দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম [যাকাত অধ্যায়] যাকাত পরিচিতি শরীফুল ইসলাম বিন যয়নুল আবেদীন ১ টি

(৭) যাকাত ঈমানের সত্যায়নকারী : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ- أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيْمٌ-

‘যারা ছালাত ক্বায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে (যাকাত আদায় করে); তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদেরই জন্য রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা’ (আনফাল ৮/৩-৪)

হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি এবং সকল মানুষের চেয়ে আধিক প্রিয় না হব।[1]

আর পৃথিবীতে মানুষের নিকটে সবচেয়ে প্রিয় বস্ত্ত হল তার ধন-সম্পদ। আর সে কখনই তা দান করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাঁর নিকটে অধিক প্রিয় না হয়। আর যখনই সে তার সম্পদের যাকাত আদায় করে তখনই সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ করে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُعَاوِيَةَ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثٌ مَنْ فَعَلَهُنَّ فَقَدْ طَعِمَ طَعْمَ الإِيْمَانِ مَنْ عَبَدَ اللهَ وَحْدَهُ وَأَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَعْطَى زَكَاةَ مَالِهِ طَيِّبَةً بِهَا نَفْسُهُ رَافِدَةً عَلَيْهِ كُلَّ عَامٍ وَلاَ يُعْطِى الْهَرِمَةَ وَلاَ الدَّرِنَةَ وَلاَ الْمَرِيْضَةَ وَلاَ الشَّرَطَ اللَّئِيْمَةَ وَلَكِنْ مِنْ وَسَطِ أَمْوَالِكُمْ فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَسْأَلْكُمْ خَيْرَهُ وَلَمْ يَأْمُرْكُمْ بِشَرِّهِ-

আব্দুল্লাহ ইবনু মা‘আবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ করবে সে পরিপূর্ণ ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করবে। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে এবং স্বীকার করে যে আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই; যে ব্যক্তি প্রত্যেক বছর তার সম্পদের যাকাত হিসাবে উত্তম মাল দান করে এবং বৃদ্ধ বয়সের, রোগগ্রস্থ, ত্রুটিপূর্ণ, নিকৃষ্ট মাল প্রদান করে না; বরং মধ্যম মানের মাল প্রদান করে। আল্লাহ তোমাদের নিকট তোমাদের উত্তম মাল চান না এবং নিকৃষ্ট মাল প্রদান করতেও নির্দেশ দেননি।[2]

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ مَالِكٍ الأَشْعَرِىَّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ شَطْرُ الإِيْمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلأُ الْمِيْزَانَ وَالتَّسْبِيْحُ وَالتَّكْبِيْرُ يَمْلأُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَالصَّلاَةُ نُوْرٌ وَالزَّكَاةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ-

আবু মালেক আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, পরিপূর্ণভাবে ওযূ করা ঈমানের অংশ বিশেষ। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাল্লাকে পূর্ণ করে। ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ আসমান ও যমিনকে পূর্ণ করে। ছালাত হল নূর বা আলো। আর যাকাত হল প্রমাণ। ধৈর্য আলো। আর কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ।[3]

[1]. বুখারী হা/১৫, ‘ঈমান’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ বুখারী (তাওহীদ পাবলিসেশন্স) ১/১৭ পৃঃ; মুসলিম হা/৪৪; মিশকাত হা/৭।

[2]. আবুদাউদ হা/১৫৮২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৪১।

[3]. নাসাঈ হা/২৪৩৭; ইবনু মাজাহ হা/২৮০; আলবানী, সনদ ছহীহ।