সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ওযূ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম ১ টি

ওযূর রুকন হলো: যার মাধ্যমে ওযূর মূল কাঠামো গঠিত হয়। যদি একটি রুকন উলট-পালট হয়ে যায় তাহলে, ওযূ বাতিল হয়ে যাবে এবং তা শরীয়াতসম্মত হবে না। সেগুলো হলো:

১। সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধৌত করা:

মুখমণ্ডল দ্বারা সমস্ত চেহারা উদ্দেশ্য। তার সীমা হলো: দৈর্ঘের দিক থেকে মাথার অগ্রভাগের কপালের গোড়া তথা চুল গজানোর স্থান হতে চোয়াল ও থুৎনীর নীচ পর্যন্ত, আর প্রস্থে এক কানের লতি থেকে অপর কানের লতি পর্যন্ত।

মুখমণ্ডল ধৌত করা ওযূর রুকন সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি রুকন। এটা ব্যতীত ওযূ বিশুদ্ধ হবে না। মহান আল্লাহ্‌ বলেন:

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ﴾

হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ধৌত কর (সূরা মায়েদা-৬)

যে সমস্ত রাবী মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর নিয়মাবলীর হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাদের প্রত্যেকেই মুখমণ্ডল ধৌত করা রুকনটি সাব্যাস্ত করেছেন এবং বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব :

মুখ ধৌত করা ও তাতে পানি দিয়ে গড়গড়া করাকে কুলি বলা হয়। নাকের মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে নি:শ্বাস দ্বারা তা নাকের প্রান্ত সীমায় পৌঁছানোকে إستنشاق বা নাকে পানি দেয়া বলে। আর নাকে পানি দেয়ার পর তা থেকে পানি ঝেড়ে বের করে দেয়াকে إستنثار বা নাক ঝাড়া বলে। আলিমদের বিশুদ্ধ অভিমতে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব। এর কারণ নিম্নরূপ:

(১) আল্লাহ্‌ তা‘আলা মুখমণ্ডল ধৌত করার আদেশ দিয়েছেন। ইতিপূর্বে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আর মুখ ও নাক মুখমন্ডরের অন্তর্ভুক্ত। মুখের ভিতরের অংশ ছাড়া শুধু বাহিরের অংশকে মুখ বলে নির্দিষ্ট করা উচিৎ নয়, কেননা আরবী ভাষায় সবকিছুর সমষ্টিকে মুখমণ্ডল বলা হয়। যদি তুমি বল যে, মুখ ও নাকের ছিদ্রের তো আলাদা নাম রয়েছে। আরবী ভাষায় তো এগুলোকে মুখ বলা হয় না?

এ ক্ষেত্রে আমরা বলব: তাহলে তো দু‘গাল, কপাল, নাকের বাহ্যিক অংশ, দুই ভ্রূ ও মুখমণ্ডললের সমস্ত অংশের আলাদা আলাদা বিশেষ নাম রয়েছে, এগুলোকে তাহলে মুখ বলা যাবে না! যদি এরূপ দাবী করা হয়; তাহলে মুখমণ্ডল ধৌত করা ওয়াজিব হওয়ার আবশ্যকতা বাতিলের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যাবে।[1]

(২) আল্লাহ্‌ তা‘আলা শুধু সাধারণভাবে মুখমণ্ডল ধৌত করার আদেশ দিয়েছেন। আর মহানাবী (ﷺ) তাঁর কর্ম ও শিক্ষার মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ফলে তিনি যখন ওযূ করেছেন তখন কুলি ও নাকে পানি দিয়েছেন। তিনি কখনও সামান্য ওযূ করে ওযূকে সংক্ষিপ্ত করেছেন, এমন কোন প্রমাণ তাঁর পক্ষ থেকে বর্ণিত হয় নি। রাসূল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে যখন কোন নির্দেশকে বাস্তবায়নের জন্য কোন কাজ প্রকাশ পায়, তখন তার বিধানটা ওয়াজিব চাহিদা অনুযায়ী ঐ নির্দেশের হুকুমের মতো হয়ে থাকে।[2]

(৩) নাকে পানি দেয়া ও নাক ঝাড়া প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ) এর নির্দেশ প্রমাণিত হয়েছে:

مَنْ تَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ وفى رواية إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْعَلْ فِي أَنْفِهِ، ثُمَّ لِيَنْثُرْ

(ক) যে ওযূ করবে সে যেন নাক ঝেড়ে ফেলে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে- তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ওযূ করবে তখন সে যে তার নাকের মধ্যে পানি প্রবেশ করায়। অতঃপর যেন নাক ঝেড়ে ফেলে।[3]

إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَلْيستنشق

(খ) তোমাদের কেউ যখন ওযূ করে, তখন সে যেন তার নাকে পানি দেয়।[4]

وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا

(গ) সিয়াম পালনকারী না হলে, নাকে ভালভাবে পানি পৌঁছাও।[5]

শাইখুল ইসলাম বলেন,[6] ‘‘মহানাবী (ﷺ) নাকে পানি দেয়ার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। এটা মূলত মুখের চেয়ে নাক ধৌত করা বেশি উত্তম এ বিবেচনায় নয়। যদি এমনটি বিবেচনা করা হতো তাহলে মুখকে ধৌত করাই বেশি উত্তম হতো। কেননা নাকের চেয়ে মুখ বেশি মর্যাদার অধিকারী, কারণ মুখ দ্বারা আল্লাহ্‌র যিকর করা হয়, কুরআন পাঠ করা হয় এবং মুখ থেকেই বেশি দুর্গন্ধ বের হয়। আসলে নাককে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা মুখের সাথে সাদৃশ্য রাখে তাই। আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন। যেহেতু মিসওয়াক দ্বারা মুখ পবিত্র করার বিধান রয়েছে এবং এ ব্যাপারে জোরালো নির্দেশও দেয়া হয়েছে। আবার শরীয়াতে খাওয়ার পর মুখ ধৌত করার কথা বলা হয়েছে এবং কোন কোন মতে খাওয়ার পূর্বেও মুখ ধৌত করার কথা বলা হয়েছে, সেহেতু বুঝা যায় যে, ইসলামী শরীয়াত নাকের চেয়ে মুখ পবিত্র করার ব্যাপারে বেশি তৎপর। তবে নাকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে শুধু তার বিধান বর্ণনা করার জন্য। যেন কেউ নাক ধৌত করা ছেড়ে না দেয়’’।

(৪) অনুরূপভাবে কুলি করার ব্যাপারেও অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যার সনদগত অবস্থা হাসান পর্যায়ের। লাকীত বিন সবরাহ এর বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূল (ﷺ) বলেন: إِذَا تَوَضَّأْتَ فَمضمض অর্থাৎ: যখন তুমি ওযূ করবে তখন কুলি কর।[7]

আমার বক্তব্য: যদি কেউ বলে যে, কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব হওয়ার দলীলগুলোকে সালাতে ভুলকারীর ঘটনায় বর্ণিত রিফায়াহ বিন রাফেঈ এর হাদীস দ্বারা বৈধতার দিকে ফিরানো যেতে পারে। যেমন সে হাদীসে বলা হয়েছে,

«إِنَّهَا لَا تَتِمُّ صَلَاةُ أَحَدِكُمْ حَتَّى يُسْبِغَ الْوُضُوءَ كَمَا أَمَرَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ، فَيَغْسِلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ، وَيَمْسَحَ بِرَأْسِهِ وَرِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ،»

রাসূল (ﷺ) সালাতে ভুলকারীকে বললেন: তোমাদের কারও সালাত ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ না আল্লাহ্‌র নির্দেশিত পন্থা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গভাবে ওযূ করা হয়। সুতরাং সে যেন তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করে, মাথা মাসাহ করে ও দু’পায়ের গিঁঠ পর্যন্ত ধৌত করে।[8]

অত্র হাদীসে আল্লাহ্‌র নির্দেশের মতই কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয় নি। সুতরাং এ হাদীসটি কুরআনের আয়াতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর আয়াতে সংক্ষিপ্তভাবে মুখমণ্ডললের কথা উল্লেখ করা হয় নি, যার ফলে এটা বলা যাবে না যে, হাদীস দ্বারা এর ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট করতে হবে। এ মতামতটিও শক্তিশালী এবং যথোপযুক্ত। আল্লাহ্‌ই ভাল অবগত।

কিছু প্রয়োজনীয় কথা:

ওযূ ও গোসল এ দু’টি পবিত্রতার ক্ষেত্রে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার বিধানের ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। এ ব্যাপারে চারটি অভিমত পাওয়া যায়:[9]

১ম অভিমত: কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া শুধু গোসল করার ক্ষেত্রে ওয়াজিব, ওযূর ক্ষেত্রে নয়। ইমাম আবূ হানীফা, সাওরী ও আহলুর রায়গণ এমত পোষণ করেছেন।

২য় অভিমত: ওযূ ও গোসল উভয়ের ক্ষেত্রে এ দু’টি সুন্নাত। এটা ইমাম মালিক, শাফেঈ, লাইস ও আওযায়ীসহ একদল বিদ্বানের অভিমত।

৩য় অভিমত: ওযূ ও গোসল উভয়ের ক্ষেত্রেই এ দু’টি করা ওয়াজিব। এ অভিমত পোষণ করেছেন, আত্বা, ইবনে জুরাইয, ইবনুল মুবারাক ও ইসহাক। এটা ইমাম আহমাদ (রাহি.) এরও একটি রেওয়ায়ত এবং হাম্বলীদের প্রসিদ্ধ মাযহাব।

৪র্থ অভিমত: নাকে পানি দেয়া ওযূ ও গোসলের ক্ষেত্রে ওয়াজিব এবং কুলি করা উভয় ক্ষেত্রে সুন্নাত। একটি বর্ণনা মতে ইমাম আহমাদ এ মত পোষণ করেছেন। আবূ উবাইদ, আবূ ছাওর ও আসহাবে হাদীসের একটি দলও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইবনুল মুনযির এ মতামতকে পছন্দ করেছেন।

দাড়ি ও মুখমণ্ডলের সমগ্র চুল ধৌত করা:[10]

‘যখন মুখমণ্ডলের উপর গজানো সমস্ত চুল তথা দাড়ি, গোঁফ , নিমদাড়ি[11], ভ্রূ, ও দু’চোখের পশমসমূহ ঘন হওয়ার ফলে মুখের চামড়া দেখা না যায়, তাহলে বাহ্যিকভাকে তা ধুয়ে ফেললেই চলবে। আর যদি চামড়া দেখা যায়, তাহলে দাড়ির সাথে চামড়াও ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি কিছু অংশ পাতলা হয় আর কিছু অংশ ঘন হয় তাহলে দাড়ির সাথে পাতলা অংশটুকু ধুয়ে ফেলা ওয়াজিব এবং ঘন অংশটুকু বাহ্যিকভাবে ধুলেই চলবে।

আর যদি দাড়ি লম্বা হয় তাহলে ইমাম আবূ হানীফা (রাহি.) এর মতে ও ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর একটি বর্ণনা মতে, লম্বা অংশটুকু ধোয়া ওয়াজিব নয়, শুধু মুখমণ্ডললের সীমানায় যে দাড়িগুলো রয়েছে তা ধৌত করলেই চলবে। কেননা وجه বা মুখমণ্ডল দ্বারা শুধু মুখের চামড়া উদ্দেশ্য।

অপরদিকে, ইমাম শাফেঈর মতে ও ইমাম আহমাদের প্রকাশ্য অভিমতে, লম্বা অংশটুকু ধোয়া ওয়াজিব, দাড়ি যত বড়ই লম্বা হোক না কেন। কেননা যে অংশটুকু ধোয়া ফরয সেখান থেকে এ দাড়ি উদ্গত হয়েছে। ফলে বাহ্যিকভাবে তা মুখমণ্ডললের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। আল্লাহ্‌ই সর্বাধিক অবগত।

২। দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করাঃ

মহান আল্লাহ্‌ বলেন:

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ﴾

অর্থাৎ: হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতে দ-ায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর (সূরা মায়েদা- ৬)।

বিদ্বানগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ওযূতে উভয় হাত ধৌত করা ওয়াজিব।

জেনে রাখা ভাল যে, আল্লাহ্‌র বাণী: وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ এর মধ্যে ‘ إِلَى’ অব্যয়টি مع (সাথে) এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, আল্লাহ্‌র বাণী: وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَهُمْ إِلَى أَمْوَالِكُمْ অর্থাৎ: তোমরা তাদের মালকে তোমাদের মালের সহিত ভক্ষণ করো না (সূরা নিসা-২)। অন্যত্রে বলা হয়েছে- وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُم - অর্থাৎ: مع قُوَّتِكُم (এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরও শক্তি বৃদ্ধি করবেন)।

মুবাররাদ বলেন: যখন সীমারেখাটা সীমায়িত বস্ত্তর সত্তা হবে, তখন সীমারেখাটি তার মধ্যে প্রবিষ্ট হবে। এর উপর ভিত্তি করে দু’হাতের কনুইকে ধৌত করার মধ্যে শামিল করা ওয়াজিব। কতিপয় মালিকী ব্যতীত এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত।[12]

আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ) এর আমল এমতামতকে শক্তিশালী করে:

عَنْ نُعَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْمُجْمِرِ، قَالَ: رَأَيْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَتَوَضَّأُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي الْعَضُدِ، ثُمَّ يَدَهُ الْيُسْرَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي الْعَضُدِ، ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي السَّاقِ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى حَتَّى أَشْرَعَ فِي السَّاقِ "، ثُمَّ قَالَ: " هَكَذَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَتَوَضَّأُ.

নু’আইম ইবনে আবদুলস্নাহ্ আল-মুজমির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ) কে ওযূ করতে দেখেছি। তিনি খুব ভালোভাবে মুখমণ্ডল ধুলেন, এরপর ডান হাত ধুলেন এবং বাহুর কিছু অংশ ধুলেন। পরে বাম হাত ও বাহুর কিছু অংশসহ ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর ডান পায়ের নলার কিছু অংশসহ ধুলেন, এরপর বাম পাও একইভাবে ধুলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে এভাবে ওযূ করতে দেখেছি।[13]

এর পর একটি কায়দা হলো: যে বিষয় ছাড়া ওয়াজিব পূর্ণ হয় না, তা পালন করা ওয়াজিব । তদ্রম্নপভাবে হাত পূর্ণভাবে ধৌত করা বুঝা যায় না যতক্ষণ না দু’কনুই বরাবর পানি প্রবাহিত করা হয়।[14]

৩। মাথা মাসাহ করা:

আল্লাহ্‌ বলেন:

﴿وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ﴾

অর্থাৎ: তোমরা তোমাদের মাথা মাসাহ কর (সূরা মায়েদা - ৬) ।

বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, মাথা মাসাহ করা ফরয। তবে কতটুকু পরিমাণ মাসাহ করলে যথেষ্ট হবে, সে পরিমাণ নিয়ে মতভেদ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনটি মতামত পাওয়া যায়:

১ম মতামত: নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা ওয়াজিব:

এটা ইমাম মালিক (রাহি.) এর মাযহাব। ইমাম আহমাদ ও তার অধিকাংশ অনুসারীদের প্রসিদ্ধ মতামত এটিই। আবূ উবাইদ ও ইবনে মুনযিরও এ মত ব্যক্ত করেছেন। ইবনে তাইমিয়াহ এ মতটিকে পছন্দ করেছেন।[15] তাদের দলীল নিম্নরূপ:

(১) আল্লাহ্‌ বাণী: وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ - অত্র আয়াতে ‘ب’ (বা) অব্যয়টি إلصاق বা মিলানোর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং আয়াতের মূল উদ্ধৃতি হবে - وَامْسَحُوا رُءُوسكُمْ - যেমনটি তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসাহ করা হয়। কেননা উভয় বিধানটি কুরআনে একই শব্দে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ্‌ মুখমণ্ডল মাসাহ করার ব্যাপারে বলেন: ﴾ فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ ﴿ অর্থাৎ: সমস্ত মুখমণ্ডল মাসাহ কর (সূরা মায়েদা -৬)।

(২) এই নির্দেশটিকে মহানাবী (ﷺ) এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে । মহানাবী (ﷺ) যখন ওযূ করতেন তখন সমগ্র মাথা মাসাহ করতেন। তন্মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ বিন যায়েদ বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখযোগ্য, তিনি বলেন:

أَتَى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ، فَأَخْرَجْنَا لَهُ مَاءً فِي تَوْرٍ مِنْ صُفْرٍ[16] فَتَوَضَّأَ، فَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، وَيَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ، وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ، فَأَقْبَلَ بِهِ وَأَدْبَرَ، وَغَسَلَ رِجْلَيْهِ

অর্থাৎ: একবার রাসূল (ﷺ) আমাদের বাড়িতে এলেন। আমরা তাঁকে পিতলের একটি পাত্রে পানি দিলাম। তিনি তা দিয়ে ওযূ করলেন। তার মুখমণ্ডল তিনবার ও উভয় হাত দু’বার করে ধৌত করলেন এবং তাঁর হাত সামনে ও পেছনে এনে মাথা মাসাহ করলেন। আর উভয় পা ধৌত করলেন।

অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি তার সমস্ত মাথা মাসাহ করলেন।[17]

(৩) মুগিরাহ বিন শু‘বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:تَوَضَّأَ فمَسَحَ عَلَى خُفَّيْه، وَمُقَدَّمِ رَأْسِهِ وَعَلَى عِمَامَتِهِ

অর্থাৎ: রাসূল (ﷺ) একদা ওযূ করলেন, অতঃপর মোজার উপর, মাথার অগ্রভাগে এবং পাগড়ির উপর মাসাহ করলেন।[18]

যদি মাথার অগ্রভাগ মাসাহ করাই যথেষ্ট হতো, তাহলে তিনি কেন পাগড়ির উপর মাসাহ করলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত মাথাই মাসাহ করা ওয়াজিব।

২য় অভিমত : মাথার কিছু অংশ মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে:

এটা ইমাম আবূ হানীফা ও শাফেঈ (রাহি.) এর অভিমত।[19] তারা আবার মতভেদ করেছেন, কতটুকু অংশ মাসাহ করলে যথেষ্ট হবে। কেউ কেউ বলেন, তিন চুল পরিমাণ মাসাহ করলেই চলবে। কেউ বলেন, মাথার চার ভাগের একভাগ মাসাহ করতে হবে। আবার কারও মতে, মাথার অর্ধেক মাসাহ করতে হবে। তাদের দলীল হলো:

(১) আল্লাহ্‌র বাণী - وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ- আয়াতে ‘ب’ (বা) অব্যয়টি تبعيض তথা আংশিক অর্থ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। إلصاق বা মিলানোর অর্থে ব্যবহৃত হয় নি।

(২) রাসূল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ناصيه (নাসিয়া) তথা মাথার অগ্রভাগ মাসাহ করেছেন।

৩য় অভিমত: নারী ব্যতীত পুরুষদের জন্য সমস্ত মাথা মাসাহ করা ওয়াজিব :

এটা ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর একটি অভিমত। তিনি বলেন, আমি মনে করি: মহিলাদের মাথা মাসাহ করার ব্যাপারে শিথিলতা রয়েছে। হযরত আয়িশা (রা.) তার মাথার অগ্রভাগ মাসাহ করতেন। ইবনে কুদাম (রাহি.) বলেন, ‘‘ ইমাম আহমাদ (রাহি.) হলেন একজন আহলুল হাদীস বিদ্বান। সুতরাং আল্লাহ্‌র কৃপায় তাঁর নিকট হাদীস সাব্যাস্ত হওয়া ব্যতীত শুধুমাত্র ঘটনা থেকে দলীল গ্রহণের প্রত্যাশা করা যায় না।[20]

আমার বক্তব্য (আবূ মালিক): পূর্বের আলোচনার মধ্যে বিশুদ্ধ অভিমত হলো: ওযূতে সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করাই ওয়াজিব। কারণ এর দলীল বেশি শক্তিশালী। আর যারা বলেন যে, ‘ب’ অব্যয়টি تبعيض বা আংশিক অর্থ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, তাদের এ কথা সঠিক নয়। কেননা সরফের পন্ডিত সিবওয়ায় এ কথাটিকে স্বীয় গ্রন্থে ১৫ বার অস্বীকার করেছেন। ইবনে বুরহান বলেন: যারা ‘ب’ অব্যয়টি تبعيض বা আংশিক অর্থ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করেন, তাদের এ কথার কোন ভিত্তি নেই। কেননা এটা ভাষাবিদদের কাছে অপরিচিত।[21]

রাসূল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে একটিও সহীহ হাদীস নেই যে, তিনি মাথার আংশিক মাসাহ করেছেন। তবে তিনি যখন ناصيه (নাসিয়া) বা মাথার অগ্রভগে মাসাহ করেছেন তখন তিনি তা পূর্ণ করার জন্য পাগড়ির উপরও মাসাহ করেছেন।[22]

আর এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য করার ব্যাপারে কোন প্রমাণ রয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে নারীদের ঘোমটার (খিমার) উপর মাসাহ করা জায়েয । যদি তারা ঘোমটাসহ মাথার অগ্রভাগ মাসাহ করে তাহলে তা বিতর্কমুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম হবে। আল্লাহ্‌ই সর্বাধিক অবগত ।

প্রয়োজনীয় কথা

মাথায় যদি মেহেদী বা আঠালো দ্রব্যের প্রলেপ লাগানো থাকে, তাহলে তার উপর মাসাহ করা বৈধ:

কেননা মহানাবী (ﷺ) থেকে প্রমাণিত যে, তিনি ইহরাম অবস্থায় মাথার চুলে আঠালো দ্রব্যের প্রলেপ লাগিয়েছেন (এ সংক্রান্ত আলোচনা হাজ্জ অধ্যায়ে আলোচিত হবে)। সুতরাং ওযূর কারণে তা কষ্ট করে খুলে ফেলার প্রয়োজন নেই। কারণ মাথার সাথে যা লাগানো থাকে তা মাথারই আওতাধীন। আল্লাহ্‌ই সর্বাধিক অবগত ।

৪। দু’ কান মাসাহ করা:

মাথার সাথে কানদ্বয় মাসাহ করা ওয়াজিব। কেননা দু’কান মাথার অন্তর্ভুক্ত ।

মহানাবী (ﷺ) এর পক্ষ থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘দু’কান মাথার অন্তর্ভুক্ত’।[23] বিশুদ্ধ অভিমতে হাদীসটি মারফূ সূত্রে যঈফ। তবে অনেক সালাফের পক্ষ থেকে সাব্যাস্ত আছে যে, দু’কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্যে ইবনে উমার (রাঃ) অন্যতম।[24]

বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহ সাক্ষ্য দেয় যে, মহানাবী (ﷺ) তার মাথা ও দু’কান একবার মাসাহ করেছেন।[25] এটা অনেক সাহাবীর পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: আলী (রাঃ), ইবনে আব্বাস(রাঃ), রুবাই (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) । সুনয়ানী (রাহি.) বলেন, তাদের প্রত্যেকেই মাথার সাথে দু’কান একই সাথে মাসাহ করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। যেমন: مرة (&একবার) শব্দটি দ্বারা তা স্পষ্ট বুঝা যায়। যদি তিনি দু‘কানের জন্য নতুনভাবে পানি নিতেন, তাহলে ‘তিনি মাথা ও দু’কান একবার মাসাহ করেছেন’ বলে যে বর্ণনাটি বর্ণিত হয়েছে তা সাব্যাস্ত হত না। যদি ধারণা করা হয় যে, এর দ্বরা উদ্দেশ্য তিনি মাসাহ বার বার করেন নি, আর তিনি দু’ কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নিয়েছেন। তাহলে তা হবে সুদূর প্রসারী ধারণা।[26]

আমার বক্তব্য: যদি দু’কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেয়া হয় তাহলে সমস্যা নেই। কেননা এ ব্যাপারে ইবনে উমার (রাঃ) থেকে প্রমাণ সাব্যাস্ত আছে।[27]

সতর্কবাণী: ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা শরীয়াত সম্মত নয় । কেননা এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি।[28]

৫। দুই পা গিঁঠসহ ধৌত করাঃ[29]

অধিকাংশ আহলে সুন্নাহ এর নিকট দু’পা ধৌত করা ওয়াজিব। কেননা মহান আল্লাহ্‌ বলেন:

وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ আয়াতে বর্ণিত পূর্বের সকল مغسولات তথাধৌত করা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপর আতফ করার কারণে ‘أَرْجُلَكُمْ’ এ যবর দিয়ে পড়তে হবে।

যে সকল রাবী (বর্ণনাকারী) রাসূল (ﷺ) এর ওযূর করার পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন তাদের প্রত্যেকেই গিঁঠসহ পা ধৌত করার কথা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে উসমান (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখযোগ্য। সেখানে বলা হয়েছে: ‘অতঃপর তিনি তার দু’পা গিঁঠসহ তিনবার ধৌত করলেন।[30] দু’পায়ের গিঁঠ ধৌত করার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা যখন সীমারেখাটা সীমায়িত বস্ত্তর সত্তা হবে, তখন সীমারেখাটি তার মধ্যে প্রবিষ্ট হবে। যেমনটি এ বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারটি ইবনে উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীস দ্বারাও প্রমাণ করা যায়।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: تَخَلَّفَ عَنَّا النَّبِيُّ ﷺ فِي سَفْرَةٍ سَافَرْنَاهَا فَأَدْرَكَنَا - وَقَدْ أَرْهَقَتْنَا الصَّلاَةُ - وَنَحْنُ نَتَوَضَّأُ، فَجَعَلْنَا نَمْسَحُ عَلَى أَرْجُلِنَا، فَنَادَى بِأَعْلَى صَوْتِهِ: «وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ» مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا

অর্থাৎ: আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক সফরে রাসূল (ﷺ) আমাদের পেছনে রয়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেন, এ দিকে আমরা আসরের সালাত আদায় করতে দেরী করেছিলাম। আর আমরা ওযূ করছিলাম। আমরা আমাদের পা কোনমত পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তিনি উচ্চস্বরে বললেন: পায়ের গোড়ালীগুলোর (শুষ্কতার) জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। তিনি দু’বার বা তিনবার একথা বললেন।[31]

আর মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর মধ্যে মাসাহ করার ব্যাপারে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তা মোজা মাসাহ করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটা হলো একটা ওযর। এ ব্যাপারে পরে আলোচনা করা হবে। এ মাসআলার ব্যাপারে রাফেযী ও অধিকংশ শিয়াপন্থি দ্বিমত পোষণ করেন। তারা বলেন: শুধু দু’পা মাসাহ করা ওয়াজিব, তা ধৌত করার দরকার নেই।

সঠিক কথা হলো: প্রথম মতামতটিই (দু’পা ধৌত করা ওয়াজিব) আমল যোগ্য। আব্দুর রহমান ইবনে আবি লায়লা বলেন: ‘রাসূল (ﷺ) এর সাহাবাগণ দু’পা ধৌত করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন’।[32]

দু’হাত ও পায়ের আঙ্গুলসমুহ খিলাল করা:

আঙ্গুলসমূহ এবং তার আশে-পাশে যে অংশ রয়েছে তা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তা ধৌত করা ওয়াজিব। যদি খিলাল করা ছাড়া ধৌত কার্য সম্পূর্ণ না হয়, তাহলে খিলাল করা ওয়াজিব। আর যদি খিলাল করা ছাড়াই ধৌত কার্য সম্পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে খিলাল করা মুস্তাহাব। সামনে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।

৬। ধারাবাহিকতা রক্ষা করা:

তারতীব বা ধারাবাহিকতা হলো: ওযূর অঙ্গসমূহকে ক্রমান্বয়ে ধারাবাহিকভাবে পবিত্র করা, যে ভাবে আল্লাহ্‌ আয়াতে কারীমায় নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং প্রথমে মুখমণ্ডল, তারপর দু’হাত ধৌত করা, এরপর মাথা মাসাহ করা, এরপর দু’পা ধৌত করা । আলিমদের বিশুদ্ধ অভিমতে: ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব। এটা ইমাম শাফেঈ, হাম্বলী, আবূ সাওর, আবূ ওবাইদ এবং জাহেরী মাযহাবীদের অভিমত।[33]

তারা এটাকে ওয়াজিব বলে নিম্নোক্ত দলীল দিয়ে থাকেন:

(১) আল্লাহ্‌ তা‘আলা আয়াতে ওযূর ফরযগুলোকে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি দু’পা ধৌত করার কথা থেকে দু‘হাত ধেŠত করার কথা পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন যা কিনা ধৌত করা ফরয, আর হাত ও পা ধৌত করার মাঝে মাথা মাসাহ করার কথা উল্লেখ করেছেন, যা মাসাহ করা ফরয। আর আরবগণ কোন ফায়দা ছাড়া কোন দৃষ্টান্তের একটিকে অপরটি থেকে পৃথক করেন না। আর এখানে ফায়দা হলো: ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব এ কথাটি বুঝানো।[34]

(২) যে সমস্ত রাবী মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর পদ্ধতি বর্ণানা করেছেন, তারা তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেছেন।[35] আর মহানাবী (ﷺ) এর কর্ম আল্লাহ্‌র কিতাবের ব্যাখ্যা স্বরূপ।

(৩) বর্ণিত আছে: ‘একদা মহানাবী (ﷺ) ধারাবাহিকভাবে ওযূ করলেন অতঃপর বললেন: এ ভাবেই ওযূ করতে হবে। এ ভাবে ওযূ ব্যতীত সালাত কবুল হবে না’।[36] কিন্তু হাদীসটি যঈফ।

ইমাম মালিক, সাওরী এবং আসহাবে রা’য় এর মতে[37], ওযূতে তারতীব বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা মুস্তাহাব। এটা ওয়াজিব নয়।

তাদের দলীল হলো:

(১) আয়াতে ‘আতফ’ করাটা তারতীব এর দাবীদার নয়। পূর্বের আলোচনা দ্বারা এ কথা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

(২) যেমন: আলী (রাঃ) ও ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন: ‘‘যে অঙ্গগুলোই আগে ধেŠত করা হোক না কেন তাতে কোন সমস্যা নেই’’।[38]

এর বিপক্ষে জবাব দিয়ে ইমাম আহমাদ (রাহি.) ‘মাসাইলু ইবনুহু আবদুল্লাহ’ (২৭-২৮)- তে বলেন: বাম হাতকে ডান হাতের পূর্বে ধৌত করাতে কোন সমস্যা নেই।

আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন:

﴿ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ﴾

হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতে দ-ায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসাহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত কর (সূরা মায়েদা-৬) সুতরাং ডান হাতকে বাম হাতের পর ধৌত করাতে সমস্যা নেই।

আমার বক্তব্য: সু্ন্নাত অনুসরণের জন্য ডান হাত আগে ধেŠত করাই উত্তম । আল্লাহ্‌ই সর্বাধিক অবগত।

৭। মাওয়ালাত তথা ওযূর অঙ্গগুলো ধৌত করার সময় বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ধৌত করা:

মাওয়ালাত হলো: ওযূর অঙ্গগুলো তাড়াতাড়ি করে ধৌত করা, যেন নাতিশীতোষ্ণ মৌসুমে বিলম্ব করার কারণে ধৌত করা অঙ্গটি পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করার আগেই শুকিয়ে না যায়।

ইমাম শাফেঈ (রাহি.) এর প্রাচীন অভিমত ও আহমাদ (রাহি.) এ প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী: মাওয়ালাত ওয়াজিব। ইমাম মালিকও অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন । তবে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বকারী এবং ওযরগতভাবে বিলম্বকারীর মাঝে পার্থক্য করেছেন। শাইখুল ইসলাম এ মতটিকে পছন্দ করেছেন।[39]

এটা ওয়াজিব হওয়ার দলীল হলো, উমার ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ) বর্ণিত হাদীস:

أَنَّ رَجُلًا تَوَضَّأَ فَتَرَكَ مَوْضِعَ ظُفُرٍ عَلَى قَدَمِهِ فَأَبْصَرَهُ النَّبِيُّ ﷺ فَقَالَ: ارْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوءَكَ فَرَجَعَ، ثُمَّ صَلَّى

অর্থাৎ: একদা এক ব্যক্তি পায়ের নখ পরিমাণ জায়গা বাদ দিয়ে ওযূ করল। নাবী (ﷺ) তা দেখে তাকে বললেন: তুমি গিয়ে উত্তমরূপে ওযূ করে এসো। সুতরাং লোকটি গিয়ে উত্তমরূপে ওযূ করে সালাত আদায় করল।[40]

অপর এক বর্ণনায় নাবী কারীম (ﷺ)-এর কতিপয় সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত আছে:

«أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ رَأَى رَجُلًا يُصَلِّ وَفِي ظَهْرِ قَدَمِهِ لُمْعَةٌ قَدْرُ الدِّرْهَمِ، لَمْ يُصِبْهَا الْمَاءُ فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ ﷺ أَنْ يُعِيدَ الْوُضُوءَ وَالصَّلَاةَ»

অর্থাৎ: নাবী কারীম (ﷺ) এক ব্যক্তিকে সালাত পড়তে দেখলেন- যার পায়ের পাতার উপরের অংশে এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ঝকঝকে শুকনা ছিল, যাতে ওযূর সময় পানি পৌঁছে নি। নাবী কারীম (ﷺ) তাকে পুনরায় ওযূ করে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন।[41]

ইমাম আবূ হানীফা (রাহি.) ও শাফেঈ (রাহি.) এর নতুন মতামত অনুযায়ী এটা ওয়াজিব নয়। এটা ইমাম আহমাদ (রাহি.) এরও একটি বর্ণনা এবং ইবনে হাযম এ মতেরই প্রবক্তা।[42] তারা বলেন:

(১) আল্লাহ্‌ তা‘আলা অঙ্গসমূহ ধৌত করা ফরয করেছেন। সুতরাং যে তা আদায় করবে সে দায়িত্বমুক্ত হবে, চায় সে দেরীতে করুক অথবা যথাসময়ে সুবিন্যস্তভাবে করুক।

(২) না‘ফে থেকে বর্ণিত:

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ بَالَ فِي السُّوقِ ثُمَّ تَوَضَّأَ فَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ وَمَسَحَ رَأْسَهُ ثُمَّ دُعِيَ لِجَنَازَةٍ لِيُصَلِّيَ عَلَيْهَا حِينَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বাজারে পেশাব করে ওযূ করলেন, তিনি তার মুখমণ্ডল ও উভয় হাত ধৌত করলেন এবং মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর তাকে জানাযার সালাত আদায় করানোর জন্য ডাকা হলো, ফলে তিনি মাসজিদে প্রবেশ করে মোজার উপর মাসাহ করলেন এবং সালাত আদায় করালেন।[1]

(৩) যে সমস্ত হাদীসে ওযূ ও সালাত পুনরায় আদায় করার কথা বলা হয়েছে সে সমস্ত হাদীসকে তারা যঈফ মনে করেন।

(৪) তারা মহানাবী (ﷺ) এর বাণী- ارْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوءَكَ -এর তাবীল করে বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল পায়ের যে স্থানে পানি পৌঁছে নি তা পরিপূর্ণভাবে ধৌত করা।

আমার বক্তব্য: পূর্বোলেস্নখিত দ্বন্দ্বের সারকথায় বলা যায়, খালিদ বিন মি’দান থেকে নাবী করীম (ﷺ) - এর কতিপয় সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত হাদীস, যেখানে ওযূ ও সালাত পুনরায় আদায় করার আদেশ দেয়া হয়েছে’’ সেটিকে যারা সহীহ হাদীস মনে করেন তারা এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধোয়া ওয়াজিব মনে করেন। এছাড়া বাকি দলীলগুলো সম্ভবনাময়। আমার কাছে মনে হয়, এ হাদীসটির কারণে এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধোয়া ওয়াজিব। কেননা ওযূ হলো একটি ইবাদাত। সুতরাং তাতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার ক্ষেত্রে পার্থক্য বা বিলম্বিত করা যাবে না। আর ইবনে উমার এর আসারটিতে প্রকাশ্য বুঝা যায় যে, তা ছিল ওযর ও বাধ্যগত অবস্থায়। সুতরাং, স্বাভাবিক অবস্থাকে তার উপর কিয়াস করা যাবে না । আল্লাহ্‌ই সর্বাধিক অবগত।

তবে যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ধৌত করার ক্ষেত্রে সময়ের সামান্য ব্যবধান হয় তাহলে কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহ্‌ই সর্বাধিক অবগত।

[1] নাসলুল আউতার (১/১৭৪), আহকামুল কুরআন (২/৫৬৩) ইবনুল আরাবী প্রণীত।

[2] শারহুল উম্মদাহ (১/১৭৮) ইবনে তাইমিয়্যাহ প্রণীত। আত-তামাহীদ (৪/৫৬৩) ইবনু আব্দিল বার প্রণীত।

[3] সহীহ; বুখারী (১৬১), মুসলিম (২৩৭) প্রভৃতি।

[4] সহীহ; মুসলিম (২৩৭)।

[5] সহীহ; এর তাহকীক সামনে কয়েকবার আসবে।

[6] শারহুল উম্মদাহ (১/১৭৯-১৮০)।

[7] সহীহ; আবূ দাউদ (১৪০), তিরমিযী (৩৮), নাসাঈ (১/৬৬), ইবনে মাজাহ (৪৪৮)।

[8] সহীহ; আবূ দাউদ (৮৫৯), তিরমিযী (৩০২), নাসাঈ (২/২০, ১৯৩) ইবনে মাজাহ (৪৬০) প্রভৃতি।

[9] আল-মারওয়াযী প্রণীত ‘ইখতিলাফুল উলামা’ (পৃ. ২৩-২৪) আত-তামহীদ (৪/৩৪), আল-আউসাত (১/৩৭৯) ইবনু জাওযীর আত-তাহক্বীক (১/১৪৩), আল-মুহালস্না (২/৫০)।

[10] শরহেফাতহুল কাদীর (১/১২), আল-মুগনী (১/৮৭) আল-মাজেমু’ (১/৩৮০)।

[11] নিচের ঠোঁট ও থুতনির মাঝে গজানো কেশগুচ্ছকে নিমদাড়ী বলা হয়।

[12] আলমাসবূত্ব (১/৬), বিদায়াতুল মুজতাহিদ (১/১১), আলমাজমু (১/৩৮৯), আল-মুগনী (১/৯০)।

[13] সহীহ; মুসলিম (২৪৬)।

[14] আলস্নামা গামেদী প্রণীত ‘ইখতিয়ারাতু ইবনে কুদামাহ’ (১/১৬৪)।

[15] আল-মাদূনাহ (১/১৬), আল-মুগনী (১/৯২), আত্বাহুর (পৃ. ৩৫৮), আল-আউসাত (১/৩৯৯), মাজমু’ আল ফাতাওয়া (২১/১২৩)।

[16] التورঅর্থ: পাত্র অথবা পিয়ালা। আর الصفرঅর্থ: উত্তম পিতল।

[17] সহীহ; বুখারী (১৮৫), মুসলিম (২৩৫)।

[18] মুসলিম (১৭৫), আবূ দাউদ (১৫০), তিরমিযী (১০০), এ হাদীসের ব্যাপারে সমালোচনা করা হয়েছে, তবে আলবানী একে সহীহ বলেছেন।

[19] আল-মাসবূত্ব (১/৮), আল-মাজমু’ (১/৩৯৯), আল-মুগনী (১/৯২)।

[20] আল-মুগনী (১/৯৩)।

[21] নাসলুল আওতার (১/১৫৫), আল মুগনী (১/৮৭)।

[22] মাজমু’ আল ফাতাওয়া (২১/১২২), ইবনুল আরাবী প্রণীত আহকামুল কুরআন (২/৫৭১), সুবুলুস সালাম (১/১০৭)।

[23] যঈফ; এর অনেকগুলো সূত্র রয়েছে, যার প্রত্যেকটিই ত্রম্নটিযুক্ত। এর সমষ্টি দ্বারা ‘হাসান’ আখ্যা দেওয়ার ব্যাপারে মতানৈক্য করা হয়েছে। এমনকি- আলবানী (রহঃ) তাঁর ‘আছ-সহীহা’ (১/৫৫) গ্রন্থে বলেন, কতিপয় উলামা এ হাদীসকে মুতাওয়াতির পর্যায়ের বলে ধারণা করে থাকেন। আমাদের শাইখ এ হাদীসটি তার আন-নাযরাত কিতাবে উল্লেখ করে যঈফ আখ্যা দিয়েছেন। আর এটাই অতি উত্তম। অতপর সুপ্রসিদ্ধ শাইখ ‘হাসান’ ইমাম বাইহাক্বী প্রণীত আল-খালাফিয়্যাত (১/৪৪৮) এর হাশিয়া অতিনিপূণ ভাবে অনুসন্ধান শেষে একে যঈফ আখ্যা দিয়েছেন।

[24] এর সনদ হাসান; দারাকুতনী (১/৯৮), ইবনে আবী শাইবাহ (১/২৮) প্রভৃতি।

[25] সহীহ; আবূ দাউদ (১৩৩), তিরমিযী (৩৬), নাসাঈ (১/৭৪), ইবনে মাজাহ (৪৩৯) প্রভৃতি। ইবনে আববাসের সূত্রে এ হাদীসের বেশ কয়েকটি সূত্র পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে একে সহীহ আখ্যা দেওয়া হয়। এর মূল সনদ ইমাম বুখারী সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছেন (১৫৭)। এবং রুবাঈ বিনতে মুয়াববিয এর হাদীসটি তার শাহেদ। যা আবূ দাউদ (১২৬) তিরমিযী (৩৩), ইবনে মাজাহ (৪১৮) বর্ণনা করেছেন, আর এমন হাদীস মিকদাম ইবনে মা’দিকারিব থেকে ও বর্ণিত হয়েছে।

[26] সুবুলুস সালাম (১/৪৯)।

[27] তার সনদ সহীহ; মুসনাদে আবদুর রাযযাকে (২৯) বাইহাক্বী (১/৬৫)।

[28] মাজেমু’ ফাতাওয়া (১/৫৬), যাদুল মায়াদ (১/৪৯) আস-সিলসিলাতুয যাঈফা (৬৯-৭৪৪)।

[29] দু‘পায়ের গোঁড়ায় উদ্গত উঁচু হাড্ডিকে কা‘ব গিঠ বলা হয়।

[30] সহীহ; বুখারী (১৫৮), মুসলিম (২২৬)।

[31] সহীহ; বুখারী (১৬১), মুসলিম (২৪১)।

[32] ফতহুল বারী (১/২৬৬), আল-মুগনী (১/১২০)।

[33] আল-মাজমু’ (১/৪৩৩), আল-মুগনী (১/১০০), আল-মুহালস্না (২/৬৬)।

[34] অনুরূপ এসেছে আল মুগনী (১/১০০) তে।

[35] ওজুর বৈশিষ্ট বর্ণনায় নবী (স:) থেকে ২০ জন সাহাবীর বর্ণনা এসেছে, যার মধ্যে এ দুটি যঈফ হাদীস ছাড়া প্রত্যেকটি ধারাবাহিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। তবে আলবানী এ দু’টি হাদীসকে সহীহ বলেছেন। যেমন এসছে তামামুল মিন্না’ (৮৫ পৃ.) গ্রন্থে।

[36] যঈফ; আল-ইরওয়া (৮৫)।

[37] মাদূনাহ্ (১/১৪), আল-মাসবূত্ব (১/৫৫), শরহে ফতহুল কাদীর (১/৩০)।

[38] এটা আলী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একটি আসার হাদীস যা আহমাদ আল-ইলালে বর্ণনা করেছেন (১/২০৫), ইবনে অবি শায়বাহ (১/৫৫) দারাকুতনী (১/৮৮) গ্রন্থে যঈফ সনদে। এছাড়া এ মর্মে ইবনে মাসউদ থেকেও একটি আসার হাদীস এসেছে, যা ইমাম বুখারী তার আত-তারিখ (১৬৫০), আবু উবাঈদ তার আত-ত্বাহুর (৩২৫) গ্রন্থে হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে সেখানে "إن شاء بدأ فى الوضوء بيساره" শব্দে এসেছে। যেমনটি ইমাম আহমাদ উল্লেখ করেছেন।

[39] আল-উম্ম (১/৩০), আল মাজমু’ (১/৪৫১), কাশশাফুল কান্না (১/৯৩), আল-মাদূনাহ (১/১৫), আল-ইসিত্মযকার (১/২৬৭) মাজমু’ আল-ফাতাওয়া (২১/১৩৫)।

[40] সহীহ; মুসলিম (২৩২), ইবনে মাজাহ (৬৬৬), আহমাদ (১/২১)। কেউ কেউ এর সমালোচনা করেছেন। তবে এ হাদীসের কিছু শাহেদ হাদীস আছে, যার দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে এ হাদীসকে সহীহ বলা হয়। আত-তালখীস (১/৯৫), আল-ইরওয়্য (৮৬)।

[41] আলবানী একে সহীহ বলেছেন; আবূ দাউদ (১৭৫) আহমাদ (৩/৪২৪), বাকিয়্যাহ বিন ওয়ালীদ বুহাইর থেকে এবং বুহাইর খালেদ থেকে। আহমাদের বর্ণনা মতে, বাকিয়্যাহ বুহাইর থেকে শুনার কথাটি স্পষ্ট করেছেন। আহমাদ এর সনদটি উত্তম বলেছেন। এ জন্য আলবনী (রহ:) ইরওয়াতে (৮৬) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আমার মতে, যদি বাকিয়্যাহ এর পÿ থেকে তাসবিয়্যাহ এর আশঙ্কা না থাকত তাহলে তা হাসান হত। আর বুহাইর খালেদ থেকে শুনেছেন এ কথা স্পষ্ট নয়।

[42] আল-মাসবূত্ব (১/৫৬), আল-উম্ম (১/৩০), আলমাজমু’ (১/৪৫১) আলমুহালস্না (২/৭০)।

[43] এর সনদ সহীহ; মুয়াত্তা মালেক (৪৮), শাফেঈ (১৬) ইমাম বাইহাক্বী প্রণীত আল-মা'রেফাহ (৯৯)।