স্বালাতে মুবাশ্‌শির তাহাজ্জুদ আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

তাহাজ্জুদ নামাযের ক্বিরাআত লম্বা হওয়া বাঞ্ছনীয়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “শ্রেষ্ঠ নামায হল লম্বা কিয়াম।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, মিশকাত ৪৬, ৮০০নং)

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এক রাতে নবী (ﷺ)-এর সাথে নামায পড়লাম। তিনি কিয়াম করতেই থাকলেন, পরিশেষে আমি মন্দ ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, সে মন্দ ইচ্ছাটি কি? তিনি বললেন, আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, তাঁকে ছেড়ে দিয়ে বসে যাব! (বুখারী, মুসলিম, সহীহ)

হুযাইফা বিন ইয়ামান বলেন, এক রাতে নবী (ﷺ)-এর সাথে নামায পড়লাম। তিনি সূরা বাক্বারাহ্‌ পড়তে শুরু করলেন। আমি ভাবলাম, হয়তো বা তিনি ১০০ আয়াত পাঠ করে সিজদাহ করবেন। কিন্তু তিনি তা অতিক্রম করে গেলেন। ভাবলাম হয়তো বা তিনি সূরাটিকে ২ রাকআতে পড়বেন। কিন্তু তিনি তাও অতিক্রম করে গেলেন। ভাবলাম, তিনি হয়তো সূরাটি শেষ করে রুকূ করবেন। (কিন্তু না, তা না করে) সূরা নিসা শুরু করলেন। তাও পড়ে শেষ করলেন। তারপর সূরা আলে ইমরান ধরলেন এবং তাও পড়ে শেষ করলেন! ([1])

তিনি ধীরে-ধীরে আয়াত পাঠ করছিলেন। তাসবীহর আয়াত পাঠ করলে তাসবীহ পড়ছিলেন। প্রার্থনার আয়াত পাঠ করলে প্রার্থনা করছিলেন। আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত পাঠ করলে আশ্রয় প্রার্থনা করছিলেন। অতঃপর রুকূ করছিলেন। (মুসলিম, নাসাঈ, সুনান)

তিনি এই নামাযে এত দীর্ঘ কিয়াম করতেন যে, তার ফলে তাঁর পা ফুলে যেত। তাঁকে বলা হল যে, আপনার তো আগে-পিছের সকল ত্রুটি আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? (তাও আপনি এত কষ্ট করে ইবাদত করেন কেন?) তিনি বললেন, “আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হ্‌ব না?” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১২২০নং)

অবশ্য তিনি এক রাতে কুরআন খতম করতেন না। অবশ্য তিনি তিন রাতে কুরআন খতম করার অনুমতি দিয়েছেন; তার কমে নয়। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ৩ রাতের কমে কুরআন পড়ে, সে কিছুই বুঝে না।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, দারেমী, সুনান)

তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ১০০টি আয়াত পাঠ করে রাতের নামায পড়বে, তার নাম বিশুদ্ধচিত্ত কিয়ামকারীদের তালিকাভুক্ত হবে।” (দারেমী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক)

তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি ১০০টি আয়াত পাঠ করে রাতের নামায পড়বে, সে উদাসীনদের তালিকাভুক্ত হবে না।” (দারেমী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক)

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ১০টি আয়াত নামাযে পড়ে সে উদাসীনদের তালিকাভুক্ত হয় না, যে ১০০টি আয়াত নামাযে পড়ে সে আবেদদের তালিকাভুক্ত হয়। আর যে ১০০০টি আয়াত নামাযে পড়ে সে অজস্র সওয়াব অর্জনকারীদের তালিকাভুক্ত হয়।” (আবু দাঊদ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ তারগীব ৬৩৩ নং)

কখনো তিনি তাহাজ্জুদের নামাযে সূরা বানী ইসরাঈল ও যুমার পড়তেন। (আহমাদ, মুসনাদ) কখনো প্রায় ৫০ আয়াতের মত বা তার থেকে বেশী আয়াত তেলাওয়াত করতেন। (বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান) কখনো বা সূরা মুযযাম্মলের মত লম্বা সূরা পাঠ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান) একদা তিনি সূরা মাইদার ১১৮নং আয়াত বারবার পাঠ করতে করতে ফজর করে দিয়েছেন। (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ১২০৫নং)

এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার এক প্রতিবেশী রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে, কিন্তু ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ছাড়া অন্য কিছু পড়ে না; এটাকেই সে বারবার ফিরিয়ে পড়ে এবং এর চাইতে বেশী কিছু পড়ে না। আসলে এ ব্যক্তি তা খুবই কম মনে করল। কিন্তু নবী (ﷺ) বললেন, “সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! ঐ সূরা এক তৃতীয়াংশ কুরআনের সমতুল্য।” (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী)

কখনো সশব্দে, কখনো বা নিঃশব্দে এ ক্বিরাআত করা যায়। সাহাবী গুযাইফ বিনহারেস বলেন, একদা আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) প্রথম রাতে নাপাকীর গোসল করতেন, নাকি শেষ রাতে?’ তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘কোন রাতে তিনি প্রথম ভাগে গোসল করতেন, আবার কোন কোন রাতে শেষ ভাগে।’ আমি বললাম, ‘আল্লাহু আকবার! সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি (দ্বীনের) ব্যাপারে প্রশস্ততা রেখেছেন।’ অতঃপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তিনি বিতরের নামায প্রথম রাত্রিতে পড়তেন, নাকি শেষ রাত্রিতে?’ তিনি বললেন, ‘কখনো তিনি প্রথম রাত্রিতে বিত্‌র পড়তেন, আবার কখনো শেষ রাত্রিতে।’ আমি বললাম, ‘আল্লাহু আকবার! সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি (দ্বীনের) ব্যাপারে প্রশস্ততা রেখেছেন।’ পুনরায় আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তিনি (তাহাজ্জুদের নামাযে) সশব্দে ক্বিরাআত পড়তেন, নাকি নিঃশব্দে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি কখনো সশব্দে পড়তেন, আবার কখনো নিঃশব্দে।’ আমি বললাম, ‘আল্লাহু আকবার! সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি (দ্বীনের) ব্যাপারে প্রশস্ততা রেখেছেন।’ (মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান ২০৯, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ১২৬৩নং)

একদা মহানবী (ﷺ) রাত্রিকালে বাইরে এলে তিনি দেখলেন, আবূ বাক্‌র নিম্নস্বরে (তাহাজ্জুদের) নামায পড়ছেন। অতঃপর তিনি উমারের কাছে গিয়ে দেখলেন, তিনি উচ্চস্বরে নামায পড়ছেন। অতঃপর যখন তাঁরা উভয়ে তাঁর নিকট জমায়েত হলেন, তখন তিনি বললেন, “হে আবূ বাক্‌র! আমি তোমার কাছ দিয়ে পার হয়ে গেলাম, দেখলাম, তুমি নিম্নস্বরে নামায পড়ছ।” আবূ বাক্‌র বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি কেবল তাঁকে শুনিয়েছি, যাঁর কাছে আমি মুনাজাত করেছি।’ অতঃপর তিনি উমারের উদ্দেশ্যে বললেন, “আর আমি তোমার কাছ দিয়ে পার হয়ে গেলাম, দেখলাম, তুমি উচ্চস্বরে নামায পড়ছ।” উমার বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি তন্দ্রাভিভূত লোকদেরকে জাগিয়ে দিই এবং শয়তান বিতাড়ণ করি।’ নবী (ﷺ) বললেন, “হে আবূ বাক্‌র! তোমার আওয়াজকে একটু উঁচু কর। আর হে উমার! তোমার আওয়াজকে একটু নিচু কর।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১২০৪নং)

(১) এই হাদিস থেকে বুঝা যায় নে মুশাফের তরতীব অনুজায়ী সূরা পড়া জরুরী নয়। জরুরী হলে তিনি সূরা নিসার আগে আলে-ইমরান পড়তেন।