আর-রাহীকুল মাখতূম মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ (غَزْوَةُ فَتْحِ مَكَّةَ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) ১ টি
আকস্মিকভাবে ইসলামী সৈন্য কুরাইশদের মাথার উপর (قُرَيْشٌ تَبَاغَتَ زَحْفَ الْجَيْشِ الْإِسْلاَمِيْ):

রাসূলে কারীম (ﷺ) যখন আবূ সুফইয়ানের নিকট হতে চলে গেলেন তখন আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন, ‘শীঘ্র এখন মক্কায় নিজ সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন কর।’ আবূ সুফইয়ান অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মক্কায় ফিরে এসে উচ্চকণ্ঠে এ বলে আহবান জানালেন, ‘ওহে কুরাইশগণ! মুহাম্মাদ (ﷺ) এমন এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কা আগমন করছেন যার সঙ্গে মোকাবেলা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা কারও নেই। কিন্তু যারা আবূ সুফইয়ানের গৃহে প্রবেশ করবে তারা আশ্রিত হবে। এ কথা শুনে তাঁর স্ত্রী হিন্দা বিনতে ‘উতবাহ এসে তাঁর মোচ ধরে বলল, ‘মেরে ফেল এ চর্বিযুক্ত ও শক্ত মাংসধারী মশককে। এরূপ সংবাদ পরিবেশকারী ও পূর্বাভাষদাতা বিনষ্ট হোক।

আবূ সুফইয়ান বলল, ‘তোমাদের সর্বনাশ হোক। দেখ, তোমাদের জীবন সম্পর্কে এ মহিলা যেন তোমাদের ধোঁকায় নিক্ষেপ না করে। কারণ মুহাম্মাদ (ﷺ) এত অধিক সংখ্যক সৈন্য নিয়ে আগমন করছেন যে, এর সঙ্গে মোকাবেলা করার সাধ্য কারও নেই। এমতাবস্থায় যে আবূ সুফইয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে আশ্রয় লাভ করবে।

লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ যেন তোমাকে ধ্বংস করে। তোমার বাড়ি আমাদের কত জনের আশ্রয় স্থান হবে?’

আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘আরো কথা আছে। যারা ভিতর থেকে নিজ নিজ ঘরের দরজা বন্ধ রাখবে তারাও আশ্রিত বলে গণ্য হবে। অধিকন্তু, যারা মসজিদুল হারামে গিয়ে প্রবেশ করবে তারাও আশ্রিত বলে গণ্য হবে। এ কথা শোনার পর লোকেরা সকলে নিজ নিজ ঘর ও মসজিদুল হারাম অভিমুখে পলায়ন করতে থাকল।

তবে কিছু সংখ্যক লম্পটকে তারা মুসলিমগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিল এবং বলল যে, ‘এদেরকে আমরা অগ্রভাগে রাখছি। যদি কুরাইশগণ কৃতকার্য হয় তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে মিলিত হব, কিন্তু যদি তাদের খুব মারধর করা হয় তাহলে আমাদের নিকট হতে যা কিছু চাওয়া হবে আমরা মেনে নিব।

মুসলিমগণের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য এ সকল নির্বোধ কুরাইশগণ ইকরামা বিন আবূ জাহল, সফওয়ান বিন উমাইয়া এবং সোহাইল বিন আমরের পরিচালনায় খান্দাময় একত্রিত হল। তাদের মধ্যে বনু বাকর গোত্রের হেমাস বিন ক্বায়স নামক এক লোকও ছিল যে, ইতোপূর্বে অস্ত্র ঠিক ঠাক করছিল। এ প্রেক্ষিতে তার স্ত্রী এক দিন বলেছিল, ‘আমি যা কিছু দেখছি তা কিসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে?’

সে বলল, ‘মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীদের সঙ্গে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’

স্ত্রী বলল, ‘আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদের মোকাবেলায় কোন কিছুই স্থির হতে পারবে না।’

সে বলল, ‘আল্লাহর শপথ! আমার আশা যে, আমি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কোন সঙ্গীকে তোমার খাদেম করে ছাড়ব।’ তারপর সে বলল,

إن يقبلوا اليوم فمالي عِلَّه ** هٰذَا ســلاح كامــل وألَّه

وذو غِرَارَيْن سريع السَّلَّة **

অর্থ : তারা যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসে তবে আমার কোন আপত্তি হবে না। এ হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র, লম্বা ফলা বিশিষ্ট বর্শা এবং আকস্মিক আক্রমণাত্মক দু’ ধার বিশিষ্ট তরবারী রয়েছে।

খান্দামর যুদ্ধে এ ব্যক্তিও এসেছিল।