কয়জনের পক্ষ হতে একটি গরু অথবা একটি উট কুরবানী করা জায়েয হবে, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফেঈ এবং ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর প্রসিদ্ধ মতে সাত জনের পক্ষ হতে একটি গরু অথবা একটি উট কুরবানী করা জায়েয আছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন- দশ জনের পক্ষ হতে তা জায়েয আছে। এটি হচ্ছে ইসহাক (রহঃ)-এর মত। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন- উক্ত হাদীসগুলোকে তিন পদ্ধতির যে কোন একটি পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। (১) উট ও গরু সাত জনের পক্ষ হতে কুরবানী করার হাদীসগুলো অধিক সংখ্যক রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং সেগুলো অধিক বিশুদ্ধ। (২) এও বলা যেতে পারে যে, গণীমতের মাল বন্টনের সময় এক উটকে তিনি দশটি ছাগলের সমান করেছেন। যাতে সুষ্ঠুভাবে তা বণ্টন করা যায় এবং তাতে কোন অসুবিধা না হয়। আর কুরবানীতে সাত জনের পক্ষ হতে একটি উট বা একটি গরু করার বিধান হচ্ছে শরীয়তের একটি বিশেষ নির্ধারণ। (৩) কোন বর্ণনায় সাত জনের পক্ষ হতে আবার কোন বর্ণনায় দশজনের পক্ষ হতে একটি উট কুরবানী করার বা একটি উটকে সাতটি বা দশটি বকরীর সমান করা স্থান, কাল ও উটের বিভিন্নতার কারণে হয়েছে। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট সময় ও বিশেষ স্থানে উট বড় হওয়ার কারণে এবং ছাগল ছোট হওয়ার কারণে একটি উটকে দশটি ছাগলের সমান করেছেন এবং দশজনের পক্ষ হতে তা কুরবানী করার কথা বলেছেন।

আবার কোন সময় উট ছোট হওয়ার কারণে একটি উটকে সাতটি ছাগলের সমান করেছেন এবং তা দিয়ে সাত জনকে কুরবানী করার আদেশ দিয়েছেন।[1] আল্লাহই ভাল জানেন।

তিনি মিনায় মানহারে (কুরবানীর স্থানে) কুরবানীর পশু যবেহ করেছেন এবং মুসলিমদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, মিনার সকল স্থানই মানহার (যবেহ করার স্থান) মক্কার গলিসমূহ মানুষের চলার রাস্তা এবং কুরবানী করার জায়গা।[2] এতে দলীল রয়েছে যে, হাজীদের কুরবানীর পশু যবেহ করার স্থান শুধু মিনা নয়; বরং মক্কার যে কোন স্থানে যবেহ করলেই চলবে। কারণ নাবী (ﷺ) বলেছেন- আমি এখানে অবস্থান করেছি। তবে আরাফার সকল স্থানই উকুফের (অবস্থানের) জায়গা। নাবী (ﷺ) এর কাছে মিনাতে সূর্যের তাপ থেকে বাঁচার জন্য একটি তাঁবু স্থাপন করার অনুমতি প্রার্থনা করা হলে তিনি অনুমতি দেন নি। বরং তিনি বললেন- মিনার যে স্থানে যে ব্যক্তি আগে পৌঁছবে সে ব্যক্তিই উক্ত স্থানের বেশী হকদার। মিনায় সকল মুসলিমের অংশীদারিত্ব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি মিনার কোন স্থানে অন্য ব্যক্তির পূর্বেই পৌঁছে যাবে সেই সে স্থানে অবস্থানের অধিক হকদার, যতক্ষণ না সে তা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। তবে সে আগে অবস্থান নেওয়ার কারণে সেই স্থানের মালিক হয়ে যাবেনা।

তিনি যখন কুরবানী পূর্ণ করলেন তখন তিনি নাপিত ডেকে মাথা কামালেন এবং বললেন- হে মা’মার! তোমার হাতে রয়েছে খুর। আল্লাহর রসূল (ﷺ) তোমার কাছে স্বীয় কানের লতি সোপর্দ করে দিচ্ছেন। তখন সে বলল- হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম! এটি হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ হতে আমার উপর বিশেষ একটি নেয়ামত ও রহমত। নাবী (ﷺ) বললেন- হ্যাঁ, তাই। ইমাম আহমাদ (রহঃ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। নাবী (ﷺ) তখন বললেন- তাহলে শুরু কর। এই বলে তিনি মাথার ডান দিকের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। মাথার ডান দিক কামানো হলে তিনি চুলগুলো নিকটস্থ লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দিলেন। অতঃপর তিনি নাপিতকে বাম দিকের প্রতি ইঙ্গিত করলে সে মাথার বাম দিকও কামিয়ে ফেলল। এ সময় তিনি বললেন- এখানে আবু তালহা আছে কি? অতঃপর তিনি বাম দিকের চুল আবু তালহাকে দিয়ে দিলেন।

এরপর তিনি মাথা মুন্ডকারীদের জন্য তিনবার এবং চুল ছোটকারীদের জন্য মাত্র একবার মাগফিরাতের দু’আ করলেন। এ থেকে প্রমাণিত হল মাথা মুন্ডানো মূলত একটি ইবাদত; ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ ছিল তা থেকে মুক্ত হওয়ার মাধ্যম নয়।

[1]. আর গরুতে কোন অবস্থাতেই সাত পরিবারের সাত জনের বেশী অংশ গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই। কোন কোন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, নাবী সাঃ) নয়জন স্ত্রীর পক্ষ হতে মাত্র একটি গরু কুরবানী করেছেন। আবার কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, তিনি সেদিন তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে গরু কুরবানী দিয়েছেন। এই বর্ণনা থেকে প্রত্যেক স্ত্রীর পক্ষ হতে একটি করে গরু কুরবানী দেয়ার কথা সহজেই অনুমেয়। কারণ এখানে সাধারণভাবে গরু শব্দটি উল্লেখ আছে। সংখ্যা উল্লেখ নেই। অথবা বলা যেতে পারে যে, তিনি তাঁর পবিত্র স্ত্রীদের সাতজনের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী দিয়েছেন। বাকী দুই জনের ব্যাপারে অন্য কিছু হয়েছিল। অথবা বাকী দুইজন বিভিন্ন প্রকার হজ্জ থেকে এমন হজ্জ করেছেন, যাতে আদৌ কুরবানী ওয়াজিব ছিল না। আল্লাহই ভাল জানেন।

[2]. সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ আরাফাতের সব জায়গাই হাজীদের উকুফ (অবস্থান) করার স্থান।