ইসলাম সকল যুগের, সকল ভাষার, সকল সমাজের মানুষদের জন্য আল্লাহর মনোনীত ধর্ম, দীন বা জীবন ব্যবস্থা। এখানে ভাষা, দেশ, বর্ণ, গোত্র, বংশ, যুগ ইত্যাদির কারণে কোনো মর্যাদার আধিক্য বা কমতি নেই। কুরআন ও হাদীসে একথা বারংবার বলা হয়েছে। দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে জাতিগত, ভাষাগত, পেশাগত ইত্যাদি বিভেদের সুযোগ নিয়ে অনেক জালিয়াত কারো পক্ষে ও কারো বিপক্ষে বিভিন্ন হাদীস বানিয়েছে। আরবী ভাষার পক্ষে ও ফার্সীর বিপক্ষে কেউ কথা বানিয়েছে। কেউ উল্টো করেছে। অনুরূপভাবে আরব, পার্সিয়ান, তুর্কি, নিগ্রো, রোমান, গ্রীক, আফ্রিকান... বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের পক্ষে ও বিপক্ষে হাদীস বানানো হয়েছে। স্বর্ণকার, তাতি, জেলে, নাপিত... ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার পক্ষে ও বিপক্ষে হাদীস বানানো হয়েছে।
সনদ বিচার ও নিরীক্ষায় এগুলোর জালিয়াতি ধরা পড়েছে। এছাড়া এগুলো ইসলামী মূল্যবোধের বিরোধী। মানুষের মর্যাদার একমাত্র মাপকাঠি ‘তাকওয়া’ বা সততা। পেশা, ভাষা, বর্ণ, গোত্র, বংশ ইত্যাদির ভিত্তিতে কাউকে নিন্দা করা বা কাউকে কারো থেকে ছোট বলা কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিরোধী। এ জাতীয় জাল হাদীসগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. আরব জাতিকে তিনটি কারণে ভালবাসবে
আরবী কুরআনের ভাষা এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর ভাষা। এজন্য স্বভাবতই সকল মুমিন আরবী ভাষাকে ভালবাসেন। ভাষার প্রতি এ স্বাভাবিক ভালবাসাকে কেন্দ্র করে জালিয়াতগণ আরব জাতিকে ভালবাসার ফযীলতে অনেক হাদীস বানিয়েছে। এ অর্থে একটি প্রচলিত হাদীস:
أَحِبُّوْا الْعَرَبَ لِثَلاثٍ؛ لأَنِّيْ عَرَبِيٌُّ، وَالْقُرْآنُ عَرَبِيٌّ، وَلِسَانُ أَهْلِ الْجَنَّةِ عَرَبِيٌّ
‘‘তিনটি কারণে আরব জাতিকে (আরবদেরকে) ভালবাসবে: আমি আরবী, কুরআনের ভাষা আরবী এবং জান্নাতের ভাষা আরবী।’’
এ কথাকে অধিকাংশ মুহাদ্দিস বানোয়াট এবং কেউ কেউ যয়ীফ হিসাবে গণ্য করেছেন। সনদ বিচারে কথাটি বানোয়াট বলেই বুঝা যায়।[1]