কথাবার্তার পর্যায় এবং আব্বাস (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে সমস্যার নাজুকতার ব্যাখ্যা (بِدَايَةُ الْمُحَادَثَةِ وَتَشْرِيْحُ الْعَبَّاس لِخُطُوْرَةِ الْمَسْئُوْلِيَةِ):

সভার প্রাথমিক কাজকর্ম সম্পন্ন হলে ধর্মীয় ও সামরিক সাহায্যকল্পে সন্ধি ও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরির জন্য কথোপকথন আরম্ভ হল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চাচা আব্বাস (রাঃ) সর্বপ্রথম মুখ খুললেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তাদের সম্পাদিত চুক্তির ফলে তাদের উপর যে দায়িত্ব কর্তব্য আরোপিত হয়েছে এবং পরিণামে যে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে তা ব্যাখ্যা করা।

কাজেই তিনি বললেন, ‘হে খাযরাজের লোকজন! (আরববাসীগণের নিকট আনসারদের মধ্যে দু’গোত্রের অর্থাৎ খাযরাজ এবং আউস, খাযরাজ নামেই পরিচিত ছিল) আমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে তোমরা সকলেই ওয়াকেফহাল রয়েছ। ধর্মের ব্যাপারে আমরা যে মনোভাব পোষণ করি আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজনও একই মনোভাব পোষণ করে। আমরা তাঁকে তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করে রেখেছি। তিনি এখন আপন আবাসস্থানে নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে মানসম্মান, শক্তি সামর্থ্য এবং হেফাজতের সঙ্গেই রয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি তোমাদের সেখানে গিয়ে তোমাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ। এ অবস্থায় যদি এমনটি হয় যে, তোমরা তাঁর কাজকর্মে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করবে এবং তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের অনিষ্ট থেকে তাঁকে রক্ষা করার জন্য সচেষ্ট থাকবে তাহলে সব ঠিক আছে, আপত্তির কোন কিছু নেই। তোমরা জিম্মাদারীর যে গুরুভার গ্রহণ করতে যাচ্ছ আশা করি তার গুরুত্ব সম্পর্কে তোমাদের সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। কিন্তু এমনটি যদি হয় যে, তোমরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে আলাদা হয়ে যাবে কিংবা প্রয়োজনে তোমরা তাঁর কোন উপকারে আসবে না তাহলে তাঁকে এখনি ছেড়ে দাও। কেননা, তিনি নিজ আবাসিক নগরীতে আপন সম্প্রদায়ের মধ্যে মান-সম্মান ও হেফাজতের সঙ্গেই রয়েছেন।

কা‘ব (রাঃ) বলেছেন যে, ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, ‘আমরা আপনার কথা শুনেছি।’ তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে লক্ষ্য করে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি কথাবার্তা বলুন এবং নিজের জন্য ও নিজ প্রভূর জন্য যে সন্ধি ও চুক্তি করতে পছন্দ করেন তা করুন’’।[1]

কা‘ব (রাঃ)-এর উত্তর থেকে এটা সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, এ বিরাট জিম্মাদারী বহন করা এবং এর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক পরিণতির ব্যাপারে আনসারগণের দৃঢ় সংকল্প, বাহাদুরী, ঈমান, উদ্যম ও খুলুসিয়াত কোন পর্যায়ের ছিল।

এর পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কথাবার্তা বললেন। তিনি (ﷺ) প্রথমে কুরআন শরীফ থেকে কিছু অংশ তিলাওয়াত করলেন, আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত পেশ করলেন এবং ইসলামের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করলেন। এরপর আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করলেন।

[1] ইবনে হিশাম ১/ ৪৪২ পৃঃ।