আর-রাহীকুল মাখতূম মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ (غَزْوَةُ فَتْحِ مَكَّةَ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) ১ টি
ইসলামী বাহিনী মক্কার পথে (الْجَيْشُ الْإِسْلاَمِيْ يَتَحَرَّكُ نَحْوَ مَكَّةَ):

৮ম হিজরী ১০ই রমাযান নাবী কারীম (ﷺ) মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। তাঁর দশ হাজার সাহাবী (রাঃ)-এর এক বাহিনী। এ সময় মদীনার প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করা হয় আবূ রুহম গিফারী (রাঃ)-এর উপর।

জুহফাহ কিংবা তার কিছু আগে নাবী কারীম (ﷺ)-এর চাচা আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়। ইসলাম গ্রহণ করে স্বীয় পরিবার পরিজনসহ তিনি মদীনা হিজরত করে যাচ্ছিলেন। আবার আবওয়া নামক স্থানে নাবী কারীম (ﷺ)-এর চাচাতো ভাই আবূ সুফইয়ান বিন হারিস এবং ফুফাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন উমাইয়ার সঙ্গে সাক্ষাত হয়। তাদের উভয়কে দেখে নাবী কারীম (ﷺ) মুখ ফিরিয়ে নেন। কারণ এরা উভয়েই নাবী কারীম (ﷺ)-কে দারুণ দুঃখ কষ্ট দিয়েছিল এবং তাঁর নামে কুৎসা রটনা করেছিল। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে উম্মু সালামাহ (রাঃ) আরয করেন, এমনটি হওয়া উচিত নয় যে, আপনার চাচাতো এবং ফুফাতো ভাই আপনার নিকট সব চেয়ে বেশী হতভাগ্য হবে। এদিকে আলী (রাঃ) আবূ সুফইয়ান বিন হারিসকে শিখিয়ে দিলেন যে, তুমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সম্মুখে গিয়ে সে কথা বল যা ইউসুফের ভাইয়েরা তাঁকে বলেছিলেন।

‏(‏قَالُوْا تَاللهِ لَقَدْ آثَرَكَ اللهُ عَلَيْنَا وَإِن كُنَّا لَخَاطِئِيْنَ‏)‏ ‏[‏يوسف‏:‏91‏]‏

‘আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে আমাদের উপর সম্মানিত করেছেন এবং নিশ্চয়ই আমরা দোষী ছিলাম।’ [ইউসুফ (১২) : ৯১]

কারণ, নাবী কারীম (ﷺ) এটা পছন্দ করবেন না যে, অন্য কারো উত্তর তাঁর চাইতে উত্তম ছিল। অতএব, আবূ সুফইয়ান তা’ই করল এবং উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাৎক্ষণিকভাবে বললেন,

‏(‏قَالَ لاَ تَثْرَيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ‏)‏ ‏[‏يوسف‏:‏92‏]‏

‘অদ্য তোমাদের উপর কোন নিন্দা নেই। আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তিনি দয়াশীলদের চাইতেও অধিক দয়ালু।’ [ইউসুফ (১২) : ৯২]

এ প্রেক্ষিতে আবূ সুফইয়ান কবিতার নিম্নরূপ কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করে শোনাল,

لعغمرك إني حين أجمل راية لتغلب خيل اللات خيل محمد

لكالمدلج الحيران أظلم ليله فهٰذَا أواني حين أهدى فأهتدي

هداني هاد غير نفسي ودلني عَلٰى الله من طردته كل مطرد

অর্থ : ‘তোমার জীবনের কসম! সেই সময় আমি এ জন্য পতাকা উত্তোলন করেছিলাম যে, লাতের ঘোড়সওয়ার মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ঘোড়সওয়ারের উপর বিজয়ী হবে, তখন আমার অবস্থা সে রাত্রিকালের প্রবাসীর ন্যায় ছিল যে অন্ধকারে দিগ্বিদিক হারিয়ে ঘুরতে থাকে। কিন্তু এখন সময় এসে গেছে যে, আমাকে পথ দেখানো হবে এবং আমি হিদায়াত লাভ করব। আমাকে আমার আত্মার পরিবর্তে একজন পথ প্রদর্শক হিদায়াত করেছেন এবং সে ব্যক্তিই আমাকে আল্লাহর পথের কথা বলেছেন যাকে আমি প্রতি মুহূর্তে তিরস্কারের মাধ্যমে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।

এ কবিতা শ্রবণান্তে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তার বক্ষে একটি থাবা মারলেন এবং বললেন, ‘প্রতি মুহূর্তে তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে।[1]

[1] আবূ সুফইয়ানের ইসলাম গ্রহণের ফলে পরবর্তী সময়ে তাঁর মধ্যে অনেক গুণাবলীর সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়। তিনি যখন হতে ইসলাম গ্রহণ করেন তখন হতে লজ্জায় রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ান নাই। নাবী কারীম (সাঃ) তাঁকে ভালবাসতেন এবং তাঁর জন্য জান্নাতের শুভ সংবাদ দিতেন এবং বলতেন আমার আশা আছে যে, এ হামযাহর বিনিময় প্রমাণিত হবে। মৃত্যুর সময় আবূ সুফইয়ান বলতেছিলেন, ‘আমার জন্য ক্রন্দন করনা। কারণ ইসলাম গ্রহণ করার পর আমি কখনো পাপের কথা বলিনি।’ যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১৬২-১৬৩ পৃঃ।