মাবরুর হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।[1] যে হজ্জ করল ও শরিয়ত অনুমতি দেয় না এমন কাজ থেকে বিরত রইল, যৌন-স্পর্শ রয়েছে এমন কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকল, সে তার মাতৃ-গর্ভ হতে ভূমিষ্ট ‘হওয়ার দিনের মতো পবিত্র হয়ে ফিরে এল।[2] ‘আরাফার দিন এতো সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য কোনো দিন দেন না। এদিন আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী হন ও আরাফার ময়দানে অবস্থানরত হাজিদেরকে নিয়ে তিনি ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন, ও বলেন ‘ওরা কী চায়?।’[3]

সর্বোত্তম আমল কী এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে বললেন, ‘অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রতি ঈমান, ও তারপর মাবরুর হজ্জ যা সকল আমল থেকে শ্রেষ্ঠ। সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যে পার্থক্য ঠিক তারই মত।’[4] অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘উত্তম আমল কি এই মর্মে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। উত্তরে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল, ‘তারপর কী’? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। বলা হল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ।[5] একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রশ্ন করে আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদে ও অভিযানে যাব না? তিনি বললেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দরতম জিহাদ হল ‘হজ্জ’, তথা মাবরুর হজ্জ।’’[6] ‘হজ্জ ও উমরা পালনকারীগণ আল্লাহর অফদ-মেহমান। তারা যদি আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দেন। তারা যদি গুনাহ মাফ চায় আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে দেন।’[7] আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, ‘এক উমরা হতে অন্য উমরা, এ দুয়ের মাঝে যা কিছু (পাপ) ঘটবে তার জন্য কাফফারা। আর মাবরুর হজ্জের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।’’[8] হাদিসে আরো এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, ‘কারো ইসলাম-গ্রহণ পূর্বকৃত সকল পাপকে মুছে দেয়। হিজরত তার পূর্বের সকল গুনাহ মুছে দেয়, ও হজ্জ তার পূর্বের সকল পাপ মুছে দেয়।[9] ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা পর পর হজ্জ ও উমরা আদায় করো। কেননা তা দারিদ্র্য ও পাপকে সরিয়ে দেয় যেমন সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লোহা-স্বর্ণ-রুপার ময়লাকে। আর হজ্জে মাবরুরের ছোয়াব তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।[10]

উপরে উল্লেখিত হাদিসসমূহের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তাই হজ্জ পালনেচ্ছু প্রতিটি ব্যক্তিরই উচিৎ পবিত্র হজ্জের এই ফজিলতসমূহ ভরপুরভাবে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে যাওয়া। হজ্জ কবুল হওয়ার সকল শর্ত পূর্ণ করে সমস্ত পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্ত থেকে কঠিনভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।

[1] - والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة (বোখারি : হাদিস নং ১৬৫০ )

[2] - فلم يرفث ولم يفسق ، رجع كيوم ولدته أمه من حج لله (বোখারি: হাদিস নং ১৪২৪)

[3] -মুসলিম : ২/৯৮৩

[4] - عن ماعز التميمي ু رضى الله عنه ু عن النبي صلى الله عليه وسلم : أنه سئل أي الأعمال أفضل ؟ قال : إيمان بالله وحده ، ثم حجة برة تفضل سائر الأعمال ، كما بين مطلع الشمس إلى مغربها (আহমদ : ৪/৩৪২)

[5] - سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم ، أي الأعمال أفضل ؟ قال : الإيمان بالله ورسوله ، قيل : ثم ماذا ؟ قال جهاد في سبيل الله ، قيل ثم ماذا ؟ قال حج مبرور (বোখারি : ১৪২২)

[6] - عن عائشة أم المؤمنين ু رضى الله عنها ু قالت : قلت يارسول الله ، ألا نغزو ونجاهد معكم ؟ قال : لَكُنَّ أفضل الجهاد وأجمله الحج ، حج مبرور (বোখারির ব্যাখ্যা ফাতহুল বারি : ৪/১৮৬১)

[7] - عن أبي هريرة رضى الله عنه ، أن رسول الله قال : الحجاج والعمار وفد الله ، إن دعوه أجابهم وان استغفروه غفر لهم ইবনে মাযাহ : হাদিস নং ২৮৮৩ )

[8] - عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما ، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة ،، (বোখারি : হাদিস নং ১৬৫০)

[9] - إن الإسلام يهدم ما كان قبله ، و أن الهجرة تهدم ما كان قبلها ، وأن الحج يهدم ما كان قبله ،، (মুসলিম : হাদিস নং১৭৩)

[10] - تابعوا بين الحج والعمرة ، فإنهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكير خبث الحديد والذهب والفضة وليس للحج المبرور ثواب إلا الجنة (আলবানি : সহিহুন্নাসায়ি : ২/৫৫৮)