দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রাজা হল হৃদয়। বলা বাহুল্য, এই হৃদয় যখনই শরয়ী রোযা রাখবে, তখনই সারা অঙ্গে তা কার্যকর হবে। প্রিয়তম মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘জেনে রাখ, দেহের মধ্যে এমন এক মাংস-পিন্ড আছে যা ভালো হলে সারা দেহ ভালো হবে এবং তা খারাপ হলে সারা দেহ খারাপ হবে। শোন! তা হল হূৎপিন্ড (অন্তর)।’’[1]

সুতরাং মুমিনের হৃদয় রমাযান মাসে এবং অন্য মাসেও রোযা রাখে। আর তার রোযা হবে তাকে বিধ্বংসী শির্ক, বাতিল বিশ্বাস, নোংরা চিন্তা-ভাবনা, হীন পরিকল্পনা এবং খারাপ কল্পনার মত নিকৃষ্ট উপাদান থেকে খালি করে।

মুমিনের হৃদয় রোযা রাখে অহংকার থেকে। কারণ, বিনয়ই মুমিনকে শ্রদ্ধার পাত্র করে এবং তার সচ্চরিত্রই তাকে পূর্ণ মানবতার রূপদান করে। পক্ষান্তরে অহংকার হল, ন্যায়, হক ও সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে ঘৃণা ও অবজ্ঞা করার নাম। আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘প্রত্যেক দাম্ভিক অহংকারী জাহান্নামবাসী হবে।’’[2]

মুমিনের হৃদয় রোযা রাখে গর্ব করা থেকে। কারণ, ‘‘যে ব্যক্তি মনে মনে গর্বিত হয় এবং চলনে অহংকার প্রদর্শন করে, সে ব্যক্তি যখন আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে তখন তিনি তার প্রতি ক্রোধাw¦বত থাকবেন।’’[3]

মুমিনের হৃদয় রোযা রাখে অপরের প্রতি হিংসা করা থেকে। কারণ, ‘‘কোন বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও হিংসা একত্রে জমা হতে পারে না।’’[4]

মুমিনের হৃদয় রোযা রাখে কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে। কারণ, ‘‘বিদ্বেষ হল মুন্ডনকারী। তা দ্বীন মুন্ডন (ধ্বংস) করে ফেলে।’’[5]

মুমিনের হৃদয় রোযা রাখে কৃপণতা থেকে। কারণ, ‘‘কোন বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও কৃপণতা কখনই একত্রে জমা হতে পারে না।’’[6]

মুমিনের হৃদয় রোযা রাখে পাপ চিন্তা করা থেকে এবং প্রত্যেক সেই পরিকল্পনা থেকে, যা ঈমানের প্রতিকূল।[7]

[1] (বুখারী ৫২, মুসলিম ১৫৯৯নং)

[2] (বুখারী ৪৯১৮, মুসলিম ২৮৫৩নং)

[3] (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী আল-আদাবুল মুফরাদ, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৬০, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৬১৫৭নং)

[4] (আহমাদ, মুসনাদ ২/৩৪০, নাসাঈ, ইবনে হিববান, সহীহ, বাইহাকী শুআবুল ঈমান, হাকেম, মুস্তাদ্রাক, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৭৬২০নং)

[5] (তিরমিযী, বাযযার, বাইহাকী, সহীহ তিরমিযী, আলবানী ২০৩৮নং)

[6] (আহমাদ, মুসনাদ ২/৩৪২, নাসাঈ, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ২/৭২, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৭৬১৬নং)

[7] (দ্রঃ ফাইযুর রাহীমির রাহমান, ফী আহকামি অমাওয়াইযি রামাযান ১৭৬পৃঃ, তাওজীহাত লিস-সায়েমীন অস-সায়েমাত ২০-২১পৃঃ, আহকামুস সাওম ১৯পৃঃ)