তিরমিযী শরীফে বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- একদা খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) অসুস্থ হলেন। তখন তিনি বললেন- হে আল্লাহর রসূল! ভয়-ভীতির কারণে আমি রাতে ঘুমাতে পারিনা। তিনি তখন বললেন- যখন তুমি বিছানায় আশ্রয় নিবে, তখন এই দু’আটি পাঠ করবেঃ


اللّٰهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظَلَّتْ وَرَبَّ الأَرَضِينَ وَمَا أَقَلَّتْ وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضَلَّتْ كُنْ لِى جَارًا مِنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا أَنْ يَفْرُطَ عَلَىَّ أَحَدٌ مِنْهُمْ أَوْ أَنْ يَبْغِىَ عَلَىَّ عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ


‘‘হে আল্লাহ্! হে সাত আসমান ও তার ছায়ায় অবস্থিত সকল বস্ত্তর প্রভু! হে সাত যমীন ও তাতে আচ্ছাদিত বস্ত্তসমূহের মালিক! হে শয়তান ও তার ধোঁকায় পড়ে পথহারাদের প্রতিপালক! সমস্ত মাখলুকের অনিষ্ট হতে তুমি আমাকে আশ্রয় দাও। তাদের কেউ যেন আমার উপর জুলুম করতে না পারে কিংবা আমার উপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে। তুমি যাকে আশ্রয় দিবে, সে অবশ্যই বিজয়ী হবে এবং তোমার প্রশংসা খুবই বড়। তুমি ছাড়া কোন সত্যউ পাস্য নেই’’।[1]


তিরমিযীতে আমর বিন শুআইব (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, ঘাবড়ানোর (ভয়-ভীতির) সময় নাবী (ﷺ) সাহাবীদেরকে এই দু’আ শিক্ষা দিতেনঃ


أعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وشَرِّ عِبَادِهِ وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَيَاطِيْنِ وَأَعُوْذُبِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُون


‘‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে তাঁর ক্রোধ থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট হতে এবং শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা থেকে এবং আমার নিকট শয়তানদের উপস্থিত হওয়া থেকে। বর্ণনাকারী বলেন- আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) তাঁর বুঝবান সন্তানদেরকে এই দু’আ শিক্ষা দিতেন আর যারা ছোট ও অবুঝ ছিল, তাদের জন্য এই দু’আ লিখে গলায় ঝুলিয়ে দিতেন’’।[2]


আমর বিন শুআইব হতে মারফু সূত্রে আরও উল্লেখ করা হয় যে, নাবী (ﷺ) বলেন- তোমরা যখন আগুন লাগতে দেখ, তখন তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ কর। কেননা তাকবীর আগুন নিভিয়ে দেয়।[3] আগুন লাগার কারণ হচ্ছে শয়তান। কারণ শয়তানকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আগুন লাগলে এমন ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সূত্রপাত হয়, যাতে শয়তান খুশী হয়। আগুনের স্বভাব হচ্ছে সে অহংকার ও বিপর্যয়কে পছন্দ করে। এই দু’টি স্বভাবই শয়তানের মধ্যে বিদ্যমান। শয়তান এই স্বভাব দু’টির দিকেই আহবান করে। এর মাধ্যমেই বনী আদম ধ্বংস হয়।


আগুন ও শয়তান পৃথিবীতে ধ্বংস-বিপর্যয় এবং অহংকারের অন্যতম বিরাট একটি কারণ। সুতরাং আল্লাহ্ তা‘আলার কিবরিয়ার (বড়ত্ব ও অহংকারের) সামনে পৃথিবীর কোন কিছুই টিকতে পারেনা। এ জন্যই মুসলিম যখন আল্লাহু আকবার পাঠ করে, তখন তাকবীরের প্রভাবে আগুন নিভে যায় এবং শয়তানকে বিতাড়িত করে। কেননা শয়তান সৃষ্টির মূল উপাদানই হচ্ছে এই আগুন।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন- আমরা এই বিষয়টি একাধিকবার পরীক্ষা করেছি। আমরা অনুরূপ ফল পেয়েছি।

[1]. তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত দাওয়াত, সহীহ আত তিরমিযী, মাপ্র. হা/৩৫২৩, এই হাদীসের সনদে রয়েছে হাকাম বিন যহীর। তার হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম তিরমিযী রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসের সনদ শক্তিশালী নয়। ইমাম আলবানী রহঃ) হাদীসটি যঈফ জিদ্দান (খুবই দুর্বল) বলেছেন। সিলসিলায়ে যঈফা, হা/২৪০৩।

[2]. আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তিবব। ইমাম আলবানী রহঃ) বলেনঃ হাদীসটি হাসান। হাদীসের শেষাংশে উল্লেখিত, ইবনে উমার কর্তৃক তাঁর শিশু সন্তানদের গলায় দুআটি লিখে ঝুলিয়ে দেয়ার কথাটি সহীহ নয়। দেখুনঃ আলকালিমুত তায়্যিব, হা/৪৯।

[3]. ইবনুস সুন্নী হাদীসটিকে দিবারাত্রির আমল নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এর সনদে রয়েছে কাসেম বিন আব্দুল্লাহ্ আল-উমারী। মুহাদ্দিছগণের নিকট তার হাদীছ মাতরুক (অগ্রহণযোগ্য)। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহঃ) তাকে কাজ্জাব (মিথ্যুক) বলেছেন। ইমাম আলবানী রহঃ) হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, হা/২৪০৩।