আর-রাহীকুল মাখতূম উহুদ যুদ্ধ (غَزْوَةُ أُحُدٍ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) ১ টি
এ যুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলার সক্রিয় উদ্দেশ্য ও রহস্য (الْحُكْمُ وَالْغَايَاتُ الْمَحْمُوْدَةُ فِيْ هٰذِهِ الْغَزْوَةِ):

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে লিখেছেন।[1] হাফেয ইবনু হাজার (রঃ) বলেছেন যে, ওলামারা (ইসলামী পন্ডিতগণ) বলেছেন যে, গাযওয়ায়ে উহুদ ও তার মধ্যে মুসলিমগণের পরাজয়ে মহান আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ও উপকার নিহিত ছিল। যেমন অবাধ্যতার প্রায়শ্চিত্ত ও বাধা না মানার দুর্বিপাক সম্পর্কে মুসলিম জাতিকে সতর্ক করা, কারণ তীরন্দাযগণকে নিজ স্থানে জয় ও পরাজয় উভয় অবস্থাতেই স্থির থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁরা তার বিরুদ্ধাচরণ করে কেন্দ্র পরিত্যাগ করেছিল যার পরিণতি হিসেবে এ পরাজয়। একটি উদ্দেশ্য রাসূলগণের সুন্নাতের প্রকাশ করা, তাঁদেরকে প্রথমে বিপদে ফেলে শেষে বিজয়ী করা হয়। আর তাতে এ রহস্যও লুক্কায়িত আছে যে, যদি তাঁদেরকে বরাবর বিজয়ী করা হয়, তাহলে মুসলিম সমাজে এমন সব লোকের অনুপ্রবেশ ঘটবে যারা মু’মিন নয়। তখন সৎ ও অসৎ এর মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব হবে না। আর যদি বরাবর পরাজয়ের পর পরাজয়ের সম্মুখীন হতো তাহলে নাবী প্রেরণের উদ্দেশ্যই সফল হবে না। কাজেই আকাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য জয় পরাজয় দুটিরই প্রয়োজন আছে যাতে সৎ ও অসৎ এর মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায়। কারণ মুনাফিক্বদের কপটতা মুসলিমগণের নিকট গোপন ছিল। যখন এ ঘটনা সংঘটিত হল তখন মুনাফিক্বগণ কথা ও কর্মে প্রকাশ করে দিল। আর মুসলিমগণ জানতে পারল যে, তাঁদের মধ্যেই নিজেদের শত্রু বর্তমান। কাজেই মুসলিমগণ তাদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত ও সতর্ক হলেন।

একটা উদ্দেশ্য বা রহস্য এটাও ছিল যে, কোন কোন ক্ষেত্রে সাহায্য আসতে বিলম্ব ঘটলে নম্রতার সৃষ্টি হয় ও আত্ম-অহংকার নিঃশেষ হয়ে যায়। কাজেই পরীক্ষায় পড়ে যখন মুসলিমগণ বিপন্ন হয়ে পড়লেন তখন তাঁরা ধৈর্য্য অবলম্বন করলেন আর মুনাফিক্বগণ হা-হুতাশ আরম্ভ করে দিল।

একটা উদ্দেশ্য এটাও ছিল যে, আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বাসীগণের জন্য পুরস্কারের ক্ষেত্রে এমন অনেক মর্যাদা (জান্নাত) তৈরি করেছেন, যেখানে তাঁদের আমল দ্বারা পৌঁছা সম্ভব নয়। কাজেই বিপদ ও পরীক্ষার মধ্যে এমন অনেক উপায় নিহিত রেখেছেন যদ্দ্বারা তাঁরা সেই সব মর্যাদায় পৌঁছতে পারেন।

আর একটা হিকমত বা রহস্য ছিল, শাহাদত লাভ আওলিয়া কিরামের সর্বাপেক্ষা বড় পদমর্যাদা। কাজেই এ পদমর্যাআ তাঁদের জন্য সরবরাহ করে দেয়া হয়েছিল।

আরও একটি রহস্য নিহিত ছিল যে, আল্লাহ তা‘আলা নিজ শত্রুদেরকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। কাজেই তাদের ধ্বংসের ব্যবস্থা করেন। অর্থাৎ কুফরী, অত্যাচার ও আল্লাহর ওলীগণকে কষ্ট দেওয়াতে সীমাতিরিক্ত অবাধ্যতা (করার পরিণতিতে) ঈমানদারগণকে গোনাহ হতে পাক ও পরিচ্ছন্ন করলেন ও বিধর্মী কাফিরগণকে ধ্বংস ও নিঃশেষ করলেন।[2]

[1] যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ৯১-১০৮ পৃঃ।

[2] ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড ৩৪৭ পৃঃ।