এখানে আরো লক্ষণীয় যে, সন্তান-সন্ততি বা পরিবারবর্গ ছাড়া অন্য কেউ দান করলে মৃত ব্যক্তি সাওয়াব পাবেন বলে কোনো হাদীসে কোনোভাবে বর্ণিত হয় নি। এ বিষয়ে যা কিছু বলা হয় বা করা হয় সবই আলিমদের মতামত ভিত্তিক, অথবা মনগড়া ও বানোয়াট।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে মুমিনগণের দায়িত্ব হলো মৃত মুমিনগণের জন্য দোয়া ও ইসতিগফার করা। আর সন্তানদের দায়িত্ব হলো মৃত পিতামাতার জন্য দোয়া ও ইসতিগফার ছাড়াও দান করা। সন্তান-সন্ততি ছাড়া অন্যান্য মানুষ দোয়া করলে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবেন বলে আমরা কুরআন ও হাদীসের আলোকে নিশ্চিত জানতে পারি। কিন্তু সন্তান ছাড়া কেউ দান করলে মৃত ব্যক্তি সাওয়াব পাবেন বলে কোনো সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয় নি।
তবে অধিকাংশ আলিম মনে করেন যে, সন্তানের দানের সাওয়াব যেহেতু মৃত ব্যক্তি লাভ করবেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সেহেতু আমরা আশা করতে পারি যে, অন্যান্য মানুষের দানের সাওয়াবও মৃত ব্যক্তি পেতে পারেন। কোনো কোনো আলিম বলেন যে, এক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীসের বাইরে আশা পোষণের কোনো ভিত্তি বা যুক্তি নেই। কুরআন ও হাদীসে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে কোনো মুসলিম যে কেনো মৃত মুসলিমের জন্য দোয়া করবেন। আর সন্তানসন্ততি পিতামাতার জন্য দোয়া ছাড়াও দান করবে। আমাদের এর বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।[1]
অধিকাংশ আলিমের ‘আশা’ মেনে নিলেও এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। যেহেতু কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারছি যে, দোয়া ও ইসতিগফার করলেই মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবেন এবং দোয়ার বিনিময়েই তাকে নেকি ও সাওয়াব দান করা হবে, সেহেতু কুরআন-হাদীসের নির্দেশের বাইরে দান করার প্রয়োজনীয়তা কী? যখন আমরা নিশ্চিতরূপে জানতে পারছি যে, ‘হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তিকে আপনি ক্ষমা করুন, তাঁকে মর্যাদা দান করুন... ইত্যাদি’ বলে দোয়া করলেই সে ব্যক্তি উপকৃত হবেন, তখন আমাদের প্রয়োজন কী যে আমরা বলব: ‘‘হে আল্লাহ, আমার এ দানের সাওয়াব অমুককে প্রদান করুন এবং এর বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করুন, মর্যাদা বা নেকি দান করুন’’?
সম্ভবত আমরা মনে করি যে, দান-সাদকাসহ দোয়া করলে মৃতব্যক্তি বেশি সাওয়াব লাভ করবে। ‘গাইবী’ বিষয়ে নিজেরা ‘মনে’ করার চেয়ে ‘ওহী’-র উপর নির্ভর করা উত্তম। কুরআন ও হাদীসে দোয়া ও ইসতিগফারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে আজীবন অগণিত মুমিন-মুমিনার জন্য দোয়া ও ইসতিগফার করেছেন, কিন্তু কখনোই শেখান নি যে, কবর যিয়ারত বা অন্য সময়ে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া-ইসতিগফারের পূর্বে, পরে বা অন্য সময়ে কিছু দান-সাদকা বা খানা বিতরণ করা ভাল। তিনি নিজেও কখনো তা করেন নি এবং কাউকে তা শিক্ষাও দেন নি। সাহাবীগণও মৃতদের জন্য দোয়া-ইসতিগফার করেছেন এবং কবর যিয়ারত করেছেন, কিন্তু কখনোই কবরের পাশে বা অন্য কোথাও মৃতদের ‘সাওয়াব রেসানী’-র জন্য দান-খয়রাত করেছেন বলে সহীহ সনদে বর্ণিত হয় নি। আমাদের উচিত সুন্নাতের শিক্ষার মধ্যে থাকা। সকল মুমিনই নিজের সাওয়াব অর্জন, বিপদ মুক্তি ও বরকতের জন্য সর্বদা বেশি বেশি দান-সাদকা করতে চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি সন্তান-সন্ততি তাদের পূর্বপুরুষদের জন্য দোয়া, ইসতিগফার ও দান করবে। আর অন্য সকল মুসলমান সকল মৃত মুমিন-মুমিনার জন্য দোয়া ও ইসতিগফার করবে।