আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ইচ্ছে ও কুরাইশদের প্রচেষ্টা (بين تدبير قريش وتدبير الله سبحانه وتعالى):

তারা তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এমন জঘন্য পরামর্শ সভা অত্যন্ত গোপনে করে যাতে কার্যসিদ্ধির আগ পর্যন্ত কেউ জানতে না পারে। তারা তাদের এতদিন যাবৎ প্রতিরোধের ধরণে পরিবর্তন নিয়ে আসে যা পূর্বের সব সিদ্ধান্তের চেয়ে নিতান্ত ভয়াবহ ও লোমহর্ষক। এটা ছিল কুরাইশদের চক্রান্ত। অন্যদিকে আল্লাহ তা’আলাও কৌশল অবলম্বন করলেন। তাদেরকে এমনভাবে ব্যর্থ করে দেয়া হলো যে তারা বুঝতেও পারল না। তখন জিবরাঈল (আঃ) মহান ও বরকতময় প্রভুর তরফ থেকে আল্লাহর বাণী নিয়ে তার সম্মুখে উপস্থিত হলেন এবং তাকে কুরাইশ মুশরিকদের ষড়যন্ত্রের কথা জনালেন। তিনি বললেন যে, ‘আপনার প্রভু পরওয়ারদেগার মক্কা থেকে হিজরত করার অনুমতি প্রদান করেছেন জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে হিজরতের সময় নির্ধারণ করে দিলেন এবং কুরাইশদের কিভাবে প্রতিহত করতে হবে তা বলে দিলেন। অতঃপর বললেন, আপনি এ যাবৎ যে শয্যায় শয়ন করে এসেছেন আজ রাত্রে সে শয্যায় শয়ন করবেন না।[1]

হিজরত সংক্রান্ত আল্লাহর বাণী প্রাপ্ত হওয়ার পর নাবী কারীম (ﷺ) ঠিক দুপুরে আবূ বাকর (রাঃ)-এর গৃহে তশরীফ আনয়ন করলেন। উদ্দেশ্য ছিল, হিজরতের সময় এবং পন্থা প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘আমরা আব্বাস (আবূ বাকর (রাঃ)-এর) বাড়ীতে ঠিক দুপুরে বসেছিলাম তখন এক ব্যক্তি এসে খবর দিল যে, নাবী কারীম (ﷺ) মাথা ঢেকে আগমন করছেন। এটা দিবা ভাগের এমন সময় ছিল যে সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাধারণতঃ কোথাও যেতেন না। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন ‘আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কোরবান হোক, আপনি এ সময় কোন্ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনার জন্য আগমন করেছেন?’

‘আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ভিতরে আসার অনুমতি চাইলেন, তাঁকে ভিতরে আসার অনুমতি দেয়া হলে তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন। তারপর আবূ বাকর (রাঃ)-কে বললেন, ‘আপনার কাছে যে সকল লোক রয়েছে তাদের সরিয়ে দিন।’

আবূ বাকর বললেন, ‘যথেষ্ট, আপনার গৃহিনী ছাড়া এখানে আর কেউই নেই। আপনার প্রতি আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)।

তিনি বললেন, ‘ভাল, হিজরত করার জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীনের তরফ থেকে আমাকে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।

আবূ বাকর বললেন, ‘সাথে... হে আল্লাহর (ﷺ)! আপনার প্রতি আমার পিতামাতা উৎসর্গ হোক।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘হ্যাঁ’’।

তারপর হিজরতের সময় সূচী নির্ধারণ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপন গৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং রাতের আগমনের জন্য প্রতীক্ষারত রইলেন। তিনি (ﷺ) এ দিন এমনভাবে প্রস্তুতি নিলেন যে, হিজরতের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রস্তুতির কথা কেউ জানতে পারল না। নচেৎ জানতে পারলে অন্য যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কুরাইশরা দ্বিধাবোধ করতো না।

[1] ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড ৪৮২ পৃঃ। যাদুল মাদ ২য় খণ্ড ৫২ পৃঃ।