হাঁচির মাধ্যমে হাঁচি দাতার জন্য বিরাট নিয়ামাত অর্জিত হয়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল। কেননা এর মাধ্যমে শরীরে আটকে পড়া ধোঁয়া ও গ্যাস বের হয়ে যায়, যা শরীরের জন্য উপকারী। হাঁচি দেয়ার পর শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত যায়। তাই এই নিয়ামাতটি অর্জিত হওয়ার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করার বিধান নির্ধারিত হয়েছে। যমীনে ভূমিকম্প হলে তা যেমন কেঁপে উঠে তেমনই হাঁচির মাধ্যমে শরীরে ভূমি কম্পের সৃষ্টি হয়।[1]

রসূল (ﷺ)-এর যখন হাই আসত, তখন মুখে হাত অথবা কাপড় রাখতেন এবং আওয়াজ নীচু রাখার চেষ্টা করতেন। তাঁর থেকে আরও বর্ণনা করা হয় যে, উঁচু আওয়াজের হাই এবং হাঁচি শয়তানের পক্ষ হতে।

নাবী (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি তাঁর সামনে হাঁচি দিল। তিনি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললেন। সে পুনরায় হাঁচি দিল। তখন তিনি বললেন- লোকটির ঠান্ডা (সর্দি) লেগেছে। মুসলিম শরীফে হাদীসটি এই শব্দেই বর্ণিত হয়েছে। তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে, তিনি তৃতীয়বার হাঁচি দিলে কথাটি বলেছেন। ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনার পর সহীহ বলেছেন। আবু দাউদ শরীফে আবু হুরাযরা (রাঃ) হতে মাওকুফ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তুমি তিনবার তোমার ভাইয়ের হাঁচির জবাব দাও। এর বেশী হলে মনে করবে সেটি হাঁচি নয়; ঠান্ডা ও সর্দি জণিত অসুখ।

কেউ যদি প্রশ্ন করা হয় যে, সর্দিতে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য তো আরও বেশী দু’আর করা দরকার তাহলে উত্তর কী হবে? উত্তরে বলা হবে যে, রোগীর জন্য যেমন দু’আ করা হয়, তার জন্যও অনুরূপ দু’আ করতে হবে। আর যেই হাঁচি আল্লাহ্ পছন্দ করেন এবং যা নিয়ামাত স্বরূপ তা সর্বোচ্চ তিনবার পর্যন্ত হতে পারে। নাবী (ﷺ)-এর বাণীঃ লোকটির সর্দি লেগেছে, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তার জন্য সুস্থতার দু’আ করা জরুরী এবং এর মাধ্যমে জানা গেল যে, তিনবারের বেশী হাঁচি দিলে তার জবাব না দিলেও চলবে।

কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ্’ বললে কেউ যদি তা শুনে আর অন্যরা না শুনে তাহলে সঠিক কথা হচ্ছে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলে হাঁচির জবাব দিতে হবে। কেননা নাবী (ﷺ) বলেছেন- সে যদি ‘আলহামদু লিল্লাহ্’ বলে তাহলে তার জবাব দাও। ইবনুল আরাবী বলেন- আর যদি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তাহলে হাঁচি দাতাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবেনা। হাদীছের শব্দ এই মতকেই সমর্থন করে। নাবী (ﷺ) এ রকম পরিস্থিতিতে কাউকে স্মরণ করিয়ে দেন নি। নাবী (ﷺ) এই সুন্নাতের উপর আমল করা এবং তা শিক্ষা দেয়ার পরও ভুলবশত ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ পরিত্যাগ কারীকে স্মরণ করিয়ে দেন নি।

সহীহ হাদীছের মাধ্যমে প্রমাণিত আছে যে, ইহুদীরা নাবী (ﷺ)-এর কাছে এসে ইচ্ছা করেই হাঁচি দিত। এতে তাদের উদ্দেশ্য ছিল যাতে রসূল (ﷺ) তাদের জবাবে يَرْحَمُكُمُ اللهُ বলেন। কিন্তু নাবী (ﷺ) তা না বলে يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ বলতেন। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত করুন এবং তোমাদের অবস্থা সংশোধন করুন।

[1]. সমকালীন ডাক্তারগণ বলেনঃ হাই তোলার সময় মুখ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী পরিমাণ উন্মুক্ত হয় এবং প্রচন্ড বেগে বাতাস ভিতরের দিকে আসা-যাওয়া করে। অথচ নাকের ন্যায় বাতাস গ্রহণ ও বর্জনের জন্য মুখ সব সময় প্রস্ত্তত থাকে না, মুখের মূল কাজও এটি নয়। তাই হাই তোলার সময় যখন মুখের স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায় এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী পরিমাণ খুলে যায় তাই বাতাসের সাথে বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণু, ময়লা এবং ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে। এ জন্যই পবিত্র সুন্নাতে হাই তোলার সময় মুখ ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। হাঁচি এর বিপরীত। এর মাধ্যমে মুখ ও নাক দিয়ে শ্বাসযন্ত্র থেকে প্রচন্ড বেগে বাতাস বের হয়ে যায়। সেই সাথে শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশকারী ধুলোবালি, ময়লা এবং বিভিন্ন রোগ জীবাণু বের হয়ে যায় এবং শরীর পরিষ্কার হয়। তাই এটি আল্লাহর পক্ষ হতে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ এতে শরীরের উপকার রয়েছে। অপর পক্ষে হাই শয়তানের পক্ষ থেকে আসে বলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্যই সাধ্যানুযায়ী তা ঠেকাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।