২৫. মুহূর্তের মধ্যে মি’রাজের সকল ঘটনা সংঘটিত হওয়া

প্রচলিত একটি কথা, রাসূলুল্লাহ ()-এর মি’রাজের সকল ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে সংঘটিত হয়ে যায়। তিনি সকল ঘটনার পর ফিরে এসে দেখেন পানি গড়ছে, শিকল নড়ছে, বিছানা তখনো গরম রয়েছে... মি’রাজে ২৭ বৎসর অতিবাহিত হয় ... ইত্যাদি। এ সকল কথা ভিত্তিহীন বলে প্রতীয়মান।

আমি ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, সিহাহ সিত্তাহ-সহ প্রায় ২০ খানা হাদীস গ্রন্থের মি’রাজ বিষয়ক হাদীসগুলো আমি অধ্যয়ন করার চেষ্টা করেছি। অধিকাংশ হাদীসে মি’রাজে ভ্রমণ, দর্শন ইত্যাদি সবকিছু সমাপ্ত হতে কত সময় লেগেছিল সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু উল্লেখ করা হয় নি। তাবারানী সংকলিত একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ () বলেন,

ثُمَّ أَتَيْتُ أَصْحَابِيْ قَبْلَ الصُّبْحِ بِمَكَّةَ فَأَتَانِيْ أَبُوْ بَكْرٍ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيْنَ كُنْتَ اللَّيْلَةَ فَقَدِ الْتَمَسْتُكَ فِيْ مَكَانِكَ فَلَمْ أَجِدْكَ

‘‘অতঃপর প্রভাতের পূর্বে আমি মক্কায় আমার সাহাবীদের কাছে ফিরে আসলাম। তখন আবূ বাক্র আমার কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি গত রাতে কোথায় ছিলেন? আমি আপনার স্থানে আপনাকে খুঁজেছিলাম, কিন্তু আপনাকে পাই নি।... তখন তিনি মি’রাজের ঘটনা বলেন।’’[1]

এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে রাসূলুল্লাহ () প্রথম রাতে মি’রাজে গমন করনে এবং শেষ রাতে ফিরে আসেন। সারা রাত তিনি মক্কায় অনুপস্থিত ছিলেন। এরূপ আরো দু একটি হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, মি’রাজের ঘটনায় রাসুলুল্লাহ () রাতের কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েছিলেন। [2]

মি’রাজের ঘটনায় কত সময় লেগেছিল তা কোনো গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় নয়। এ মহান অলৌকিক ঘটনা আল্লাহ সময় ছাড়া বা অল্প সময়ে যে কোনো ভাবে তাঁর মহান নবীর (ﷺ) জন্য সম্পাদন করতে পারেন। কিন্তু আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, হাদীসে যা বর্ণিত হয় নি তা রাসূলুল্লাহ ()-এর নামে না বলা। তিনি ফিরে এসে দেখেন পানি গড়াচ্ছে, শিকল নড়ছে, বিছানা তখনো গরম রয়েছে ইত্যাদি কথা কোনো সহীহ বা যয়ীফ সনদে বর্ণিত হয়েছে বলে জানা যায় না। মুহাম্মাদ ইবনুস সাইয়িদ দরবেশ হূত (১২৭৬ হি) বলেন:

ذَهَابُهُ وَرُجُوْعُهُ لَيْلَةَ الإِسْرَاءِ وَلَمْ يَبْرُدْ فِرَاشُهُ، لَمْ يَثْبُتْ ذَلِكَ.

‘‘রাসূলুল্লাহ () মিরাজের রাত্রিতে গমন করেন এবং ফিরে আসেন কিন্তু তখনো তার বিছান ঠান্ডা হয় নি, এ কথাটি প্রমাণিত নয়।’’[3]

[1] হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৭৩-৭৪। হাদীসটির সনদের একজন রাবীকে কেউ কেউ নির্ভরযোগ্য বলেছেন এবং কেউ কেউ দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন।

[2] হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৭৫-৭৬; ইবনু হাজার, আল-মাতালিব ৪/৩৮৯-৩৮১।

[3] দরবেশ হূত, আসনাল মাতালিব, পৃ. ১১২।