হাদীসের নামে জালিয়াতি শুভাশুভ, সাজসজ্জা, পানাহার ও বিবিধ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

আবু দাউদ ও তিরমিযী উভয়ে তাঁদের উস্তাদ কুতাইবা ইবনু সাঈদের সুত্রে একটি হাদীস সংকলিত করেছেন। তাঁরা উভয়েই বলেন: কুতাইবা আমাদেরকে বলেছেন, তাকে মুহাম্মাদ ইবনু রাবীয়াহ হাদীসটি আবুল হাসান আসকালানী নামক এক ব্যক্তি থেকে, তিনি আবু জা’ফর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু রুকানাহ নামাক এক ব্যক্তি থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে বলেছেন, রুকানার সাথে রাসূলুল্লাহ কুস্তি লড়েন এবং তিনি রুকানাকে পরাস্ত করেন। রুকানা আরো বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ()-কে বলতে শুনেছি:

إِنَّ فَـرْقَ مَا بَـيْـنَـنَا وَبَيْنَ الْمُشْرِكِينَ الْعَمَـائِمُ عَلَى الْقَلانِسِ

‘‘আমাদের এবং মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য টুপির উপরে পাগড়ী।’’[1]

তিরমিযী হাদীসটি উল্লেখ করে এর সনদটি যে মোটেও নির্ভরযোগ্য নয় তা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, হাদীসটির একমাত্র বর্ণনাকারী আবুল হাসান আসকালানী। এ ব্যক্তিটির পরিচয় কেউ জানে না। শুধু তাই নয়। তিনি দাবী করেছেন যে, তিনি রুকানার পুত্র থেকে হাদীসটি শুনেছেন। রুকানার কোনো পুত্র ছিল কিনা, তিনি কে ছিলেন, কিরূপ মানুষ ছিলেন তা কিছুই জানা যায় না। এজন্য হাদীসটির সনদ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

ইমাম তিরমিযীর উস্তাদ, ইমামুল মুহাদ্দিসীন ইমাম বুখারীও তাঁর ‘‘আত-তারীখুল কাবীর’’ গ্রন্থে এ হাদীসটির দুর্বলতা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: হাদীসটির সনদ অজ্ঞাত অপরিচিত মানুষদের সমন্বয়। এছাড়া এদের কেউ কারো থেকে কোন হাদীস শুনেছে বলেও জানা যায় না।[2] ইমাম যাহাবী, আজলূনী প্রমুখ একে মাউযূ বা বানোয়াট বলে গণ্য করেছেন।[3]

এছাড়া আব্দুর রাঊফ মুনাবী, মোল্লা আলী কারী, আব্দুর রাহমান মুবারাকপুরী, শামছুল হক আযীমাবাদী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস আলোচনা করেছেন যে, এ হাদীসের অর্থ বাস্তবতার বিপরীত।[4] হাদীসটির দুইটি অর্থ হতে পারে: এক- মুশরিকগণ শুধু টুপি পরিধান করে আর আমরা পাগড়ী সহ টুপি পরিধান করি। দুই- মুশরিকগণ শুধু পাগড়ী পরিধান করে আর আমরা টুপির উপরে পাগড়ী পরিধান করি। উভয় অর্থই রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবীগণের কর্মের বিপরীত। কারণ বিভিন্ন হাদীসে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, তাঁরা কখনো শুধু টুপি পরতেন এবং কখনো শুধু পাগড়ী পরতেন।

ইমাম গাযালী (৫০৫হি) বলেন: ‘‘রাসূলুল্লাহ () কখনো পাগড়ীর নিচে টুপি পরিধান করতেন। কখনো পাগড়ী ছাড়া শুধু টুপি পরতেন। কখনো কখনো তিনি মাথা থেকে টুপি খুলে নিজের সামনে টুপিটিকে সুতরা বা আড়াল হিসাবে রেখে সেদিকে মুখ করে নামায আদায় করেছেন।’’[5]

শামসুদ্দীন ইবনুল কাইয়িম (৭৫১হি:) বলেন: ‘‘রাসূলুল্লাহ পাগড়ী পরিধান করতেন এবং তার নিচে টুপি পরতেন। তিনি পাগড়ী ছাড়া শুধু টুপিও পরতেন। আবার টুপি ছাড়া শুধু পাগড়ীও পরতেন।’’[6]

[1] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/২৪৭; আবু দাউদ, আস-সুনান ৪/৫৫।

[2] বুখারী, আত-তারীখুল কাবীর ১/৮২।

[3] হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৩/৫১১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর ৫/৭১; বাইহাকী, শুআবুল ঈমান ৫/১৭৫; যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ৬/১৪৫; ইবনু হাজার, তালখীসুল হাবীর ৪/১৬২; আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৯৫।

[4] মুবারাকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৩৯৩; আযীমাবাদী, আউনুল মা’বুদ ১১/৮৮।

[5] গাযালী, এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ২/৪০৬।

[6] ইবনুল কাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/১৩০।