সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ স্বভাবজাত (ফিতরাত) সুন্নাতসমূহ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম ১ টি

الختان বা খাতনার পরিচয় ও তার হকুম:

الختان শব্দটি মাসদার। এর মূলবর্ণ ختن -আভিধানিক অর্থ কর্তন করা।

পরিভাষায়: পুরুষাংগের অগ্রভাগ আবৃতকারী চামড়া ও নারীর যৌনাংগের পর্দা (ভৌগলিক কারণে পর্দা বা হাইমেন মেমব্রেন অনেক মোটা হয়) কেটে দেয়াকে খাতনা বলে।[1]

খাতনা করার হকুম: বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে তিনটি মতামত পেশ করেছেন।

(১) নারী পুরুষ সকলের খাতনা করা ওয়াজিব।

(২) উভয়ের জন্য খাতনা করা মুস্তাহাব।

(৩) পুরুষের জন্য ওয়াজিব ও নারীর জন্য মুস্তাহাব।

ইবনে কুদামা মুগনি গ্রন্থে (১/৮৫) বলেন: খাতনা করা পুরুষের জন্য ওয়াজিব। আর মহিলাদের জন্য সম্মানজনক কাজ। এটা তাদের প্রতি ওয়াজিব নয়। অনেক আলিম এ অভিমত পেশ করেছেন।

ইমাম নাববী মাজমু গ্রন্থে (১/৩০১) বলেন: সঠিক মতামত হলো- যা ইমাম শাফেঈ দলীলসহ বর্ণনা করেছেন এবং অধিকাংশ এ মতামতকে অকাট্য বলে প্রমাণ করেছেন যে, এটা নারী-পুরুষ সকলের উপর ওয়াজিব।

আমার বক্তব্য: পুরুষের খাতনা করা নিম্নোক্ত কারণে ওয়াজিব:

(১) কেননা এটা হযরত ইবরাহীম (ؑআঃ) এর রীতি। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

عن أبي هريرة قال قال رسول الله ﷺ: اختتن إبراهيم خليل الرحمن بعد ما أتت عليه ثمانون سنة

আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: ইবরাহীম খলীলুর রহমান ৮০ বছর বয়সে তাঁর খাতনা করেছিলেন।[2]

মহান আল্লাহ্‌ তার রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) কে লক্ষ্য করে বলেন:

﴿ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾

অর্থাৎ: তারপর আমি তোমার প্রতি ওহী পাঠিয়েছি যে, তুমি মিলস্নাতে ইবরাহীমের আনুগত্য কর, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না (সূরা নাহল-১২৩)।

(২) বর্ণিত আছে: একদা এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূল (ﷺ) তাকে বলেন:

« أَلْقِ عَنْكَ شَعْرَ الْكُفْرِ وَاخْتَتِنْ»

অর্থাৎ: তুমি তোমার দেহ থেকে কুফরীর চিহ্ন দূর কর এবং খাতনা কর।[3]

(৩) খাতনা করা মুসলমানদের নিদর্শন। এটা তাদের (মুসলমানদের) ইহুদি-খ্রিষ্টান থেকে পৃথককারী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সুতরাং অন্যান্য নিদর্শনের মত এটাও ওয়াজিব।

(৪) শরীরের কোন অংশ কাটা হারাম। আর হারাম জিনিস ওয়াজিব না হলে তা বৈধ হয় না। এটা ইমাম মালিক, শাফেঈ ও আহমাদ এর অভিমত। ইমাম মালিক এ ব্যাপারে কঠোর নীতি অবলম্বন করেছেন। এমন কি তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি খাতনা করে নি, তার ইমামতি করা বৈধ হবে না এবং তার সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হবে না।

আবার অনেক ফক্বীহ্ ইমাম মালিক এর বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, এটা সুন্নাত। কিন্তু এটা তার কাছে সুন্নাত হলেও তা পরিত্যাগ করা গুনাহের কাজ।[4]

মহিলাদের খাতনা:

শরীয়াতে মহিলাদের খাতনা করার বিধান রয়েছে। মহানাবী (ﷺ) বলেন:

«إِذَا الْتَقَى الْخِتَانَانِ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ»

অর্থাৎ: যখন নারী-পুরুষ উভয়ের গোপনাঙ্গ একত্রিত হবে, তখন তাদের উপর গোসল ওয়াজিব হবে।[5]

এখানে الختان শব্দটি দ্বারা নারী-পুরুষের যৌনাংগের কর্তিত স্থানকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মহিলারা খাতনা করতেন।

নারীদের খাতনা করার ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তবে একটিও ক্রটিমুক্ত নয়। তন্মধ্যে উম্মে আত্বীয়া বর্ণিত হাদীস:

أَنَّ امْرَأَةً كَانَتْ تَخْتِنُ بِالْمَدِينَةِ فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ ﷺ: «لَا تَنْهِكِي فَإِنَّ ذَلِكَ أَحْظَى لِلْمَرْأَةِ، وَأَحَبُّ إِلَى الْبَعْلِ

উম্মে আত্বীয়া হতে বর্ণিত, জনৈক মহিলা মদ্বীনায় (মেয়েদের) খাতনা করাতো। নাবী (ﷺ) তাকে বললেন, খাতনাস্থানের অংশ খুব বেশি কাটিও না। কেননা এটা (কম কাটার জন্য সঙ্গমের সময়) নারীর জন্য অধিক তৃপ্তিদায়ক এবং স্বামীর কাছে খুবই প্রিয়।[6]

অপর বর্ণনায় রয়েছে:

إذا خفضت فأشمى ولا تنهكى فإنه أضوأ للوجه وأحظى عند الزوج

অর্থাৎ: ‘‘যখন নারীদের খাতনা করবে, তখন একে বারে কেটে শেষ করে দিও না । কেননা এতে চেহারা উজ্জল থাকবে এবং স্বামীর জন্য তা তৃপ্তিদায়ক হবে’’।[7]

এ হাদীসগুলোর সনদ দুর্বল, যদিও আলবানী সিলসিলা সহীহাহ’’ গ্রন্থে (হাদীস নং ৭২২) সহীহ বলেছেন। ব্যাপারটি এরূপ হওয়ার ফলে এক দল বলেন: এসব হাদীস যঈফ হলেও পুরুষের ন্যায় মহিলাদের খাতনা করা ওয়াজিব। কেননা নারী-পুরুষ উভয়েই শরীয়াতের বিধান পালনে সমধিকারী, যতক্ষণ না বিধানগতভাবে উভয়কে পৃথক করার দলীল বর্ণিত হয়। অথচ এরূপ দলীল বর্ণিত হয় নি।

আর অপর একদল বলেন: এটা মহিলাদের জন্য মুস্তাহাব ও সম্মানজনক কাজ। এটা ওয়াজিব নয়।[8] আর নারী পুরুষের মাঝে পৃথক করার কারণ হলো, পুরুষদের খাতনা করায় অনেক কল্যাণ রয়েছে। এর ফলে সালাতের জন্য পবিত্র হওয়ার যে শর্ত রয়েছে তা রক্ষা পায়। কেননা পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের এ চামড়াটি যদি কাটা না হয়, তাহলে তাতে পেশাব অবশিষ্ট ও জমা হয়ে থাকে।

আর মহিলাদের খাতনা করার ফলে তাদের কামভাব হরাস পায়, অথচ এটা পরিপূর্ণ পাওয়াটা স্বাভাবিকতার দাবী। মূলতঃ তাদের কষ্ট দূর করার জন্য খাতনা করা হয় না।

আমার বক্তব্য: মহিলাদের খাতনার বিধান ওয়াজিব ও মুস্তাহাবের মাঝা-মাঝি। মহানাবী (ﷺ) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, খাতনা করা পুরুষের জন্য সুন্নাত ও মহিলাদের জন্য সম্মানজনক কাজ।[9] কিন্তু হাদীসটি যঈফ। যদি তা সহীহ হতো তাহলে দ্বন্দ্ব নিরসন করা সম্ভব হতো। আল্লাহ্‌ই সর্বাধিক অবগত।

[1] ইবনুল কাইয়্যূম প্রণীত তুহফাতুল মাওদূদ ( ১০৬-১৩২), মাজমূ (১/৩০১)।
[2] বুখারী হা/ ৬২৯৮; মুসলিম হা/ ৩৭০
[3] শাহেদ থাকার কারণে আলবানী এ হাদীসকে হাসান বলেছেন। আবু দাউদ (৩৫৬), বাইহাক্বী (১/১৭২) এ হাদীসের সনদে দু’জন মাজহুল (অপরিচিত) রাবী ও বিচ্ছিন্নতা আছে। এসত্ত্বেও এর কতিপয় শাহেদ (সমর্থক) হাদীস থাকার কারণে আলবানী হাসান বলেছেন। যা তার সহীহ আবূ দাউদ (৩৮৩), ইরওয়াউল গালীল (৭৯) এ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আমি তা অবগত হতে পারি নি। ইমাম নাববী ও শাওকানী এ হাদীসকে যঈফ আখ্যা দিয়েছেন।
[4] তুহফাতুল মাউদুদ- ১১৩ পৃ.।
[5] সহীহ; আলোচ্য শব্দে ইবনে মাজাহ (৬১১) তে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। আর সহীহাইনে এসেছে "ومس الختان الختان فقد وجب الغسل" এ শব্দে।
[6] যঈফ; আবূ দাউদ (৫২৭১) এবং তিনি একে যঈফ বলেছেন।
[7] মুনকার; খতীব বাগদাদী প্রণীত আত তারিখ-(৫/৩২৭), জামি’ আহকামুন নিসা (১/১৯)।
[8] এ পদ্ধতিটি ইবনু উসাইমীন উল্লেখ করেছেন। যেমন এসেছে আল-মুমতি’ (১/১৪৩) তে।
[9] যঈফ; আহমাদ (৫/৭৫)।