অমুসলিমদের থেকে জিযিয়া (কর) গ্রহণের ক্ষেত্রে নাবী (সাঃ) এর তরীকা

নাবী (ﷺ) নাজরান ও আয়লার অধিবাসীদের থেকে জিযিয়া আদায় করেছেন। তারা আরব ও খৃষ্টান ধর্মের অনুসারী ছিল। দাওমাতুল জান্দালের নাগরিকদের থেকেও তিনি জিযিয়া গ্রহণ করেছেন। তাদের অধিকাংশই ছিল আরব গোত্রের লোক। তিনি ইয়ামানের লোকদের থেকেও জিযিয়া গ্রহণ করেছিলেন। তারা ছিল ইহুদী। অগ্নি পূজকদের থেকেও তিনি কর আদায় করেছেন। তবে আরবের মুশরিকদের থেকে কর আদায় করার কথা সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয়নি। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ও শাফেয়ী (রহঃ) এর মতে আহলে কিতাব ও অগ্নিপূজক ব্যতীত অন্য কারও নিকট থেকে কর আদায় করা যাবেনা।

অন্য এক দল আলেম বলেন- জিযিয়া প্রদানে সম্মতি প্রকাশকারী সকল জাতির লোকদের নিকট হতেই তা আদায় করা হবে। আহলে কিতাবদের থেকে আদায় করার বিষয়টি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, অগ্নিপূজকদের থেকে আদায় করার বিষয়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, আর বাকীদেরকে উপরোক্ত দুই শ্রেনীর লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের কাছ থেকেও আদায় করা হবে। কেননা অগ্নিপূজকরাও মুশরিক। তাদের কোন আসমানী কিতাব নেই। আরবের মুশরিকদের থেকে জিযিয়া না গ্রহণ করার কারণ হল, জিযিয়ার আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বেই তারা মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। কাফেরদের এক গোষ্ঠির কুফুরীকে অন্য গোষ্ঠির কুফুরীর তুলনায় অধিক ভয়াবহ মনে করার কোন অর্থ নেই। সকল কুফুরী ধর্ম একই। সুতরাং আমরা এটি মনে করিনা যে, মূর্তিপূজকদের কুফুরী অগ্নিপূজকদের কুফুরীর চেয়ে অধিক ভয়াবহ। গভীরভাবে চিন্তা করলে অগ্নিপূজক ও মূর্তিপূজকদের কুফুরীর মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বলতে গেলে অগ্নিপূজকদের কুফুরীই অধিক ভয়াবহ ও নিকৃষ্ট। কারণ মক্কার মুশরিকরা মূর্তিপূজার সাথে সাথে তাওহীদে রুবুবীয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত। তারা বিশ্বাস করত, পৃথিবী এবং এর সকল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ নয়। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিয়তেই তারা মূর্তিপূজা করত। তারা তাদের মূর্তিগুলোকে সৃষ্টিকর্তা মনে করতনা। তারা এও বিশ্বাস করতনা যে, বিশ্বজগতে যা আছে, তার স্রষ্টা দুইজন। তারা মনে করত না যে, কল্যাণের স্রষ্টা একজন আর অকল্যাণের স্রষ্টা অন্যজন। যেমন বিশ্বাস করে অগ্নিপূজকরা।

এমনি আরবের মুশরিকরা নিজের মা, কন্যা এবং বোনকে বিবাহ করা হালাল মনে করতনা। তাদের মধ্যে দ্বীনে ইবরাহীমের বেশ কিছু বিষয় বিদ্যমান ছিল। ইবরাহীম (আঃ) এর সহীফা (পুসিত্মকা) এবং শরীয়ত ছিল। আর অগ্নিপূজকদের নিকট কোন আসমানী কিতাব নেই। তারা কোন নাবী-রসূলের শরীয়তসমূহের কোন কিছু মানত বলে জানা যায়নি। তাদের আকীদাহ ও আমলে এমন কিছু পাওয়া যায়না, যাতে বুঝা যায় তাদের কাছে আসমানী কিতাব অথবা শরীয়তে ইলাহী ছিল, যা পরে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রসূল (ﷺ) হাজারের অধিবাসী এবং অন্যান্য এলাকার বাদশাহদের নিকট পত্র লিখে তাদেরকে ইসলাম কবুল করার অথবা জিযিয়া প্রদান করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি আরবের মুশরিক এবং অন্যান্য মুশরিকদের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য করেন নি।