হাদীসের নামে জালিয়াতি আহল বাইত, সাহাবী-তাবিয়ী ও উম্মাত ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
২. বিষাদ সিন্ধু ও অন্যান্য প্রচলিত পুঁথি ও বই

বিষাদ সিন্ধু বইয়ের ৯৫% কথা মিথ্যা। বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস। কোনো ইতিহাস বা ধর্মীয় পুস্তক নয়। উপন্যাস হিসাবে এর মূল্যায়ন হবে। কিন্তু দুঃখজনক কথা যে, সমাজের সাধারণ মানুষেরা এ ধরনের বইয়ের কথাগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। বিশেষত রাসূলুল্লাহ ()-কে জড়িয়ে যে সকল মিথ্যা কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকা দরকার। মু‘আবিয়াকে ইয়াযীদ বিষয়ক (রা) ভবিষ্যদ্বাণী, মুহাম্মদ হানুফার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী, হুসাইন (রা)-এর গলায় বারংবার ছুরির আঘাতে ক্ষত না হওয়া... তাঁর হত্যাকারীর বেহেশতে নেওয়া ইত্যাদি সকল কথা বানোয়াট। মুহাম্মাদ হানুফা (মুহাম্মাদ ইবনু আলী, ইবনুল হানাফিয়্যাহ) বিষয়ক, ইয়াযিদের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ, তাঁর পাহাড়ের মধ্যে আবদ্ধ থাকা ইত্যাদি কথা সবই মিথ্যা।

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, ‘বিষাদ সিন্ধু’ জাতীয় পুস্তকাদি, পুঁথি সাহিত্য ও ‘খাইরুল হাশর’ জাতীয় পুস্তকগুলোই আমাদের সমাজে মিথ্যা ও জাল হাদীস প্রচারের অন্যতম কারণ। এর পাশাপাশি রয়েছে ‘বার চাঁদের ফযীলত’, ‘নেক আমল’, ‘মকছুদুল মুমিনীন’, ‘নেয়ামুল কোরান’, ‘নাফেউল খালায়েক’ জাতীয় পুস্তক। সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রয়োজনীয় ইসলামী শিক্ষা প্রসারে এ সকল পুঁথি-পুস্তকের অবদান অনস্বীকার্য। এ সকল পুস্তকের সম্মানিত লেখকগণ তাঁদের যুগের ও সময়ের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে সাধ্যমত দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এরূপ কল্যাণময় খিদমতের পাশাপাশি জাল হাদীস, ভিত্তিহীন কথাবার্তা, বিভিন্ন প্রকারের কুসংস্কার ও ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণার প্রসারেও এগুলো অবদান রেখেছে। মহান আল্লাহ তাদের খিদমাত কবুল করুন এবং ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করুন।

এক সময় বাংলার ‘যোগ্য’ আলিমগণ বাংলাভাষায় পুস্তকাদি রচনা ‘দূষণীয়’ বলে গণ্য করতেন। এ ধ্বংসাত্মক বিভ্রান্তিই সমাজে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য আলিমদের রচিত ভুলভ্রান্তিপূর্ণ পুস্তক প্রচলনের সুযোগ করে দেয়।