মুহাম্মাদ (ﷺ) এর নুবুওয়াত ও রিসালাতে বিশ্বাসের অর্থ আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি। নবীগণের নিষ্পাপত্বে বিশ্বাস করার অর্থই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিষ্পাপত্বে বিশ্বাস করা। তা সত্ত্বেও ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বিশেষভাবে তাঁর বিষয় উল্লেখ করে বলেছেন: ‘‘এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর নবী, তাঁর বান্দা, তাঁর রাসূল, তাঁর মনোনীত নির্বাচিত, তাঁর বাছাইকৃত। তিনি কখনো মূর্তির ইবাদত করেন নি এবং কখনোই এক পলকের জন্যও আল্লাহর সাথে শিরক করেন নি। তিনি কখনোই কোনো সগীরা বা কবীরা কোনো প্রকারের পাপে লিপ্ত হন নি।’’

ইমাম আবূ হানীফার এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে শাইখ আহমদ ইবন মুহাম্মাদ মাগনীসাবী হানাফী ‘শারহুল ফিকহিল আকবার’ গ্রন্থে বলেন:


ثم أشار الإمام الأعظم بقوله "وعبده" إلى فائدتين: أعني تشريف محمد (ﷺ) وحفظ الأمة عن قول النصارى. قال أبو القاسم سليمان الأنصاري: لما وصل محمد ﷺ إلى الدرجات العالية والمراتب الرفيعة في المعارج أوحى الله إليه: يا محمد بمَ أشرِّفك؟ قال: يا رب بنسبتي إلى نفسك (إليك) بالعبودية، فأنزل فيه "سبحان الذي أسرى بعبده ليلاً"، فقال ﷺ: "لا تطروني كما أطري عيسى بن مريم، وقولوا: عبد الله ورسوله. كذا في المشارق. أي لا تتجاوزوا عن الحد في مدحي كما بالغ النصارى في مدح عيسى عليه السلام حتى كفروا فقالوا إنه ابن الله، وقولوا في حقي: إنه عبد الله ورسوله، حتى لا تكونوا أمثالهم".


‘‘ইমাম আযম ‘তাঁর বান্দা’ কথাটি এখানে উল্লেখ করে দুটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন: (১) মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মর্যাদা প্রকাশ এবং (২) খৃস্টানদের মত কথা বলা থেকে উম্মাতকে রক্ষা করা। আবুল কাসিম সুলাইমান আনসারী (৫১১ হি) বলেন[1]: যখন মুহাম্মাদ (ﷺ) মিরাজের সময় সুউচ্চ মর্যাদায় উন্নীত হলেন তখন আল্লাহ তাঁর কাছে ওহী প্রেরণ করেন: হে মুহাম্মাদ, তোমাকে কিভাবে মর্যাদাম--ত করব? তিনি বলেন: হে আমার প্রতিপালক, আমাকে আপনার সাথে দাসত্বের সম্পর্কে সম্পর্কিত করে মর্যাদাময় করুন। তখন আল্লাহ আয়াত নাযিল করেন: ‘‘পবিত্র তিনি যিনি তাঁর দাসকে (বান্দাকে) রজনীযোগে ভ্রমন করিয়েছেন...।’’[2] এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: ‘‘খৃস্টানগণ যেরূপ ঈসা ইবনু মারিয়ামকে বাড়িয়ে প্রশংসা করেছে তোমরা সেভাবে আমার বাড়িয়ে প্রশংসা করবে না। আমি তো তাঁর বান্দা মাত্র। অতএব তোমরা বলবে: আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’’[3] মাশারিক গ্রন্থে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদীসের অর্থ: যেভাবে খৃস্টানগণ ঈসা (আঃ)-এর প্রশংসায় সীমালঙ্ঘন করে কাফির হয়ে গিয়েছে তোমরা আমার নাত-প্রশংসায় এভাবে সীমালঙ্ঘন করো না। খৃস্টানগণ সীমালঙ্ঘন করে বলেছিল: তিনি আল্লাহর পুত্র। তোমরা আমার সম্পর্কে বল: তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল; যেন তোমরা তাদের মত না হও।’’[4]

এ বিষয়ে ইমাম তাহাবী (রাহ) বলেন:


وإِنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ المصطَفى، ونبيُّه المجْتَبى، ورَسُولُهُ المُرْتَضَى. وإنَّه خَاتِمُ الأنبياءِ، وإِمَامُ الأتْقِيَاءِ، وسيِّدُ المرسَلينَ، وحَبيبُ ربِّ العالَمين. وكُلُّ دَعْوى النُّبوةِ بَعدَهُ فَغَيٌّ وَهَوى. وَهُو المبعوثُ إلى عَامَّةِ الجِنِّ وكَافَّة الوَرَى بالحقِّ والهدى، وبالنُّور والضِّياء.


‘‘নিশ্চয়, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর মনোনীত বান্দা (দাস), তাঁর নির্বাচিত নবী ও তাঁর সন্তোষভাজন রাসূল। তিনি সর্বশেষ নবী, সর্বকালের মুত্তাকীগণের ইমাম, রাসূলগণের নেতা এবং রাব্বুল আলামীনের একান্ত প্রিয়জন। তাঁর পরবর্তীকালে নবুওয়াতের সব দাবী ভ্রান্ত ও প্রবৃত্তিপ্রসূত। তিনি প্রেরিত হয়েছেন সমগ্র জিন ও মানবকুলের প্রতি সত্য, হেদায়ত, নূর ও আলো সহকারে।’’[5]

[1] আবুল কাসিম আনসারীর এ বক্তব্য ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী তাঁর পিতার সূত্রে তাঁর প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন। দেখুন: তাফসীর রাযী: মাফাতীহুল গাইব ২০/১১৭।

[2] সূরা (১৭) ইসরা (বনী ইসরাঈল): ১ আয়াত।

[3] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১২৭১, ৬/২৫০৫; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৪৭৮।

[4] মাগনীসাবী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃষ্ঠা ২২-২৩।

[5] তাহাবী, আল-আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ৮-৯।