রমাযানে যে যে কাজ করা রোযাদারের কর্তব্য

মাহাত্ম্যপূর্ণ রমাযান মাসে কি কি নেক কাজ করা কর্তব্য তা উল্লেখ করার পূর্বে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়ঃ-

(এই মৌসমের মূল্য ও মাহাত্ম্য প্রকৃতভাবে উপলব্ধি করা। আপনি এ কথা স্মরণে রাখবেন যে, যদি এই সওয়াবের মৌসম আপনার হাত ছাড়া হয়ে যায়, তাহলে তা পুনরায় ফিরে পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া এটি হল সংকীর্ণ সময়ের একটি সুবর্ণ সুযোগ। আল্লাহ সত্যই বলেছেন,

(أَيَّاماً مَعْدُودَاتٍ)

‘‘তা গোনা-গাঁথা কয়েকটি দিন।’’ (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)

‘রমাযান এসে গেল’ এবং ‘রমাযান শেষ হয়ে গেল’ লোকেদের এই উভয় উক্তির মাঝে ব্যবধান কত সংকীর্ণ! এ ক্ষেত্রে সাধারণভাবে অস্পষ্ট উপলব্ধি থাকা যথেষ্ট নয় যে, রমাযান মাস হল একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ মৌসম।

  1. মর্যাদা ও সওয়াবের দিক থেকে আমলসমূহের মাঝে তারতম্য আছে। সুতরাং তাতে কোন আমল বড়। আবার কোন আমল ছোট। কোন আমল আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়; কিন্তু অন্য কোন আমল তাঁর নিকট অধিক পছন্দনীয়। অতএব মুসলিমের উচিৎ, সেই আমল করতে অধিক চেষ্টা ও যত্নবান হওয়া, যা সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ আমল, মহান আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় এবং সওয়াবের দিক থেকে অধিক মর্যাদাসমৃদ্ধ।[1]

সলফে সালেহীন প্রত্যেক আমলকে পূর্ণাঙ্গ ও সুনিপুণ করার জন্য যথাসাধ্য প্রয়াস চালাতেন। তারপরেও তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে কি না তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত থাকতেন। ভয় করতেন যে, তাঁর সে আমল হয়তো প্রত্যাখ্যাত হবে। আর তাঁরা তো তাঁরা, যাঁরা

(وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ)

‘‘সশঙ্ক ও ভীত-কম্পিত হৃদয়ে দান করে।’’ (কুরআনুল কারীম ২৩/৬০)

আলী (রাঃ) বলেন, ‘আমল করার চাইতে তার কবুল হওয়ার ব্যাপারে অধিক যত্নবান হও। তোমরা কি শুননি, মহান আল্লাহ বলেন,

(إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ)

অর্থাৎ, আল্লাহ কেবল মুত্তাকী (পরহেযগার) লোকদের কাছ থেকেই (আমল) গ্রহণ করে থাকেন।’ (কুরআনুল কারীম ৫/২৭)

হাসান বাসরী (রঃ) বলেন, ‘মহান আল্লাহ রমাযান মাসকে তাঁর বান্দাদের জন্য প্রতিযোগিতার ময়দান স্বরূপ নির্ধারিত করেছেন; যার মধ্যে তারা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আপোসে প্রতিযোগিতা করতে পারে। বলা বাহুল্য, কিছু লোক অগ্রবর্তী হয়ে সফলকাম হয়েছে এবং অন্য কিছু লোক পশ্চাদ্বর্তী হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতএব অবাক লাগে সেই খেল-তামাশায় মত্ত ব্যক্তিকে দেখে; যে সেই দিনেও নিজ খেলায় মত্ত থাকে, যেদিনে সৎকর্মশীলরা সাফল্য লাভ করেন এবং অকর্মণ্যরা হয় ক্ষতিগ্রস্ত।’[2]

[1] (কাই নাস্তাফীদা মিন রামাযান, ফাহদ বিন সুলাইমান ৪৬পৃঃ)

[2] (আল-আশরুল আওয়াখিরু মিন রামাযান থেকে উদ্ধৃত)