তিনি তারতীলের সাথে (থেমে থেমে) কুরআনের সূরা পাঠ করতেন। যাতে সূরাটি মূলত যতটুকু লম্বা তার চেয়ে অধিক লম্বা মনে হত। কেননা কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে তা মনোযোগ সহকারে পড়া ও বুঝা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। তিলাওয়াত ও মুখস্থ করা কুরআনের অর্থ বুঝার সর্বোত্তম একটি মাধ্যম।

কোন কোন সালাফ (পূর্ববর্তী যুগের আলেম) বলেছেন- আমল করার জন্যই কুরআন নাযিল হয়েছে। সুতরাং তার তিলওয়াতকেও আমল মনে কর। শু’বা (রহঃ) বলেন- আবু হামজাহ আমাকে বলেছেন- আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে বললামঃ আমি দ্রুত পড়ায় অভ্যস্থ। কখনও কখনও এক রাতেই একবার অথবা দুইবার পূর্ণ কুরআন খতম করে ফেলি। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখন বললেন- তুমি যা করে থাক তার চেয়ে আমার নিকট একটি সূরা পড়াই অধিক প্রিয়। তুমি যদি দ্রুত পড়তেই চাও তাহলে এভাবে পড় যাতে তোমার কান উহা শুনে এবং তোমার অন্তর তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। ইবরাহীম বলেন- একদা আলকামা (রহঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) Gi সামনে কুরআন তিলাওয়াত করলেন। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তা শুনে বললেন- আমার মা বাপ তোমার জন্য কোরবান হোক! তারতীলের সাথে পড়। কেননা এতেই কুরআনের সৌন্দর্য।

আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আরও বলেন- কবিতা আবৃত্তির মত করে কুরআন পড়ো না এবং সাধারণ কথা-বার্তার ন্যায়ও তা চালিয়ে যেয়োনা; বরং তা পড়ার সময় বিস্ময়কর বিষয়গুলোর নিকট একটু থামো এবং তার দ্বারা অন্তরে সাড়া জাগাও। সূরা শেষ করাই যেন তোমাদের কারও উদ্দেশ্য না হয়। তিনি আরও বলেন- যখন তুমি শুনবে যে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তখন তোমার কানকেও এই বাণীটি শুনাও। কারণ এটি হয়ত তোমাকে কোন কল্যাণের আদেশ দিচ্ছে না হয় তোমাকে কোন অকল্যাণ হতে বারণ করছে।

আব্দুর রহমান বিন আবু লায়লা (রহঃ) বলেন- আমার কাছে এক মহিলা আসল। তখন আমি সূরা হুদ পড়ছিলাম। মহিলাটি আমাকে বলল- হে আব্দুর রহমান! তুমি এভাবে সূরা হুদ পড়ছ? আল্লাহর শপথ! আমি ছয় মাস যাবৎ এটি পড়ছি। এখনও তা শেষ করতে পারি নি।

নাবী (ﷺ) কখনও রাতের সলাতে নীচু আওয়াজে কুরআন পড়তেন। আবার কখনও স্বরবে পড়তেন। কখনও দীর্ঘ কিয়াম করতেন আবার কখনও সংক্ষিপ্ত করতেন। তিনি সফর অবস্থায় দিনে ও রাতে বাহনের উপর বসে নফল সলাত পড়তেন। বাহন তাঁকে নিয়ে যেদিকে যেত সেদিকে ফিরেই তিনি সলাত পড়তেন (কিবলামুখী হওয়া জরুরী নয়)। ইঙ্গিতের মাধ্যমে রুকু ও সিজদাহ করতেন। রুকুর তুলনায় সিজদাতে বেশী ঝুকতেন।