পূর্ববর্তী সৃষ্টি ও পূর্ববর্তী নবীগণ বিষয়ে কুরআন সংক্ষেপ আলোচনা করেছে। শুধু যে বিষয়গুলোতে মানুষের ইহলৌকিক বা পারলৌকিক শিক্ষা রয়েছে সেগুলোই আলোচনা করা হয়েছে। সৃষ্টি ও নবীগণের ঘটনা ইহূদীদের মধ্যে অনেক বিস্তারিতভাবে প্রচলিত। কুরআনে যেহেতু এ সকল বিষয়ে বিশদ বর্ণনা নেই, সে জন্য সাহাবী-তাবিয়ীগণের যুগ থেকেই অনেক মুফাস্সির এ সকল বিষয়ে ইহূদীদের বর্ণনা কৌতুহলের সাথে শুনতেন। পাশাপাশি তাবিয়ী পর্যায়ে অনেক ইহূদী আলিম ইসলাম গ্রহণ করার পরে এ সকল বিষয়ে তাদের সমাজে প্রচলিত অনেক গল্প কাহিনী মুসলিমদের মধ্যে বলেছেন।
এ সকল গল্প-কাহিনী গল্প হিসেবে শুনতে বা বলতে মূলত ইসলামে নিষেধ করা হয় নি। তবে এগুলোকে সত্য মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো কোনো মুফাস্সির ও ঐতিহাসিক পূর্ববর্তী নবীগণ বিষয়ক বিভিন্ন আয়াতের তাফসীরে ও তাদের জীবন কেন্দ্রিক ইতিহাস বর্ণনায় ইহূদী-খৃস্টানগণের বিকৃত বাইবেল ও অন্যান্য সত্য-মিথ্যা গল্পকাহিনীর উপর নির্ভর করেছেন। প্রথম যুগগুলোতে মুসলিমগণ গল্প হিসেবেই এগুলো শুনতেন। তবে পরবর্তী যুগে এ সকল কাহিনীকে মানুষেরা সত্য মনে করেছেন। কেউ কেউ এগুলোকে হাদীস বলে প্রচার করেছেন।
কুরআন বলেছে, ইহূদী ও খৃস্টানগণ তাওরাত, যাবূর ও ইঞ্জিলকে বিকৃত করেছে। অনেক কথা তারা নিজেরা রচনা করে আল্লাহর কালাম বলে চালিয়েছে। এজন্য হাদীস শরীফে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদের কথা বর্ণনা করা যাবে, তবে শর্ত হলো, কুরআনের সত্যায়ন ছাড়া কোনো কিছুকে সত্য বলে গ্রহণ করা যাবে না। সাহাবীগণ ইহূদী-খৃস্টানদের তথ্যের উপর নির্ভর করার নিন্দা করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রা) বলেন:
كَيْفَ تَسْأَلُونَ أَهْلَ الْكِتَابِ عَنْ شَيْءٍ وَكِتَابُكُمْ الَّذِي أُنْزِلَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ أَحْدَثُ تَقْرَءُونَهُ مَحْضًا لَمْ يُشَبْ وَقَدْ حَدَّثَكُمْ أَنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ بَدَّلُوا كِتَابَ اللَّهِ وَغَيَّرُوهُ وَكَتَبُوا بِأَيْدِيهِمْ الْكِتَابَ وَقَالُوا هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلا أَلاَ يَنْهَاكُمْ مَا جَاءَكُمْ مِنْ الْعِلْمِ عَنْ مَسْأَلَتِهِمْ؟
‘‘কিভাবে তোমরা ইহূদী খৃস্টানদেরকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা কর? ‘‘অথচ তোমাদের পুস্তক (অর্থাৎ কুরআন) যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপরে অবতীর্ণ হয়েছে তা নবীনতর, তোমরা তা বিশুদ্ধ অবস্থায় পাঠ করছ, যার মধ্যে কোনোরূপ বিকৃতি প্রবেশ করতে পারে নি। এ কুরআন তোমাদেরকে বলে দিয়েছে যে, পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের অনুসারীগণ (ইহূদী, খৃস্টান ও অন্যান্য জাতি) আল্লাহর পুস্তককে (তাওরাত-ইঞ্জিল ইত্যাদি) পরিবর্তন করেছে এবং বিকৃত করেছে। তারা স্বহস্থে পুস্তক রচনা করে বলেছে যে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত। পার্থিব সামান্য স্বার্থ লাভের জন্য তারা এরূপ করেছে। তোমাদের কাছে যে জ্ঞান আগমন করেছে (কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান) তা কি তোমাদেরকে তাদেরকে কিছু জিজ্ঞাসা করা থেকে নিবৃত করতে পারে না?’’[1]
এতকিছু সত্ত্বেও ক্রমান্বয়ে মুসলিম সমাজে অগণিত ‘ইসরাঈলীয় রেওয়ায়াত’ প্রবেশ করতে থাকে। পরবর্তী যুগে মুসলিমগণ এগুলোকে কুরআনের বা হাদীসের কথা বলেই বিশ্বাস করতে থাকেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এই বইয়ের পরিসরে সম্ভব নয়। এজন্য সংক্ষেপে কিছু বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করছি। আল্লাহর দয়া ও তাওফীক হলে এ বইয়ের পরবর্তী খন্ডগুলোতে এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করব।