীস ৮০৭৯ আর্রোয়ানী, হাদীস ১১৮৬ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীব, হাদীস ২২১৮)

অত্যাচারী আমীরের সহযোগীরাও কিয়ামতের দিন হাউজে কাউসারের পানি পান থেকে বঞ্চিত থাকবে।

’হুযাইফাহ্ ও জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

سَيَكُوْنُ أُمَرَاءُ فَسَقَةٌ جَوَرَةٌ، فَمَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَلَيْسَ مِنِّيْ وَلَسْتُ مِنْهُ، وَلَنْ يَّرِدَ عَلَيَّ الْحَوْضَ.

‘‘অচিরেই এমন আমীর আসবে যারা হবে ফাসিক ও যালিম। যারা তাদের মিথ্যাকে সত্য এবং তাদের যুলুমে সহযোগিতা করবে তারা আমার নয় আর আমিও তাদের নই। তারা কখনোই আমার হাউজে কাউসারে অবতরণ করবে না’’। (আহমাদ ৫/৩৮৪ হাদীস ১৫২৮৪ বায্যার, হাদীস ১৬০৬, ১৬০৭, ১৬০৯; হা’কিম ৪/৪২২ ত্বাবারানী/কবীর, হাদীস ৩০২০)

যে আমীর ও প্রশাসকরা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চলে না এতদুপরি তারা প্রজাদের উপর যুলুম ও নির্যাতনের কারণে তাদের লা’নত ও ঘৃণার পাত্র হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সর্ব নিকৃষ্ট শাসক বলে আখ্যায়িত করেন।

আয়িয বিন্ ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ شَرَّ الرِّعَاءِ الْـحُطَمَةُ.

’’যালিমই হচ্ছে সর্ব নিকৃষ্ট প্রশাসক’’। (মুসলিম ১৮৩০)

‘আউফ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

شِرَارُ أَئِمَّتِكُمْ الَّذِيْنَ تُبْغِضُوْنَهُمْ وَيُبْغِضُوْنَكُمْ وَتَلْعَنُوْنَهُمْ وَيَلْعَنُوْنَكُمْ.

‘‘তোমাদের মধ্যকার সর্ব নিকৃষ্ট প্রশাসক হচ্ছে ওরা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা করো এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তেমনিভাবে যাদেরকে তোমরা লা’নত করো এবং তারাও তোমাদেরকে লা’নত করে’’। (মুসলিম ১৮৫৫)

যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুযায়ী বিচার করে না তাদেরকে তিনি বেকুব বলে আখ্যায়িত করেন।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَا كَعْبَ بْنَ عُجْرَةَ ! أَعَاذَكَ اللهُ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ، أُمَرَاءَ يَكُوْنُوْنَ مِنْ بَعْدِيْ، لَا يَهْتَدُوْنَ بِهَدْيِيْ، وَلَا يَسْتَنُّوْنَ بِسُنَّتِيْ.

‘‘হে কা’ব্ বিন্ ’উজ্রাহ্! আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাকে বেকুবদের প্রশাসন থেকে রক্ষা করুন। আমার ইন্তিকালের পরে এমন কিছু আমির আসবে যারা আমার আদর্শে আদর্শবান এবং আমার সুন্নাতের অনুসারী হবে না’’।

(আব্দুর রায্যাক, হাদীস ২০৭১৯; আহমাদ ৩/৩২১, ৩৯৯ হাকিম ৩/৪৮০, ৪/৪২২; ইব্নু হিববান ১৭২৩, ৪৫১৪ আবূ নু‘আইম/’হিল্য়াহ্ ৮/২৪৭)

ঠিক এরই বিপরীতে ন্যায় ও ইন্সাফ প্রতিষ্ঠাকারী প্রশাসকরা আল্লাহ্ তা‘আলার ‘আর্শের নিচে ছায়া পাবে এবং নূরের মিম্বারের উপর তাদের অবস্থান হবে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ : الْإِمَامُ الْعَادِلُ.

‘‘সাত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার ‘আর্শের ছায়া পাবে যে দিন আর কোন ছায়া থাকবে না। তার মধ্যে সর্বপ্রথম ব্যক্তি হচ্ছেন ইন্সাফ প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্রপতি’’। (বুখারী ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, ৬৮০৬; মুসলিম ১০৩১)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ الْـمُقْسِطِيْنَ عِنْدَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُوْرٍ، عَنْ يَمِيْنِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ، وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِيْنٌ، الَّذِيْنَ يَعْدِلُوْنَ فِيْ حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيْهِمْ وَمَا وَلُوْا.

‘‘নিশ্চয়ই ইন্সাফ প্রতিষ্ঠাকারীরা কিয়ামতের দিন পরম দয়ালু আল্লাহ্ তা‘আলার ডানে নূরের মিম্বারের উপর অবস্থান করবে। আর আল্লাহ্ তা‘আলার উভয় হাতই ডান। ইন্সাফকারী ওরা যারা বিচার কার্যে, নিজ পরিবারবর্গে ও অধীনস্থদের উপর ইন্সাফ করবে’’। (মুসলিম ১৮২৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদেরকে খুব তাড়াতাড়ি নিজ ভুল শুধরে নেয়ার জন্য কিছু সময় অবশ্যই দিয়ে থাকেন। তবে যখন তিনি তাদেরকে একবার ধরবেন তখন কিন্তু আর কোন ছাড়াছাড়ি নেই।

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ لَيُمْلِيْ لِلظَّالِمِ، حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ، ثُمَّ قَرَأَ: «وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ، إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيْمٌ شَدِيْدٌ»

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমকে কিছু সময় সুযোগ দিয়ে থাকেন। তবে যখন তিনি তাকে একবার পাকড়াও করবেন তখন আর কিন্তু (শাস্তি না দিয়ে) তাকে ছাড়বেন না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করেন যার অর্থ: এভাবেই তিনি কোন জনপদ অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন যখন তারা অত্যাচার করে। নি:সন্দেহে তাঁর পাকড়াও হচ্ছে অত্যন্ত যাতনাদায়ক সুকঠিন’’। [(হূদ : ১০২ (বুখারী ৪৬৮৬; মুসলিম ২৫৮৩]

ময্লুমের বদ্দো‘আ আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই কবুল করেন। যদিও সে কাফির অথবা ফাসিক হয়ে থাকুক না কেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (রাঃ) কে ইয়ামানে পাঠানোর সময় বিদায়ী নসীহত করতে গিয়ে বলেন:

وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْـمَظْلُوْمِ، فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ.

‘‘ময্লুমের বদ্দো‘আ থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, তার বদ্দো‘আ ও আল্লাহ্ তা‘আলার মাঝে কোন পর্দা বা আড় নেই। অতএব তার বদ্দো‘আ কবুল হবেই হবে’’। (বুখারী ১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭; মুসলিম ১৯; আবূ দাউদ ১৫৮৪; তিরমিযী ৬২৫; আহমাদ ২০৭১)

খুযাইমাহ্ বিন্ সা’বিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

اتَّقُوْا دَعْوَةَ الْـمَظْلُوْمِ، فَإِنَّهَا تُحْمَلُ عَلَى الْغَمَامِ، يَقُوْلُ اللهُ: وَعِزَّتِيْ وَجَلَالِيْ لَأَنْصُرَنَّكَ وَلَوْ بَعْدَ حِيْنٍ.

’’তোমরা ময্লুমের বদ্দো‘আ থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, তার বদ্দো‘আ মেঘমালার উপর উঠিয়ে নেয়া হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: আমার সম্মান ও মহিমার কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো যদিও তা কিছু দিন পরেই হোক না কেন’’। (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ৪ হাদীস ৩৭১৮ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীব, হাদীস ২২১৮)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

دَعْوَةُ الْـمَظْلُوْمِ مُسْتَجَابَةٌ، وَإِنْ كَانَ فَاجِرًا فَفُجُوْرُهُ عَلَى نَفْسِهِ.

‘‘ময্লুমের বদ্দো‘আ অবশ্যই গ্রহণীয়। যদি সে ফা’জির তথা গুনাহ্গার হয়ে থাকে তা হলে তার গুনাহ্ তারই ক্ষতি করবে। তবে তা তার ফরিয়াদ গ্রহণে কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে না’’। (আহমাদ ৮৭৮১ ত্বাবারানী/আওসাত্ব, হাদীস ১১৮২)

আনাস্ বিন্ মা’লিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

دَعْوَةُ الْـمَظْلُوْمِ وَإِنْ كَانَ كَافِرًا، لَيْسَ دُوْنَهَا حِجَابٌ.

‘‘ময্লুমের বদ্ দো‘আ কবুল হতে কোন বাধা নেই যদিও সে কাফির হয়ে থাকুক না কেন’’। (আহমাদ ১২৫৭১ সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীব, হাদীস ২২৩১)

কেউ কারোর উপর কোন ধরনের যুলুম করে থাকলে তাকে আজই সে ব্যাপারে তার সাথে যে কোনভাবে মীমাংসা করে নিতে হবে। কারণ, কিয়ামতের দিন কারোর হাতে এমন কোন টাকাকড়ি থাকবে না যা দিয়ে তখন কোন মীমাংসা করা যেতে পারে। বরং তখন মীমাংসার একমাত্র মাধ্যম হবে সাওয়াব অথবা গুনাহ্। অন্যকে নিজ সাওয়াব দিয়ে দিবে নতুবা তার গুনাহ্ বহন করবে। এমনো তো হতে পারে যে, তাকে অন্যের গুনাহ্ বহন করেই জাহান্নামে যেতে হবে। আর তখনই তার মতো নি:স্ব আর কেউই থাকবে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لِأَحَدٍ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ، قَبْلَ أَنْ لَا يَكُوْنَ دِيْنَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ، إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ، وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ، وَفِيْ رِوَايَةِ التِّرْمِذِيْ: رَحِمَ اللهُ عَبْدًا كَانَتْ لِأَخِيْهِ عِنْدَهُ مَظْلَمَةٌ فِيْ عِرْضٍ أَوْ مَالٍ، فَجَاءَهُ، فَاسْتَحَلَّهُ.

‘‘কারোর কাছে অন্য কারোর কোন হরণ করা অধিকার থাকলে (তা ইয্যত, সম্পদ অথবা যে কোন সম্পর্কীয় হোক না কেন) সে যেন তার সাথে আজই সে ব্যাপারে মীমাংসা করে নেয়। সে দিনের অপেক্ষা সে যেন না করে যে দিন কোন দীনার-দিরহাম তথা টাকা-পয়সা থাকবে না। সে দিন তার কোন নেক আমল থেকে থাকলে অন্যের অধিকার হরণের পরিবর্তে তার থেকে তা ছিনিয়ে নেয়া হবে। আর যদি সে দিন তার কোন নেক আমল না থেকে থাকে তা হলে তার প্রতিপক্ষের গুনাহ্ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে’’। (বুখারী ২৪৪৯, ৬৫৩৪; তিরমিযী ২৪১৯)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَتَدْرُوْنَ مَا الْـمُفْلِسُ؟ قَالُوْا: الْـمُفْلِسُ فِيْنَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ، فَقَالَ: إِنَّ الْـمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِيْ يَأْتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَاةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ، وَيَأْتِيْ قَدْ شَتَمَ هَذَا، وَقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُّقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ، فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ طُرِحَ فِيْ النَّارِ.

‘‘তোমরা কি জানো নি:স্ব কে? সাহাবারা বললেন: নি:স্ব সে ব্যক্তিই যার কোন দিরহাম তথা টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার উম্মাতের মধ্যে সে ব্যক্তিই নি:স্ব যে কিয়ামতের দিন (আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে) অনেকগুলো নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে। অথচ (হিসেব করতে গিয়ে) দেখা যাবে যে, সে অমুককে গালি দিয়েছে। অমুককে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়েছে। অমুকের সম্পদ খেয়ে ফেলেছে। অমুকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং অমুককে মেরেছে। তখন একে তার কিছু সাওয়াব দেয়া হবে এবং ওকে আরো কিছু। এমনিভাবে যখন তার সকল সাওয়াব ও পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ এখনো তার দেনা বাকি তখন ওদের গুনাহ্সমূহ তার উপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে জাহান্নামে দেয়া হবে’’। (মুসলিম ২৫৮১; তিরমিযী ২৪১৮)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَتُؤَدُّنَّ الْـحُقُوْقَ إِلَى أَهْلِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، حَتَّى يُقَادَ لِلشَّاةِ الْـجَلْحَاءِ مِنَ الشَّاةِ الْقَرْنَاءِ.

‘‘তোমরা সকলেই কিয়ামতের দিন অন্যের হৃত অধিকারসমূহ সেগুলোর অধিকারীদেরকেই পৌঁছিয়ে দিবে অবশ্যই। এমনকি সে দিন শিংবিশিষ্ট ছাগল থেকেও শিংবিহীন ছাগলের জন্য ক্বিসাস্ তথা সমপ্রতিশোধ নেয়া হবে’’। (মুসলিম ২৫৮২)

কেউ মিথ্যা কসমের মাধ্যমে কারোর কোন অধিকার অবৈধভাবে হরণ করলে তাকে অবশ্যই সে জন্য জাহান্নামে যেতে হবে এবং জান্নাত হবে তার উপর হারাম।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِيْنِهِ، فَقَدْ أَوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ، وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْـجَنَّةَ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيْرًا، يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: وَإِنْ قَضِيْبًا مِنْ أَرَاكٍ.

‘‘কেউ (মিথ্যা) কসমের মাধ্যমে কোন মুসলিমের অধিকার হরণ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নাম বাধ্যতামূলক করেন এবং জান্নাত হারাম করে দেন। জনৈক (সাহাবী) বলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! যদিও সামান্য কোন কিছু হোক না কেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যদিও ‘‘আরাক’’ গাছের ডাল সমপরিমাণ হোক না কেন। যা মিসওয়াকের গাছ’’। (মুসলিম ১৩৭)

বিশেষ করে কেউ কারোর জমিন অবৈধভাবে হরণ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার উপর খুবই অসন্তুষ্ট হবেন এবং সে পরিমাণ সাত স্তর জমিন তার গলায় পরিয়ে দিবেন।

ওয়ায়িল বিন্ ’হুজ্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنِ اقْتَطَعَ أَرْضًا ظَالِـمًا لَقِيَ اللهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ.

‘‘কেউ কারোর জমিন অবৈধভাবে হরণ করলে সে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তখন তিনি তার উপর খুবই অসন্তুষ্ট’’। (মুসলিম ১৩৯)

‘আ’য়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مِنْ ظَلَمَ قِيْدَ شِبْرٍ مِنَ الْأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرْضِيْنَ.

‘‘যে ব্যক্তি কারোর এক বিঘত সমপরিমাণ জমিন অবৈধভাবে হরণ করলো (কিয়ামতের দিন) তার গলায় সাত জমিন পরিয়ে দেয়া হবে’’। (বুখারী ২৪৫৩, ৩১৯৫; মুসলিম ১৬১২)