হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

সমকাম বা পায়ুগমন বলতে পুরুষে পুরুষে একে অপরের মলদ্বার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ যৌন উত্তেজনা নিবারণ করাকেই বুঝানো হয়।

সমকাম একটি মারাত্মক গুনাহ্’র কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায় এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিপূর্বে কাউকে প্রদান করেননি। তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের উপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَلُوْطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِيْنَ، إِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجالَ شَهْوَةً مِّنْ دُوْنِ النِّسآءِ، بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ»

‘‘আর আমি লূত্ব (আঃ) কে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়’’। (আ’রাফ : ৮০-৮১)

আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত কাজকে অত্যন্ত নোংরা কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:

«وَلُوْطًا آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَّعِلْمًا، وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْقَرْيَةِ الَّتِيْ كَانَتْ تَعْمَلُ الْـخَبَائِثَ، إِنَّهُمْ كَانُوْا قَوْمَ سَوْءٍ فَاسِقِيْنَ»

‘‘আর আমি লূত্ব (আঃ) কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছি এবং তাঁকে উদ্ধার করেছি এমন জনপদ থেকে যারা নোংরা কাজ করতো। মূলতঃ তারা ছিলো নিকৃষ্ট প্রকৃতির ফাসিক সম্প্রদায়’’। (আম্বিয়া : ৭৪)

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে সমকামীদেরকে যালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:

«قَالُوْا إِنَّا مُهْلِكُوْا أَهْلِ هَذِهِ الْقَرْيَةِ، إِنَّ أَهْلَهَا كَانُوْا ظَالِمِيْنَ»

’’ফেরেশ্তারা ইব্রাহীম (আঃ) কে বললেন: আমরা এ জনপদবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেবো। এর অধিবাসীরা নিশ্চয়ই জালিম’’। (আন্কাবূত : ৩১)

লূত্ব (আঃ) এদেরকে বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে উল্লেখ করেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ عَلَى الْقَوْمِ الْـمُفْسِدِيْنَ»

‘‘লূত্ব (আঃ) বললেন: হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’’। (আন্কাবূত : ৩০)

ইব্রাহীম (আঃ) তাদের ক্ষমার জন্য জোর সুপারিশ করলেও তা শুনা হয়নি। বরং তাঁকে বলা হয়েছে:

«يَآ إِبْرَاهِيْمُ أَعْرِضْ عَنْ هَذَا، إِنَّهُ قَدْ جَآءَ أَمْرُ رَبِّكَ، وَإِنَّهُمْ آتِيْهِمْ عَذَابٌ غَيْرُ مَرْدُوْدٍ»

‘‘হে ইব্রাহীম! এ ব্যাপারে আর একটি কথাও বলো না। (তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে) তোমার প্রভুর ফরমান এসে গেছে এবং তাদের উপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই টলবার মতো নয়’’। (হূদ্ : ৭৬)

যখন তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়ে গেলো এবং তা ভোরে ভোরেই আসবে বলে লূত্ব (আঃ) কে জানিয়ে দেয়া হলো তখন তিনি তা দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে আপত্তি জানালে তাঁকে বলা হলো:

«أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيْبٍ»

‘‘সকাল কি অতি নিকটেই নয়?! কিংবা সকাল হতে কি এতই দেরী?!’’ (হূদ্ : ৮১)

আল্লাহ্ তা‘আলা লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায়ের শাস্তির ব্যাপারে বলেন:

«فَلَمَّا جَآءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّـنْ سِجِّيْلٍ مَّنْضُوْدٍ، مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ، وَمَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِيْنَ بِبَعِيْدٍ»

‘‘অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হলো তখন ভূ-খন্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম এবং ওর উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা ছিলো একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিলো তোমার প্রভুর ভান্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ যালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়’’।

(হূদ্ : ৮২-৮৩)

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন:

«فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِيْنَ، فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّنْ سِجِّيْلٍ، إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِيْنَ، وَإِنَّهَا لَبِسَبِيْلٍ مُّقِيْمٍ، إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ»

‘‘অতঃপর তাদেরকে সূর্যোদয়ের সময়ই এক বিকট আওয়াজ পাকড়াও করলো। এরপরই আমি জনপদটিকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর উক্ত জনপদটি (উহার ধ্বংস স্তূপ) স্থায়ী (বহু প্রাচীন) লোক চলাচলের পথি পার্শ্বেই এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে রয়েছে মু’মিনদের জন্য নিশ্চিত নিদর্শন’’।

(’হিজ্র : ৭৩-৭৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমকামীদেরকে তিন তিন বার লা’নত দিয়েছেন যা অন্য কারোর ব্যাপারে দেননি।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন’’।

(আহমাদ ২৯১৫; ইব্নু হিববান ৪৪১৭; বায়হাক্বী ৭৩৩৭, ১৬৭৯৪; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬; আবূ ইয়া’লা ২৫৩৯; ‘আব্দুব্নু ’হুমাইদ্ ৫৮৯; হা’কিম ৪/৩৫৬)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ.

‘‘সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত’’।

(সহীহুত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস ২৪২০)

বর্তমান যুগে সমকামের বহুল প্রচার ও প্রসারের কথা কানে আসতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ এসে যায় যাতে তিনি বলেন:

إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ عَمَلُ قَوْمِ لُوْطٍ.

‘‘আমার উম্মতের উপর সমকামেরই বেশি আশঙ্কা করছি’’।

(তিরমিযী ১৪৫৭; ইব্নু মাজাহ্ ২৬১১; আহমাদ ২/৩৮২ সহীহুত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস ২৪১৭)

ফুযাইল্ ইব্নু ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

لَوْ أَنَّ لُوْطِيًّا اغْتَسَلَ بِكُلِّ قَطْرَةٍ مِّنَ السَّمَاءِ لَقِيَ اللهَ غَيْرَ طَاهِرٍ.

‘‘কোন সমকামী ব্যক্তি আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করলেও সে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে অপবিত্রাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে’’।

(দূরী/যম্মুল্লিওয়াত্ব : ১৪২)