সুবহে সাদেক উদিত হলে ফজরের নামাযের সময় শুরু হয় এবং রোযাদারের জন্য পানাহার হারাম হয়ে যায়। (সুবহে সাদেক বলা হয় সেই সময়কে, যে সময়ে ভোরের আভা পূর্ব আকাশে উত্তর-দক্ষিণে বিস্থির্ণ অবস্থায় দেখা যায়।) আর এর শেষ সময় হল সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।

তবে এই নামায প্রথম অক্তে ‘গালাসে’ (একটু অন্ধকারে কাক ভোরে) পড়া উত্তম।

মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) ফজরের নামায পড়তেন। অতঃপর মহিলারা তাদের চাদর জড়িয়েই নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেত। কিন্তু অন্ধকারের জন্য তাদেরকে চেনা যেত না।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৫৯৮নং)

আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, ‘একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) তখন ফজরের নামায পড়লেন, যখন কেউ তার পাশ্ববর্তী সঙ্গীর চেহারা চিনতে পারত না অথবা তার পাশে কে রয়েছে তা জানতে পারত না।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৩৯৫, ৩৯৮নং)

আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, তিনি [নবী (ﷺ)] একবার ফজরের নামায অন্ধকারে (খুব ভোরে) পড়লেন। অতঃপর দ্বিতীয় বার ফর্সা করে পড়লেন। এরপর তাঁর ফজরের নামায অন্ধকারেই হত। আর ইন্তেকাল অবধি কোন দিন পুনর্বার (ফজরের নামায) ফর্সা করে পড়েন নি।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৩৯৪নং)

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “তোমরা ফজরের নামায ফর্সা করে পড়। কারণ, তাতে সওয়াব অধিক।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ৬১৪নং)

এই হাদীসের ব্যাখ্যা এই যে, ‘ফজর স্পষ্টরুপে প্রকাশ হতে দাও, নিশ্চিতরুপে ফজর উদিত হওয়ার কথা না জেনে নামাযের জন্য তাড়াহুড়া করো না।’ অথবা ‘তোমরা ফজরের নামায লম্বা ক্বিরাআত ধরে ফর্সা করে পড়। এতে অধিক সওয়াব লাভ হবে।’ আর এ কথা বিদিত যে, মহানবী (ﷺ) নিজে এই নামাযে (কখনো কখনো) ৬০ থেকে ১০০ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন এবং যখন নামায শেষ করতেন, তখন প্রত্যেকে তার পাশের সাথীকে চিনতে পারত। (বুখারী ৫৯৯নং)

অথবা ‘ চাঁদনী রাতে একটু ফর্সা হতে দাও। যাতে ফজর হওয়া স্পষ্ট ও নিশ্চিতরুপে বুঝা যায়।’ (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন /১১৪-১১৫)

যেহেতু তাঁর আমল মৃত্যু পর্যন্ত ফজরের নামায ফর্সা করে ছিল না, বরং এ নামায একটু অন্ধকার থাকতেই শুরু করতেন, সেহেতু উক্ত হাদীসের এই সব ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই যুক্তিযুক্ত।