ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ছিয়াম (রোযা) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি
প্রশ্ন: (৪৪৬) বিশেষভাবে জুমু‘আর দিবস সাওম নিষেধ। এর কারণ কী? কাযা সিয়ামও কি এদিন রাখা নিষেধ?

উত্তর: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন,لا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ ولا ليلتها بقيام “এককভাবে শুধুমাত্র শুক্রবারের দিনে সাওম রাখবে না এবং রাতে ক্বিয়াম করবে না।”[1] সাওম রাখার জন্য এককভাবে এ দিনকে বেছে নেওয়া নিষেধের হিকমত হচ্ছে, জুমু‘আর দিন সপ্তাহিক ঈদের দিন। জুমু‘আ ইসলামের তৃতীয় ঈদ হিসেবে গণ্য। প্রথম ঈদ হচ্ছে রামাযান শেষে ঈদুল ফিতর। দ্বিতীয়টি কুরবানীর ঈদ। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, সাপ্তাহিক ঈদ জুমু‘আর দিন।[2] একারণেই আলাদাভাবে এদিনে সাওম রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।

তাছাড়া এদিনে পুরুষদের জন্য উচিৎ হচ্ছে আগেভাগে জুমু‘আর সালাতে যাওয়া, দো‘আ যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতে মাশগুল হওয়া। এ দিনটি ‘আরাফার দিবসের অনুরূপ। আরাফার দিবসে হাজীগণ সাওম রাখবেন না। কেননা এদিন তিনি দো‘আ ও যিকিরে মাশগুল থাকবেন। একটি মূলনীতি হচ্ছে: কয়েকটি ইবাদত যদি একত্রিত হয়, তখন যেটা পিছানো সম্ভব হবে না সেটা তাৎক্ষণিক আদায় করবে এবং যেটি পিছানো সম্ভব হবে তা পিছিয়ে দিয়ে পরে আদায় করবে।

যদি প্রশ্ন করা হয় যে, জুমু‘আর দিন সাপ্তাহিক ঈদের দিন হওয়ার কারণে যদি সাওম রাখা নিষেধ হয়ে থাকে, তবে তো অপর দু’টি ঈদের মত এদিনে অন্যান্য সাওম রাখাও হারাম হয়ে যায়?

উত্তরে আমরা বলব: এ দিনটির বিধান অন্য দু’ ঈদের চেয়ে ভিন্ন। কেননা এটি প্রতি মাসে চারবার আগমণ করে। একারণে এদিনে সাওম রাখার নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণরূপে হারাম নয়। তাছাড়া দু’ঈদের মাঝে আরো বিশেষ যে বৈশিষ্ট রয়েছে তা জুমু‘আর দিনে নেই।

কিন্তু যদি জুমু‘আর পূর্বে একদিন ও পরে একদিন সাওম পালন করে, তখন বুঝা যাবে যে, এককভাবে জুমু‘আর দিবস সাওম পালন করার উদ্দেশ্য ছিল না। আর এটা জায়েয।[3]এককভাবে জুমু‘আর দিনে সাওম রাখার নিষেধাজ্ঞা নফল এবং কাযা উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা হাদীসের নিষেধাজ্ঞা থেকে সাধারণভাবে একথাই বুঝা যায়। তবে যদি কোনো মানুষ এরকম ব্যস্ত থাকে যে, তার কাযা সিয়াম জুমু‘আর দিবস ছাড়া অন্য সময় আদায় করা সম্ভব নয়, তখন তার জন্য এককভাবে সে দিন সাওম পালন করা মাকরূহ নয়। কেননা তার ওযর রয়েছে।

>
[1] সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: সিয়াম, অনুচ্ছেদ: এককভাবে জুমু‘আর দিন সিয়াম রাখা মাকরূহ।

[2] রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় জুমু‘আর দিন ঈদের দিন।” (আহমাদ হাদীস নং ৭৬৮২)

[3] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেহ যেন শুধুমাত্র জুমআর দিবসে সিয়াম না রাখে। তবে এর পূর্বে একদিন বা পরে একদিন মিলিয়ে সিয়াম রাখতে পারে।” (বুখারী, অধ্যায়: সিয়াম হাদীস নং ১৮৪৯)