হাদীসের নামে জালিয়াতি ৪. জালিয়াতি প্রতিরোধে মুসলিম উম্মাহ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৪. ৬. ৫. বিভিন্ন বর্ণনাকারীর বর্ণনার তুলনা

মুহাদ্দিসগণের নিরীক্ষার অন্যতম দিক ছিল রাবীর সতীর্থ বা ‘সহপাঠি’-গণের বর্ণনা সংগ্রহ ও তুলনা করে তার যর্থার্থতা নির্ণয় করা। তুলনা ও নিরীক্ষার এ প্রক্রিয়া ছিল তাঁদের সার্বক্ষণিক হাদীস চর্চার প্রধান বৈশিষ্ট্য। হাদীস শোনার সাথে সাথে তাঁরা সে হাদীসকে স্মৃতিতে সংরক্ষিত অন্যদের বর্ণিত হাদীসগুলোর সাথে তুলনা করতেন। এরপর প্রয়োজন ও সুযোগ অনুসারে অন্যান্য রাবীদেরকে প্রশ্ন করতেন, তাঁদের বর্ণনার সাথে এ বর্ণনার তুলনা করতেন এবং প্রয়োজন মত পান্ডুলিপির সাথে মেলাতেন।

দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবু দাউদ তায়ালিসী (২০৪ হি) বলেন, আমরা একদিন আমাদের উস্তাদ শু’বা ইবনুল হাজ্জাজের (১৬০ হি) কাছে বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় সমসাময়িক রাবী হাসান ইবনু দীনার সেখানে আগমন করেন। শু’বা তাকে বলেন, আপনি এখানে বসুন। তিনি বসেন এবং হাদীস বলেন: আমাদেরকে হামীদ ইবনু হিলাল বলেছেন, তিনি মুজাহিদ (২১-১০৪ হি) থেকে, তিনি উমার ইবনুল খাত্তাবকে (২৩ হি) বলতে শুনেছেন...। হাদীসটি শুনে শু’বা অবাক হয়ে বলেন: মুজাহিদ উমার থেকে কোনো হাদীস শুনেছেন? এ কিভাবে সম্ভব? এসময় হাসান ইবনু দীনার উঠে চলে যান। অন্য একজন রাবী আবুল ফাদল বাহর ইবনু কুনাইয আস-সাক্কা (১৬০ হি) সেখানে আগমন করেন। শু’বা তাকে বলেন: আবুল ফাদল, আপনি হামীদ ইবনু হিলাল থেকে কোনো হাদীস শুনেছেন। তিনি বলেন, হ্যাঁ, শুনেছি। আমাদেরকে হামীদ ইবনু হিলাল বলেছেন, আমাদেরকে বনী আদী গোত্রের আবু মুজাহিদ নামের একজন আলিম বলেছেন, তিনি উমার ইবনুল খাত্তাবকে বলতে শুনেছেন...। তখন শু’বা বলেন: তাহলে এ হলো আসল বিষয়।[1]

হাসান ইবনু দীনার তার হাদীস বর্ণনায় ভুল করেছেন। প্রসিদ্ধ রাবী মুজাহিদের জন্ম উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) এর শাহাদতের দুই এক বছর পূর্বে। তিনি উমার (রা)-এর নিকট থেকে কোনো হাদীস শুনেন নি। তিনি ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে রাবীর নামে ভুল করেছেন। বাহর আস-সাক্কা-এর বর্ণনার সাথে তুলনা করে শু’বা বুঝতে পারলেন হাসান ইবনু দীনারের ভুল কোথায়। তিনি হামীদ ইবনু হিলালের উস্তাদের নাম ঠিকমত মনে রাখতে পারেন নি। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি ইচ্ছাকৃত মিথ্যা না বললেও অনিচ্ছাকৃত মিথ্যা বলেন। তিনি হাদীস নির্ভুলরূপে মুখস্থ রাখতে বা বর্ণনা করতে পারেন না।

তৃতীয় শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘নাকিদ’ মুহাদ্দিস ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন (২৩৩ হি) মূসা ইবনু ইসমাঈল (২২৩ হি)-এর কাছে গমন করে হাম্মাদ ইবনু সালামাহ ইবনু দীনারের (১৬৭ হি) বর্ণিত হাদীসগুলির পান্ডুলিপি পাঠ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মূসা বলেন: আপনি এ পান্ডুলিপিগুলো আর কারো কাছে শুনেন নি? ইয়াহইয়া বলেন: আমি ইতোপূর্বে হাম্মাদের ১৭ জন ছাত্রের কাছে তাদের কাছে সংকলিত হাম্মাদের বর্ণিত হাদীসগুলোর পান্ডুলিপি পড়ে শুনেছি। আপনি ১৮তম ব্যক্তি যার কাছে আমি হাম্মাদের বর্ণিত হাদীসগুলো পড়তে চাই। মূসা বলেন: কেন? ইয়াহইয়া বলেন: কারণ হাম্মাদ ইবনু সালামাহ হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে দুই এক স্থানে ভুল করতেন; এজন্য আমি তার ভুল এবং তার ছাত্রদের ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে চাই। যদি দেখি যে, হাম্মাদের সকল ছাত্রই একইভাবে বর্ণনা করছেন তাহলে বুঝতে পারব যে, হাম্মাদ এভাবেই বলেছেন এবং এক্ষেত্রে ভুল হলে তা হাম্মাদেরই ভুল। আর যদি দেখি যে, ছাত্রদের বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে তাহলে বুঝতে পারবে যে, এক্ষেত্রে ভুল ছাত্রের নিজের। এভাবে আমি হাম্মাদের নিজের ভুল এবং তাঁর ছাত্রদের ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারব।[2]

মুহাদ্দিসগণের ‘তুলনামূলক নিরীক্ষা’-র অগণিত উদাহরণ ও ব্যাখ্যা ইমাম মুসলিম বিস্তারিতভাবে তার ‘‘আত-তাময়ীয’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষায় একটি উদাহরণ এখানে পেশ করছি। তিনি বলেন:

হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ভুল হাদীসের সনদে বা মতনে হতে পারে। মতনে ভুলের একটি উদাহরণ। আমাকে হাসান হুলওয়ানী ও আব্দুল্লাহ ইবনু উবাইদুল্লাহ দারিমী বলেছেন, আমাদেরকে উবাইদুল্লাহ ইবনু আব্দুল মাজীদ বলেছেন, আমাদেরকে কাসীর ইবনু যাইদ বলেছেন, আমাকে ইয়াযিদ ইবনু আবী যিয়াদ বলেছেন, কুরাইব ইবনু আবী মুসলিম (৯৮ হি) থেকে, তিনি ইবনু আববাস থেকে, তিনি বলেন: আমি আমার খালা (নবী-পত্নী) মাইমূনার ঘরে রাত্রি যাপন করি। ... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত্রে উঠে ওযু করে (তাহাজ্জুদের) সালাতে দাঁড়ান। তখন আমি তাঁর ডান পার্শে দাঁড়াই। তিনি আমাকে ধরে তাঁর বাম পার্শে দাঁড় করিয়ে দেন।....’’

ইমাম মুসলিম বলেন: এ হাদীসটি ভুল। কারণ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ সহীহ বর্ণনায় এর বিপরীত কথা বর্ণনা করেছেন। তারা উল্লেখ করেছেন যে, ইবনু আববাস রাসূলুল্লাহ ﷺ বামে দাঁড়িয়েছিলেন এরপর তিনি তাঁকে তাঁর ডানদিকে দাঁড় করিয়ে দেন। ... আমি এখানে কুরাইব ইবনু আবী মুসলিম থেকে তাঁর অন্যান্য ছাত্রদের বর্ণনা এবং এরপর ইবনু আববাস থেকে ইবনু আববাসের অন্যান্য ছাত্রদের বর্ণনা উল্লেখ করব, যারা কুরাইবের সতীর্থ ছিলেন এবং তাঁরই অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

১. আমাদেরকে ইবনু আবী উমর বলেন, আমাদেরকে সুফিয়ান সাওরী বলেছেন, আমর ইবনু দীনার থেকে, কুরাইব থেকে ইবনু আববাস থেকে, তিনি মাইমূনার গৃহে রাত্রি যাপন করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ রাত্রে উঠে ওযু করে সালাতে দাঁড়ান। ইবনু আববাস বলেন: আমি তখন উঠে রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে ওযু করেন সেভাবে ওযু করে তাঁর কাছে আগমন করি এবং তাঁর বামে দাঁড়াই। তিনি তখন আমাকে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করিয়ে দেন।

২. মাখরামাহ ইবনু সুলাইমান কুরাইব থেকে, ইবনু আববাস থেকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন।

৩. সালামা ইবনু কুহাইল কুরাইব থেকে, ইবনু আববাস থেকে অনুরূপভাবে।

৪. সালিম ইবনু আবীল জা’দ কুরাইব থেকে, ইবনু আববাস থেকে এভাবেই।

৫. হুশাইম আবু বিশর থেকে সাঈদ ইবনু জুবাইর থেকে ইবনু আববাস থেকে।

৬. আইঊব সাখতিয়ানী, আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু জুবাইর থেকে, তাঁর পিতা সাঈদ ইবনু জুবাইর থেকে, ইবনু আববাস থেকে।

৭. হাকাম ইবনু উতাইবাহ সাঈদ ইবনু জুবাইর থেকে।

৮. ইবনু জুরাইজ আতা ইবনু আবী রাবাহ থেকে, ইবনু আববাস থেকে।

৯. কাইস ইবনু সা’দ আতা ইবনু আবী রাবাহ থেকে, ইবনু আববাস থেকে।

১০. আবু নাদরাহ (মুনযির ইবনু মালিক) ইবনু আববাস থেকে।

১১. শা’বী ইবনু আববাস থেকে।

১২. তাঊস ইকরামাহ থেকে, ইবনু আববাস থেকে।

ইমাম মুসলিম বলেন: এভাবে কুরাইব থেকে এবং ইবনু আববাসের অন্যান্য ছাত্রদের থেকে সহীহ বর্ণনায় প্রমাণিত হলো যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনু আববাসকে তাঁর বামে দাঁড় করিয়েছিলেন বলে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তা সন্দেহাতীতভাবে ভুল।[3]

পাঠ^ক, এখানে ইমাম মুসলিমের নিরীক্ষার গভীরতা ও প্রামণ্যতা লক্ষ্য করুন। তিনি এ একটি হাদীস ইবনু আববাস থেকে ১৩টি সূত্রে সংকলিত করে তুলনামূলক নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক বর্ণনাকে ভুল বা মিথ্যা বর্ণনা থেকে পৃথক করলেন। তিনি প্রথমে উল্লেখ করেছেন যে, ইয়াযিদ ইবনু আবী যিয়াদ নামক ‘রাবী’র সূত্রে বর্ণনা করলেন যে, কুরাইব তাকে বলেছেন, ইবনু আববাস তাকে বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডানে দাঁড়ান এবং তিনি তাঁকে বামে দাঁড় করিয়ে দেন। এরপর তিনি ইয়াযিদের উস্তাদ ‘কুরাইবের’ অন্যান্য ছাত্রদের বর্ণনার সাথে তা মেলালেন। কুরাইবের অন্য তিন জন প্রসিদ্ধ ছাত্র মাখরামাহ, সালামা ও সালিমের বর্ণনা ইয়াযিদের বর্ণনার বিপরীত। তাঁরা তিন জনেই বলছেন যে, কুরাইব বলেছেন, ইবনু আববাস বামে দাঁড়িয়েছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ () তাকে ডানে দাঁড় করান। এতে প্রমাণিত হলো যে, ইয়াযিদ ইবনু আবী যিয়াদ হাদীসটি মুখস্থ রাখতে পারেন নি।

ইমাম মুসলিম এখানেই থামেন নি। তিনি এরপর কুরাইব ছাড়াও ইবনু আববাসের অন্য ৫ জন ছাত্র: সাঈদ ইবনু জুবাইর, আতা ইবনু আবী রাবাহ, আবু নুদরাহ, শা’বী ও ইকরিমাহ থেকে হাদীসটির বিবরণ সংকলিত করে তার সাথে উপরের বর্ণনাটির তুলনা করলেন। এ ৫ জনের বর্ণনাও প্রমাণ করে যে, ইয়াযিদ ইবনু আবী যিয়াদ হাদীসটির ভুল বর্ণনা দিয়েছেন। এতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইবনু আববাস তাঁর সকল ছাত্রকে বলেছেন যে, তিনি প্রথমে বামে দাঁড়িয়েছিলেন, পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ডানে দাঁড় করিয়ে দেন। ইবনু আববাসের সকল ছাত্রের ন্যায় কুরাইবও তাঁর ছাত্রদেরকে এ কথায় বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু ইয়াযিদ তাঁর স্মৃতির দুর্বলতার কারণে হাদীসটি ভুলভাবে বর্ণনা করেছেন।

এরূপ ব্যাপক তুলনা ও নিরীক্ষা মুহাদ্দিসগণ প্রতিটি হাদীসের ক্ষেত্রে করতেন। হাদীস ও রাবীর বিধান বর্ণনায় তাঁদের প্রতিটি মতামতই এরূপ গভীর ও ব্যাপক তুলনা ও নিরীক্ষার ভিত্তিতে প্রদত্ত।

আরেকটি উদাহরণ দেখুন। দ্বিতীয় হিজরী শতকের মিশরের একজন প্রসিদ্ধ আলিম, ফকীহ ও মুহাদ্দিস ছিলেন আবু আব্দুর রাহমান আব্দুল্লাহ ইবনু লাহী‘য়াহ ইবনু উক্ববা আল-হাদরামী আল-গাফিকী (১৭৪ হি)। তিনি একজন প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণনাকারী ছিলেন এবং অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিসগণ তাঁর বর্ণিত সকল হাদীস তুলনামূলক নিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে দেখতে পেয়েছেন যে, তাঁর বর্ণিত হাদীসের মধ্যে ভুলের পরিমাণ খুবই বেশি। নাকিদ মুহাদ্দিসগণ তাঁর বর্ণিত হাদীসগুলো তাঁর কাছে থেকে বা তাঁর ছাত্রদের কাছে থেকে সংকলিত করেছেন। এরপর তিনি যেসকল উস্তাদের সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁদের অন্যান্য ছাত্রদের থেকে হাদীসগুলো সংগ্রহ ও সংকলন করেছেন। এরপর এ সকল বর্ণনার সনদ ও মতনের তারতম্য দেখতে পেয়ে ‘ইবনু লাহীয়াহ'-কে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বল বলে চিহ্নিত করেছেন।

ইবনু লাহীয়াহ-এর মারাত্মক ভুলের উদাহরণ হিসাবে ইমাম মুসলিম বলেন: আমাদেরকে যুহাইর ইবনু হারব বলেছেন, আমাদেরকে ইসহাক ইবনু ঈসা বলেছেন, আমাদেরকে আব্দুল্লাহ ইবনু লাহীয়াহ বলেছেন, মূসা ইবনু উকবাহ (১৪১ হি) আমার কাছে লিখে পাঠিয়েছেন, আমাকে বুসর ইবনু সাঈদ বলেছেন, যাইদ ইবনু সাবেত (রা) থেকে, তিনি বলেছেন:

اِحْتَجَمَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فِي الْمَسْجِدِ

‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের মধ্যে হাজামত করেন বা সিংগার মাধ্যমে দেহ থেকে রক্ত বের করেন।’’ ইবনু লাহীয়াহর ছাত্র ইসহাক ইবনু ঈসা বলেন: আমি ইবনু লাহীয়াহকে বললাম: তাঁর বাড়ীর মধ্যে কোনো নামাযের স্থানে? তিনি বলেন: মসজিদে নাবাবীর মধ্যে।’’

ইমাম মুসলিম বলেন: হাদীসটির বর্ণনা সকল দিক থেকে বিকৃত। এর সনদ ও মতন উভয় ক্ষেত্রে মারাত্মক ভুল হয়েছে। ইবনু লাহীয়াহ এর মতনের শব্দ বিকৃত করেছেন এবং সনদে ভুল করেছেন। এ হাদীসের সহীহ বিবরণ আমি উল্লেখ করছি।

আমাকে মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম বলেন, আমাদেরকে বাহয ইবনু আসাদ বলেন, আমাদেরকে উহাইব ইবনু খালিদ ইবনু আজলান (১৬৫ হি) বলেন, আমাকে মূসা ইবনু উকবাহ বলেন, আমি আবুন নাদর সালিম ইবনু আবু উমাইয়াহ (১২৯ হি)- কে বলতে শুনেছি, তিনি বুসর ইবনু সাঈদ থেকে, তিনি যাইদ ইবনু সাবিত থেকে বলেছেন:

إِنَّ النَّبِيَّ ﷺ اتَّخَذَ حُجْرَةً فِي الْمَسْجِدِ مِنْ حَصِيرٍ فَصَلَّى ... فِيهَا لَيَالِيَ

‘‘রাসূলুল্লাহ () মসজিদের মধ্যে চাটাই দিয়ে একটি ছোট ঘর বানিয়ে তার মধ্যে কয়েক রাত সালাত আদায় করেন....।’’

ইমাম মুসলিম বলেন: ‘‘আমাকে মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না বলেন, আমাদেরকে মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফর বলেছেন, আমাদেরকে আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু আবী হিনদ আল-ফারাযী (১৪৫ হি) বলেছেন, আমাদেরকে আবুন নাদর সালিম বলেছেন, তিনি বুসর ইবনু সাঈদ থেকে, তিনি যাইদ ইবনু সাবিত থেকে, তিনি বলেন:

احْـتَجَرَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ حُجَـيْرَةً بِخَصَفَةٍ أَوْ حَصِـيـرٍ

রাসূলুল্লাহ () চাটাই দিয়ে মসজিদের মধ্যে একটি ঘর বানিয়ে নেন...।’’

ইমাম মুসলিম বলেন: এভাবে আমরা সঠিক বর্ণনা পাচ্ছি উহাইব ইবনু খালিদ (১৬৫ হি) থেকে মূসা ইবনু উকবাহ থেকে, আবুন নাদর থেকে। এছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু আবী হিনদ আল-ফারাযী (১৪৫ হি) দ্বিতীয় সূত্রে আবুন নাদর থেকে যে বর্ণনা করেছেন তাও উল্লেখ করলাম। ইবন লাহিয়াহ এখানে হাদীসের মতন বর্ণনায় ভুল করেছেন তার কারণ তিনি হাদীসটি মূসার কাছ থেকে স্বকর্ণে শুনেন নি। শুধুমাত্র লিখে পাঠানো পান্ডুলিপির উপর নির্ভর করেছেন, যা তিনি উল্লেখ করেছেন। (এজন্য তিনি احتجر বা ঘর বানিয়েছেন শব্দটিকে احتجم বা রক্ত বের করেছেন বলে পড়েছেন।) যারা মুহাদ্দিসের নিজের মুখ থেকে স্বকর্ণে না শুনে বা মুহাদ্দিসকে নিজে পড়ে না শুনিয়ে শুধুমাত্র লিখিত পান্ডুলিপির উপর নির্ভর করে হাদীস বর্ণনা করেন তাদের সকলের ক্ষেত্রেই আমরা এ বিকৃতির ভয় পাই।

আর সনদের ভুল হলো, মূসা ইবনু উকবাহ হাদীসটি আবুন নাদর সালিম-এর কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। আবুন নাদর হাদীসটি বুসর ইবনু সাঈদ থেকে শিখেছেন। কিন্তু ইবনু লাহিয়াহ সনদ বর্ণনায় আবুন নাদর- এর নাম উল্লেখ না করে বলেছেন: মূসা হাদীসটি বুসর থেকে শুনেছেন।[4]

এখানে লক্ষণীয় যে, ইমাম মুসলিম দুই পর্যায়ে তুলনা করেছেন। প্রথমত ইবনু লাহীয়াহর উস্তাদ মূসার অন্য ছাত্র উহাইবের বর্ণনার সাথে ইবনু লাহীয়ার বর্ণনার তুলনা করেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে মূসার উস্তাদ আবনু নাদরের অন্য ছাত্রের বর্ণনার সাথে মূসার দুই ছাত্রের বর্ণনার তুলনা করেছেন। উভয় বর্ণনা প্রমাণ করেছে যে, ইবনু লাহিয়াহ সনদ বর্ণনায় ও মতন উল্লেখে মারাত্মক ভুল করেছেন।

[1] ইবনু আদী, আল-কামিল ৩/১১৭।

[2] যাহাবী, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৭/৪৫৬।

[3] মুসলিম, আত-তাময়ীয, পৃ: ৬২-৬৩।

[4] মুসলিম, আত-তাময়ীয, পৃ: ১৮৭-১৮৮।