ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ঈমান শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি
প্রশ্ন: (৮৮) (مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا) ‘যে ব্যক্তি ইসলামের ভিতরে উত্তম কোনো সুন্নাত চালু করল, তার জন্য ছাওয়াব রয়েছ’ -এ হাদীসকে যে সমস্ত বিদ‘আতী তাদের বিদ‘আতের পক্ষে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে, আমরা কীভাবে তাদের উত্তর দিব?

উত্তর: তাদের জবাবে আমরা বলব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَ أَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا»

“যে ব্যক্তি ইসলামের ভিতরে উত্তম কোনো সুন্নাত চালু করল, তার জন্য ছাওয়াব রয়েছে।”

তিনি তো ইহাও বলেছেন যে,

«عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَ كُلُّ ضَلَاةٍ فِى النَّارِ»

“তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার পরে হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাহর অনুরণ করবে এবং তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। আর তোমরা নতুন আবিস্কৃত বিষয় থেকে সাবধান থাকবে। কারণ, প্রতিটি নব আবিস্কৃত বিষয়ই বিদ‘আত আর প্রতিটি বিদ‘আতই গোমরাহী এবং প্রতিটি গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।”[1]

প্রশ্নে বর্ণিত যে হাদীসটিকে বিদ‘আতীরা দলীল হিসেবে গ্রহণ করে থাকে, সেই হাদীসের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। তা এই যে, মুযার গোত্রের কিছু অভাবী লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আগমণ করলে তিনি সদকা করার প্রতি উৎসাহ দিলেন। এক ব্যক্তি থলে ভর্তি রূপা নিয়ে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে হাজির হল। তখন তিনি বললেন,

«مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَ أَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا إِلىَ يَوْمِ القِيَامَةِ»

“যে ব্যক্তি ইসলামে উত্তম কোনো সুন্নাত চালু করল, তার জন্য ছাওয়াব রয়েছে এবং তার পরে কিয়ামত পর্যন্ত যারা সেই সুন্নাহর ওপর আমল করবে, তাদের সমপরিমাণ ছাওয়াব পাবে।”[2]

হাদীসের প্রেক্ষাপট থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, উত্তম সুন্নাত বলতে সুন্নাহর ওপর নতুনভাবে আমল শুরু করাকে বুঝানো হয়েছে। নতুনভাবে কোনো আমল তৈরি করার কথা বলা হয় নি। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো জন্য শরী‘আতের কোনো বিধান প্রবর্তন করা জায়েয নেই। কাজেই হাদীসের অর্থ এই যে, কোনো ব্যক্তি যদি সুন্নাহর ওপর আমল করে, তার আমল দেখে অন্যরাও যদি সেই সুন্নাহর ওপর আমল করা শুরু করে, তাহলে প্রথম আমলকারী ব্যক্তি নিজে আমল করার ছাওয়াব পাওয়ার সাথে সাথে তাকে দেখে আমলকারীর অনুরূপ সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। অথবা হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, শরী‘আতসম্মত কোনো ইবাদাত পালনের মাধ্যম বা উপকরণ যেমন ধর্মীয় কিতাব রচনা করা, ইলম প্রচার করা, মাদরাসা নির্মাণ করা ইত্যাদি। এমন নয় যে, নতুন ইবাদাত তৈরি করা। মানুষের ইচ্ছামত যদি শরী‘আত প্রবর্তন করা জায়েয হয়, তাহলে অর্থ এই হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় ইসলাম পরিপূর্ণ হয় নি। কোনো বিদ‘আত প্রবর্তন করে তাকে হাসানাহ বা উত্তম বলে ধারণা করা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়। যেহেতু তিনি বলেন, প্রতিটি বিদ‘আতই গোমরাহী।

>
[1] আবু দাউদ, অধ্যায়: কিতাবুস সুন্নাহ।

[2] ইবন মাজাহ, অধ্যায়: আল-মুকাদ্দিমাহ (ভূমিকা)