আর-রাহীকুল মাখতূম উহুদ যুদ্ধ (غَزْوَةُ أُحُدٍ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) ১ টি
উবাই ইবনু খালফের হত্যা (مَقْتَلُ أُبَيِّ بْنِ خَلْفٍ):

ইবনু ইসহাক্ব বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ঘাঁটিতে পৌঁছে যান তখন উবাই ইবনু খালফ এগিয়ে গিয়ে বলে, ‘মুহাম্মাদ (ﷺ) কোথায়? হয় আমি থাকব, না হয় সে থাকবে।’ তার এ কথা শুনে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাদের মধ্য হতে কেউ তাঁর উপর আক্রমণ করব কি?’ উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘তাকে আসতে দাও।’ সে নিকটবর্তী হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হারিস ইবনু সম্মাহ (রাঃ)-এর নিকট হতে একটি ক্ষুদ্র বর্শা চেয়ে নিয়ে নাড়া দেন। তিনি ওটা নাড়া দেয়া মাত্রই জনগণ এমনভাবে এদিকে ওদিক সরে পড়ে যেমনভাবে উট তার শরীর নাড়া দিলে মাছিগুলো উড়ে যায়। এরপর তিনি তাঁর মুখোমুখী হন এবং শিরস্ত্রাণ ও বর্মের মধ্যস্থলে গলার পার্শ্বে সামান্য জায়গা খোলা দেখে ওটাকেই লক্ষ্য করে এমনভাবে বর্শার আঘাত করেন যে, সে ঘোড়া হতে গড়িয়ে পড়ে যায়। তার ঘাড়ে খুব বড় একটা অাঁচড় ছিল না, রক্ত বন্ধ ছিল, এমতাবস্থায় সে কুরাইশদের নিকট পৌঁছে বলে, ‘মুহাম্মাদ (ﷺ) আমাকে হত্যা করে ফেলেছে।’ জনগণ তাকে বলে, ‘আল্লাহর কসম! তোমার মন দমে গেছে, নচেৎ তোমাকে আঘাত তো তেমন লাগে নি, তথাপি তুমি এত ছটফট করছো কেন?’ উত্তরে সে বলে, ‘সে মক্কায় আমাকে বলেছিল, আমি তোমাকে হত্যা করব।[1] এ জন্য, আল্লাহর কসম! যদি সে আমাকে থুথু দিত তা হলেও আমার জীবন শেষ হয়ে যেত।’ অবশেষে এ শত্রু মক্কা ফিরবার পথে ‘সারফ’ নামক স্থানে পৌঁছে মৃত্যু বরণ করে।[2] আবুল আসওয়াদ (রাঃ) উরওয়া (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, সে বলদের মতো আওয়ায বের করত এবং বলত, ‘যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যে কষ্ট আমি পাচ্ছি, যদি যিল মাজাযের সমস্ত অধিবাসী ঐ কষ্ট পেত তবে তারা সবাই মরে যেত।’[3]

[1] ঘটনা হচ্ছে মক্কায় যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে উবাই এর সাক্ষাৎ হতো তখন সে তাঁকে বলত, ‘মুহাম্মাদ (সাঃ)! আমার নিকট ‘আউদ’ নামক একটি ঘোড়া রয়েছে। আমি দৈনিক তাকে তিন সা’ (সাড়ে সাত কিলোগ্রাম) দানা ভক্ষণ করিয়ে থাকি। ওরই উপর আরোহণ করে আমি তোমাকে হত্যা করব।’ উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বলতেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমিই তোমাকে হত্যা করব।’

[2] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড ৮৪ পৃঃ, যাদুল মাআদ, ২য় খন্ড ৭ পৃঃ।

[3] মুখতাসার সীরাতুর রাসূল (সাঃ) শায়খ আবূ আব্দুল্লাহ প্রণীত, ২৪০ পৃঃ।