স্বালাতে মুবাশ্‌শির কাযা নামায আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

কোন নামায ছুটে গেলে সে নামায কাযা পড়ার পরই বর্তমান নামায পড়া যাবে। অনুরুপ কয়েক ওয়াক্তের নামায এক সঙ্গে কাযা পড়তে হলে অনুক্রম ও তরতীব অনুযায়ী প্রথমে ফজর, অতঃপর যোহ্‌র, অতঃপর আসর, মাগরেব, এশা -এই নিয়মে আদায় করতে হবে। আগা-পিছু করে পড়া বৈধ নয়। খন্দকের যুদ্ধে মহানবী (ﷺ) ও সাহাবাগণের কয়েক ওয়াক্তের নামায ছুটলে ঐ তরতীব খেয়াল রেখেই পরপর আদায় করেছিলেন। (বুখারী, মুসলিম, প্রমুখ, নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/২৯)

এখন যদি কেউ যোহরের নামায কাযা রেখে আসরের অক্তে মসজিদে আসে, তাহলে সে প্রথমে যোহরের নামায পড়ে নেবে। তারপর পড়বে আসরের নামায। কিন্তু কেউ যদি এমন সময় মসজিদে আসে, যে সময় আসরের জামাআত চলছে, তাহলে সে একাকী কাযা পড়তে পারে না। কারণ, জামাআত চলাকালে একই স্থানে দ্বিতীয় জামাআত বা পৃথক একাকী (জামাআতী) নামায হয় না। (মুসলিম, মিশকাত ১০৫৮ নং) আবার কাযা রেখে আসরের নামায জামাআতে পড়লে যোহরের পূর্বে আসর পড়া হয়। আর তা হল তরতীব ও অনুক্রমের পরিপন্থী। সুতরাং সে ব্যক্তি তরতীব বজায় রেখে যোহরের কাযা আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হবে এবং তারপর একাকী আসর পড়ে নেবে। (তুহ্‌ফাতুল ইখওয়ান, ইবনে বায ৬৬পৃ:)

এ ক্ষেত্রে ইমামের নিয়ত ভিন্ন হলেও উক্ত মুক্তাদীর নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। কারণ, ইমাম-মুক্তাদীর নিয়ত পৃথক পৃথক হলেও উভয়ের নামায যে শুদ্ধ, তার প্রমাণ সুন্নাহতে মজুদ।

মহানবী (ﷺ) একদা এক ব্যক্তিকে একাকী নামায পড়তে দেখলে তিনি অন্যান্য সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এমন কেউ কি নেই, যে এর সাথে নামায পড়ে একে (জামাআতের সওয়াব) দান করবে?” এ কথা শুনে এক ব্যক্তি উঠে তার সাথে নামায পড়ল। (আবূদাঊদ, সুনান ৫৭৪, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১১৪৬ নং) অথচ সে মহানবী (ﷺ) এর সাথে ঐ নামায পূর্বে পড়েছিল। সুতরাং ইমামের ছিল ফরয এবং মুক্তাদীর নফল।

একদা তিনি সালাম ফিরে দেখলেন, মসজিদের এক প্রান্তে দুই ব্যক্তি জামাআতে নামায পড়ে নি। কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘আমরা আমাদের বাসায় নামায পড়ে নিয়েছি।’ তিনি বললেন, “এমনটি আর করো না। বরং যখন তোমাদের কেউ নিজ বাসায় নামায পড়ে নেয়, অতঃপর (মসজিদে এসে) দেখে যে, ইমাম নামায পড়ে নি, তখন সে যেন (দ্বিতীয়বার) তাঁর সাথে নামায পড়ে। আর এ নামায তার জন্য নফল হবে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৫৭৫, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ১১৫২ নং)

অনুরুপ মুআয বিন জাবাল (রাঃ) মহানবী (ﷺ) এর সাথে তাঁর মসজিদে (নববীতে) নামায পড়তেন। অতঃপর নিজ গোত্রে ফিরে এসে ঐ নামাযেরই ইমামতি করতেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৫০ নং) অতএব বুঝা গেল যে, এক নামাযের পশ্চাতে অন্য নামায পড়া দোষাবহ্‌ ও অশুদ্ধ নয়। সুতরাং উক্ত ক্ষেত্রে তরতীবের ওয়াজেব উলঙ্ঘন না করে যোহরের কাযা নামায আসরের জামাআতে পড়ে নেওয়াই উত্তম।

পক্ষান্তরে মহানবী (ﷺ) এর এই হাদীস “যখন নামায খাড়া হয়, তখন ফরয (বা সেই) নামায ছাড়া অন্য কোন নামায নেই।” (বুখারী বিনা সনদে, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/১৭৪, মুসলিম, সহীহ ৭১০ নং, আহমাদ, মুসনাদ ২/৩৫২, প্রমুখ) এর অর্থ হল জামাআত খাড়া হলে ফরয বা (ঐ নামায তাকে পড়তে হলে) ঐ নামাযে শামিল হওয়া ছাড়া পৃথক করে কোন নফল বা সুন্নত নামায পড়া বৈধ নয়। অর্থাৎ ইকামতের পর আর কোন সুন্নত বা নফল নামায শুদ্ধ হবে না। হাদীসের ব্যাখ্যা দাতাগণ এরুপই ব্যাখ্যা করেছেন। (দেখুন, শরহুন নওবী ৫/২২১, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/১৭৫, আউনুল মা’বূদ ৪/১০১) এখানে এক নামাযের জামাআতে অন্য নামাযের নিয়ত করে নামায হবে না -সে উদ্দেশ্য নয়। (এ ব্যাপারে ইমামতির বিবরণও দ্রষ্টব্য।) তাছাড়া ইমাম-মুক্তাদীর নিয়ত ভিন্ন হলেও যে উভয়ের নামায শুদ্ধ, তা পূর্বেই প্রতিপাদিত হয়েছে।