(২) الاستهزاء بشيئ فيه ذكر الله আল্লাহর যিকির সম্বলিত বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা

প্রত্যেক মুসলিমের উপর আবশ্যক হলো, আল্লাহর কিতাব, রসূলের সুন্নাত এবং মুসলিমদের আলেমদেরকে সম্মান করা এবং যারা আল্লাহর যিকির সম্বলিত কোনো জিনিস নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে অথবা কুরআন নিয়ে বিদ্রুপ করে অথবা রসূলকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে তাদের হুকুম সম্পর্কে অবগত হওয়া। এসব বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা সম্পর্কে মুসলিমদের সতর্ক হওয়া আবশ্যক। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির সম্বলিত কোনো বিষয়, কুরআন অথবা রসূল কিংবা কোনো একটি সুন্নাত নিয়ে বিদ্রুপ করলো সে আল্লাহর সাথে কুফুরী করলো। কেননা সে আল্লাহ তা‘আলার রুবুবীয়াত ও রিসালাতকে অবজ্ঞা করেছে। আর এটি তাওহীদের পরিপন্থি এবং আলেমদের ইজমা অনুযায়ী কুফুরী।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِنْ نَعْفُ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ﴾

‘‘তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো, তাহলে তারা অবশ্যই বলবে, আমরা কেবল আলাপ-আলোচনা ও হাসি-তামাসা করছিলাম। বলো: তোমরা কি আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ এবং তার রসূলকে নিয়ে উপহাস করছিলে? তোমরা এখন ওযর পেশ করোনা। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফুরী করেছো। তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেই, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দিবো। কারণ তারা ছিল অপরাধী ’’। (সূরা তাওবা: ৬৫-৬৬)

 কোনো কোনো যুদ্ধে মুনাফেকরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছিল। তাদের সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াত দু’টি নাযিল হয়। ইমাম ইবনে জারীর এবং অন্যান্য আলেমগণ ইবনে উমার, মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব, যায়েদ ইবনে আসলাম এবং কাতাদাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈক মুনাফেক তাবুক যুদ্ধের দিন বললো, এসব কারীর চেয়ে অধিক পেটুক, কথায় এদের চেয়ে অধিক মিথ্যুক এবং যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর সাক্ষাতে এদের চেয়ে অধিক ভীরু আর কাউকে দেখিনি। অর্থাৎ লোকটি তার কথা দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার কারী সাহাবায়ে কেরামের দিকে ইঙ্গিত করছিল।

আওফ ইবনে মালেক লোকটিকে বললেন, তুমি মিথ্যা বলছো এবং তুমি একজন পাক্কা মুনাফিক। আমি অবশ্যই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ খবর জানাবো। আওফ তখন এ খবর জানানোর জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে চলে গেলেন। গিয়ে দেখলেন কুরআন তার চেয়েও অগ্রগামী অর্থাৎ আওফ পেঁŠছার পূর্বেই অহীর মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপারটি জেনে ফেলেছেন। এরই মধ্যে মুনাফিক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে চলে আসল। লোকটি এমন সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হল, যখন তিনি সফরের উদ্দেশ্যে উটনীর উপর আরোহন করে রওয়ানা দিচ্ছিলেন। তারপর সে বললো, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা হাসি-তামাশা করছিলাম এবং চলার পথে আরোহীদের মতোই পরস্পর আলাপ-আলোচনা করছিলাম। যাতে করে আমাদের পথ চলার কষ্ট লাঘব হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন,

﴿أَبِاللَّهِ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ (৬৫) لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ﴾

‘‘তোমরা কি আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ এবং তার রসূলকে নিয়ে উপহাস করছিলে? তোমরা এখন ওযর পেশ করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফুরী করেছো’’।[1] (সূরা তাওবা: ৬৫-৬৬)

উপরোক্ত আয়াত দু’টি এবং তার শানে নুযুলের মধ্যে সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা, তার রসূল, তার নিদর্শন, রসূলের সুন্নাত এবং রসূলের সাহাবীদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীরা কাফের হয়ে যাবে। কেননা যে এমনটি করলো, সে আল্লাহ তা‘আলার রুবুবীয়াত এবং তার রসূলের রিসালাতকে খাটো করলো। আর এটি তাওহীদ ও আকীদা পরিপন্থী কাজ। যদিও সে প্রকৃত পক্ষে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করার ইচ্ছা করেনি।

দীনি ইলম ও আলেম সম্প্রদায়কে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা, আলেমদেরকে সম্মান না করা অথবা তারা যে ইলমকে ধারণ করে রেখেছেন, তার কারণে তাদের কুৎসা বর্ণনা করাও কুফুরী। তারা প্রকৃতপক্ষে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার ইচ্ছা করার উদ্দেশ্য না করে থাকলেও এ কাজটি কুফুরী। কারণ যাদের ব্যাপারে উপরোক্ত আয়াত দু’টি নাযিল হয়েছে, তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে অযুহাত পেশ করেছিল যে, তাদের কাছ থেকে যে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ প্রকাশিত হয়েছে, আসলে তারা তা অনিচ্ছা সত্বেই করেছে।

তাদের কথা:﴿إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ﴾  ‘‘আমরা কেবল হাসি-তামাসা উপহাস-পরিহাস করছিলাম’’। অর্থাৎ আমরা আসলে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার ইচ্ছা পোষণ করিনি। আমরা শুধু খেল-তামাশা করছিলাম। আন্তরিক ইচ্ছার বিপরীত কাজ-কর্মকে খেল-তামাশা বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা তার রসূলের মাধ্যমে সংবাদ দিয়েছেন যে, তাদের এ অযুহাত আল্লাহর নিকট কোনো কাজে আসবে না। এ কথার কারণে তারা ঈমান আনয়নের পর কুফুরী করেছে। যার মাধ্যমে তারা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছিল। তাদের অযুহাত কবুল করা হয়নি যে, তারা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিল না। তারা কেবল খেল-তামাশার ইচ্ছা করেছিল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জবাবে আল্লাহ তা‘আলার কালাম তিলাওয়াত করা ছাড়া আর কোনো কথাই বলেননি। তিনি শুধু বলে যাচ্ছিলেন,

﴿أَبِاللَّهِ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ﴾

‘‘তোমরা কি আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ এবং তার রসূলকে নিয়ে উপহাস করছিলে? তোমরা এখন ওযর পেশ করোনা। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফুরী করেছ’’। (সূরা তাওবা: ৬৫-৬৬)

কেননা এ বিষয়গুলো এমন যে, তা নিয়ে হাসি-তামাশা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ চলে না। এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আবশ্যক। আল্লাহর আয়াতগুলো তিলওয়াতের সময় আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ও তার রসূলের প্রতি ঈমান রেখে এবং তার আয়াতের প্রতি সম্মান রেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া আবশ্যক। যারা এগুলো নিয়ে খেল-তামাশা করে, তারা এগুলোর মর্যাদা নষ্ট করে।

শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব রহিমাহুল্লাহ বলেন, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের যেসব সুস্পষ্ট বাক্য উপরোক্ত হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা এবং তার অনুরূপ বাক্যের মাধ্যমে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হয়ে থাকে। আর যেসব সুস্পষ্ট কথা ও আচরণ দ্বারা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হয়ে থাকে তা হচ্ছে, যেমন ঠোঁট লম্বা করা, জিহবা বের করা, চোখ দ্বারা ইঙ্গিত করা। এমনি লোকদেরকে যখন সালাত  আদায় ও যাকাত প্রদানের আদেশ করা হয়, তখন তাদের থেকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের আরো অনেক কথা ও আচরণ প্রকাশ পায়। উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার কারণে যেখানে মানুষ কাফের হয়ে যায়, তাহলে তাওহীদ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলে কেমন হবে! শাইখের কথা এখানেই শেষ।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সুসাব্যস্ত ও সুপ্রমাণিত সুন্নাত নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করাও অনুরূপ। যেমন কেউ লম্বা দাঁড়ি নিয়ে বিদ্রুপ করলো, মোচ খাটো করা নিয়ে বিদ্রুপ করলো অথবা মেসওয়াক নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করলো অথবা অনুরূপ অন্যান্য বিষয় যেমন সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ নিয়ে বিদ্রুপ করলো।

ইবনে ইসহাক বলেছেন, উমাইয়্যা ইবনে যায়েদ ইবনে আমর গোত্রের বন্ধু ওয়াদীয়া ইবনে ছাবেত এবং বনু সালামার বন্ধু আশজা গোত্রের মাখশী ইবনে হিময়ার নামক জনৈক ব্যক্তিসহ একদল মুনাফেক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে ইঙ্গিত করে বিদ্রুপ করলো। তিনি তখন তাবুক যুদ্ধে যাচ্ছিলেন। মুনাফেকরা পরস্পর বলাবলি করলো, তোমরা কি মনে করো, রোমকদের বীরত্ব ও যুদ্ধ আরবদের পারস্পরিক যুদ্ধের মতোই? আল্লাহর কসম! আমরা যেন দেখতে পাচ্ছি, আগামীকাল তোমাদেরকে ধুলোমাখা অবস্থায় রশী দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। গুজব রটানোর জন্য এবং মুমিনদেরকে ভয় দেখিয়ে দুর্বল করে দেয়ার জন্য তারা এসব কথা বলেছিল।

মাখশী ইবনে হিময়ার তখন বললো, আল্লাহর কসম! আমি এ মর্মে মুকাদ্দমা পেশ করতে চাই যে, তোমাদের এ কথার কারণে আমাদের ব্যাপারে কুরআন নাযিল হওয়ার বদলে আমাদের প্রত্যেককেই ১০০টি করে বেত্রাঘাত করা হোক। বর্ণনাকারী বলেন, আমি যতদূর জানতে পেরেছি, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে বলেছিলেন, তুমি তাড়াতাড়ি ঐসব লোকের কাছে যাও। তারা তো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তারা যা বলেছে, তা সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো। তারা যদি অস্বীকার করে, তাহলে বলো, তোমরা অবশ্যই এসব কথা বলেছো।

আম্মার তাদের কাছে গেলেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন। এরই মধ্যে তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে অযুহাত পেশ করলো। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বাহনের পাশে দাঁড়ানো ছিলেন। এমন সময় ওয়াদীয়া ইবনে ছাবিত এসে তার উটের রশি ধরে বলতে লাগলো, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমরা কেবল হাসি-তামাশা করছিলাম। মাখশী ইবনে হিময়ার তখন বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার সুনাম ও আমার পিতার সুনাম-সুখ্যাতি আমাকে তাদের থেকে আলাদা রেখেছে। সম্ভবত তিনি আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী,

﴿إِنْ نَعْفُ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً﴾

‘‘তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেই, তাহলে অবশ্যই কিছু লোককে আযাবও দিবো’’ দ্বারা মাখশী ইবনে হিময়ারকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ এ আয়াতে যাকে ক্ষমা করা হয়েছে বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তিনি হলেন, মাখশী ইবনে হিময়ার। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তার নাম রাখলেন আব্দুর রাহমান। তিনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেন, তিনি যেন তাকে এমন স্থানে শহীদ হিসাবে মৃত্যু দান করেন, যা কেউ জানতে না পারে। পরবর্তীতে তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন। তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মুনাফেকদের সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন যে, তারা ঈমান আনয়ন করার পর কুফুরী করেছে। অথচ তারা বলেছিল, আমরা আন্তরিকভাবে কুফুরী আকীদা পোষণ করে কুফুরী বাক্য উচ্চারণ করিনি। বরং আমরা কেবল হাসি-তামাশা ও খেলা করছিলাম। আল্লাহ তা‘আলা এখানে বর্ণনা করেছেন যে, তার আয়াত নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা কুফুরী। যে ব্যক্তি অন্তর খুলে এসব কথা বলার জন্য প্রস্ত্তত হয় সে ব্যতীত অন্য কারো পক্ষ হতে এ কথা বের হওয়ার কল্পনা করা যায় না। তাদের অন্তরে যদি ঈমান থাকতো, তাহলে তাদের ঈমান তাদেরকে এ কথা বলা থেকে বারণ করতো। কুরআন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে যে, অন্তরের ঈমান অনুপাতেই বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَقُولُونَ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيقٌ مِنْهُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُولَئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ (৪৭) وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ مُعْرِضُونَ (৪৮) وَإِنْ يَكُنْ لَهُمُ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ (৪৯) أَفِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ أَمِ ارْتَابُوا أَمْ يَخَافُونَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُولُهُ بَلْ أُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (৫০) إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾         

‘‘তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য করেছি কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একটি দল মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ ধরনের লোকেরা কখনোই মুমিন নয়। যখন তাদেরকে ডাকা হয় আল্লাহ ও তার রসূলের দিকে, যাতে রসূল তাদের পরস্পরের মধ্যে ফায়ছালা করে দেন তখন তাদের মধ্যকার একটি দল পাশ কাটিয়ে যায়। তবে যদি সত্য তাদের অনুকূল থাকে, তাহলে বড়ই বিনীত হয়ে রসূলের কাছে আসে। তাদের মনে কি রোগ আছে? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে? না তারা ভয় করছে যে, আল্লাহ ও তার রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন? আসলে তারা নিজেরাই যালেম। মুমিনদের কথা হচ্ছে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রসূল তাদের মধ্যে ফায়সালা করেন, তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম। এরাই সফলকাম হবে’’। (সূরা নূর: ৪৭-৫১)

যারা রসূলের আনুগত্য করা থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে ঈমান নাকোচ করে দিয়েছেন। তিনি আরো সংবাদ দিয়েছেন যে, মুমিনদেরকে তাদের পারস্পরিক বিবাদ নিস্পত্তির জন্য আল্লাহ ও তার রসূলের দিকে আহবান করা হলে তারা শ্রবণ করে এবং আনুগত্য করে। সুতরাং আল্লাহ উল্লেখ করেছেন যে, এটি ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়ার বক্তব্য এখানেই শেষ।

এতে করে জানা গেলো যে, যারা ইসলামী শরী‘আতকে দোষারোপ করে, যারা বলে বর্তমান বিশ্বের জন্য ইসলামী শরী‘আত উপযোগী নয়, যারা বলে ইসলামী শরী‘আতের দ-বিধির মধ্যে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা রয়েছে, যারা বলে ইসলাম নারীদের উপর যুলুম করেছে এবং যারা এ জাতিয় অন্যান্য কুফুরী বাক্য উচ্চারণ করে, তারা কাফের। এসব কথা থেকে বাঁচার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ ও নিরাপত্তা কামনা করছি।


[1]. ঘটনাটি সহীহ। দেখুন: তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৪/১৭১)।