হাদীসের নামে জালিয়াতি আহল বাইত, সাহাবী-তাবিয়ী ও উম্মাত ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
১০. আলীকে ডাক, বিপদে তোমাকে সাহায্য করবে!

মোল্লা কারী বলেন, শিয়াদের বানানো একটি ঘৃণ্য জাল ও মিথ্যা কথা:

نَادِ عَلِيًّا مُظْهِرَ الْعَجَائِبِ، تَجِدْهُ عَوْناً لَكَ فِيْ النَّوَائِبِ، بِنُبُوَّتِكَ يَا مُحَمَّدُ، بِوَلاَيَتِكَ يَا عَلِيُّ

‘‘আলীকে ডাক, সে আশ্চর্য কর্মাদি প্রকাশ করে, তাকে তুমি বিপদে আপদে তোমার সহায়ক পাবে। হে মুহাম্মাদ, আপনার নবুয়তের ওসীলায়। হে আলী, আপনার বেলায়াতের ওসীলায়।’’[1]

বস্ত্তত, আমাদের সমাজে প্রচলিত সকল কুসংস্কার, শির্ক ও বিদ‘আতের উৎস হচ্ছে শিয়া মতবাদ ও শিয়া সম্প্রদায়। কুরআন কারীম ও সুস্পষ্ট সুন্নাতকে পরিত্যাগ করে তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বংশের ১২ বা ৭ ইমামের নামে ভক্তিতে বাড়াবাড়ি করেন। ফলে এসকল নেককার মানুষের নামে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা ও ঈমান বিধ্বংসী কথা তাদের মধ্যে প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করা ইসলামের শত্রুদের পক্ষে সহজ হয়ে যায়। তাদের হৃদয়গুলো কুরআন কারীম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাতের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে গিয়েছে। হৃদয়ের মণিকোঠায় বসেছেন আলী ও তাঁর বংশের ইমামগণ। তাঁদের নামে জালিয়াতগণ যা বলেছে সবই তারা ভক্তিভরে মেনে নিয়েছেন এবং এ মিথ্যাগুলোর ভিত্তিতে কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিকৃত ব্যাখ্যা করেছেন।

এ সম্প্রদায়ের কঠিনতম অপরাধগুলির অন্যতম হলো, এরা আলী (রা) ও তাঁর বংশের ইমামদেরকে ‘ঈশ্বর’ বানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ‘ঈশ্বরত্ব’ বা ‘ঐশ্বরিক শক্তি’ কল্পনা করেছে। এ কথাটি তাদের মধ্যে প্রচলিত একটি শির্ক। যেখানে কুরআন ও সুন্নাহ বারংবার শেখাচ্ছে সকল বিপদে আপদে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার, সেখানে এরা বানিয়েছে আলীর কাছে সাহায্য চাওয়ার কথা। বিপদে আপদে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে অলৌকিক সাহায্য প্রার্থনা করাই হলো সকল শিরকের মূল। এ বিষয়ে আমি ‘রাহে বেলায়াত’ নামক পুস্তকে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

এ জঘন্য মিথ্যা কথাটির ভিত্তিতে শিয়াগণ একটি দোয়া বানিয়েছে, যা দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সমাজে অনেক ‘সুন্নী’ মুসলিমের মধ্যেও প্রচলিত। এ শিরক-পূর্ণ দোয়াটি প্রচলিত একটি পুস্তক থেকে উদ্ধৃত করছি: ‘‘দোয়ায়ে নাদে আলী। তাহাজ্জুদ নামাজের পর আগে পরে দরূদ শরীফ পড়ে এ দোয়া যত বেশী পারা যায় পড়ে দোয়া করিলে মনের বাসনা পূর্ণ হয় ও কঠিন বিপদ দূর হয়ে থাকে। বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। নাদে আলিয়ান মাজহারাল আজায়েবে তাজেদহু আউনাল্লাকা ফিন্নাওয়ায়েবে ওয়াকুল্লি হাম্মিন ওয়া গাম্মিন সাইয়ানজালি বি-আজমা-তিকা ইয়া আল্লাহ বিনুবুওয়াতিকা ইয়া মুহাম্মাদ বি-বিলায়াতিকা ইয়া আলী, ইয়া আলী, ইয়া আলী, লা ফাতা ইল্লা আলী, লা সাই- ফা ইল্লা জুল ফাক্কারে, নাছরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারীব, ওয়া বাশ্শিরিল মুমেনীন, ফাল্লাহু খাইরুন হাফিজাও ওয়া হুয়া আরহামার রাহিমিন।’’[2]

শিয়াদের রচিত এ দোয়াটি নিরেট শির্ক। অথচ তা আমাদের ধার্মিক মানুষদের মধ্যে প্রচলিত। কোনো সরল প্রাণ বুযুর্গ হয়ত দোয়াটি শুনে অর্থ না জেনে বা অসাবধানতা বশত তা আমল করেছিলেন। এখন আপনি যতই বলুন একথা শিরক, একথা শিয়াদের বানানো, সকল মুহাদ্দিস এ বিষয়ে একমত... ইত্যাদি, আপনার কোনো কথাই বাজারে ঠাঁই পাবে না। একটি কথাতেই সব নষ্ট হয়ে যাবে: অমুক বুযুর্গ তা পালন করেছেন, তিনি কি কিছুই বুঝেন নি?

[1] মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার, পৃ. ২৬৫-২৬৬; আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৪৮৯।

[2] মো. বসির উদ্দীন আহমাদ, নেক আমল, পৃ. ১৮৬।