দ্বীনের পথে সাহাবীদের জুলুম-নির্যাতন সহ্যের কিছু দৃষ্টান্ত

সাহাবায়ে কেরামদের অবস্থা এই ছিল যে, যার গোত্রীয় শক্তি ছিল, সে তার গোত্রের সাহায্য পেত এবং স্বীয় গোত্রের লোকেরা তাকে অন্যান্য কাফেরদের কষ্ট হতে রক্ষা করত। কিন্তু বহু সংখ্যক সাহাবীর এ রকম কোন ব্যবস্থা ছিল না। তারা দ্বীনের পথে কুরাইশদের পক্ষ হতে কঠিক যন্ত্রনা ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। তারা ভোগ করেছেন নানা ধরণের শাস্তি ও জুলুম-নির্যাতন। তাদের মধ্যে ছিলেন আম্মার বিন ইয়াসির, তাঁর মাতা সুমাইয়া এবং তাঁর পরিবার। তারা আল্লাহর পথে কঠোর শাস্তি ভোগ করেছেন।

যখন মরুর বালু উত্তপ্ত হয়ে উঠত তখন তাদেরকে চিৎ করে শায়িত করে শাস্তি দিত। সে অবস্থায় একদা রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলেছিলেন- ‘‘হে ইয়াসের পরিবার ধৈর্য ধারণ করো, তোমাদের ঠিকানা হচ্ছে জান্নাত।’’ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ইয়াসের ইন্তেকাল করেন।

দুর্বৃত্ত আবু জাহল সুমাইয়া (রাঃ) এর লজ্জাস্থানে তীর দিয়ে আঘাত হানলে তৎক্ষণাৎ তিনি শাহাদত বরণ করেন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ। তারা আম্মারের উপরও শাস্তি কঠোর করে, কখনও তাকে তারা উত্তপ্ত রোদ্রে ফেলে শাস্তি দিত, কখনও ভারি প্রস্তর তার উপরে চাপিয়ে রাখতো, আবার কখনও আগুনে দগ্ধকরে শাস্তি দিত এবং বলতোঃ যতক্ষণ তুমি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে গালি না দিবে অথবা ‘‘লাত’’ ও ‘‘উয্যা’’ সম্পর্কে ভালো কথা না বলবে ততক্ষণ আমরা তোমাকে ছাড়বোনা। তিনি বাধ্য হয়েই তাদের কথায় সম্মতি দেন এবং পরবর্তীতে ক্রন্দনরত অবস্থায় ও রসূল (ﷺ) এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার জন্য উপস্থিত হন। আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রেক্ষিতে এই আয়াতটি নাযিল করেন-

مَنْ كَفَرَ بِاللهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ

‘‘যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর যদি আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয়- তাদের উপর পতিত হবে আল্লাহর গযব’’। (সূরা নাহল-২৭:১০৬)

যেসমস্ত সাহাবী কাফেরদের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বিলাল (রাঃ) তাদের অন্যতম। তাকে আল্লাহর রাস্তায় কঠিন শাস্তি দেয়া হয়েছে। আল্লাহর জন্য নিজের জানকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন এবং স্বজাতির কাছে নিজেকে ছেড়ে রেখেছিলেন। মুশরিকরা তাঁকে দুষ্ট ছেলেদের হাতে তুলে দিয়েছিল। ওরা তাঁকে মক্কার গলিতে টেনে নিয়ে বেড়াত, আর তিনি বলতেন, আহাদ, আহাদ। ওরাকা বিন নাওফাল তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলতেন- হ্যাঁ, বিলাল। ঠিক বলছ। আহাদ, আহাদ। আল্লাহ্ এক, আল্লাহ্ এক। আল্লাহর শপথ! তোমরা যদি তাঁকে হত্যা করে ফেল আমি তাঁর হত্যায় মমতা প্রকাশ করব।

বিলাল (রাঃ) উমাইয়া বিন খালফের দাস ছিলেন। উমাইয়া তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করত, উত্তপ্ত রৌদ্রে অভূক্ত অবস্থায় ফেলে রাখত। যখন দ্বি-প্রহরের কঠিন রোদে বালু উত্তপ্ত হয়ে উঠতো তখন তাকে মক্কার মরুভূমিতে নিয়ে যেত, অতঃপর চিৎ করে শুইয়ে তার বক্ষদেশে বিশাল একটি পাথর চাপিয়ে দিত। তখন তিনি বলতেন, আহাদ, আহাদ (আল্লাহ্ এক, আল্লাহ্ এক)। একদা আবু বকর (রাঃ) তাঁর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন, সে সময় তার শাস্তি হচ্ছিল। তিনি তাকে একটি কৃষ্ণ দাসের বিনিময়ে ক্রয় করেন। মতান্তরে তিনি তাকে পাঁচ উকিয়া (দু’শ দিরহাম) রৌপ্যের বিনিময়ে ক্রয় করে আযাদ করে দিয়েছিলেন।