إليك بيان الوسائل القولية والفعلية التي نهى عنها رسول الله صلى الله عليه وسلم لأنها تفضي إلى الشرك - নিম্নে ঐসব কথা ও কাজের আলোচনা করা হলো, যা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। কারণ তা মানুষকে শিরকে লিপ্ত করে - (২)

আগের চলমান পাতার অবশিষ্ট...

 

৯) আরো যেসব জিনিস মানুষকে শিরকের দিকে নিয়ে যায় তার মধ্যে الغلو في الصالحين সৎ লোকদের প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করা যদি নিষেধ হয়ে থাকে, তাহলে অন্যান্য সৎ লোকদের প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করা আরো কঠোরভাবেই নিষিদ্ধ হবে।

সৎ লোকদের প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করার অর্থ হলো আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যে মর্যাদা প্রদান করেছেন, তার উপরে উঠিয়ে এমন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা, যা কেবল আল্লাহ তা‘আলার জন্যই শোভনীয় হতে পারে। যেমন বিপদ-মুছীবতের সময় সৎ লোকদের কাছে ফরীয়াদ করা, তাদের কবরের তাওয়াফ করা, কবরের মাটি দিয়ে বরকত হাসিল করা, তাদের সমাধির জন্য কুরবানী যবেহ করা, তাদের কাছে মদদ চাওয়া ইত্যাদি।

সৎ লোকদের প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করার রাস্তা দিয়েই শয়তান নূহ আলাইহিস সালামের বংশের মধ্যে শিরক ঢুকিয়েছে। সুতরাং সৎ লোকদের প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করা থেকে সাবধান থাকা আবশ্যক। যদিও ভালো উদ্দেশ্যে প্রশংসা করা হয়।

নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের মধ্যে যে শিরক প্রবেশ করেছিল, উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যেও অনুরূপ শিরক প্রবেশ করেছে। নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের মধ্যে শয়তান যে শিরক ঢুকিয়ে দিয়েছিল, বর্তমানেও সৎ লোকদের প্রতি তা’যীম ও ভালোবাসা প্রদর্শনের পোষাক পরিয়ে সে অনেক লোকের সামনে শিরক ও বিদআতকে প্রকাশ করেছে। শয়তান সব সময় কবর পূজারীদের নিকট এ ওয়াসওয়াসা দিয়ে যাচ্ছে যে, সৎ লোকদের কবরের উপর মসজিদ, সমাধি, ঘর, গম্বুজ নির্মাণ করা এবং সেগুলোর উপর অবস্থান করা তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের কবরের পাশে দু‘আ কবুল হয়ে থাকে। অতঃপর এই স্তর থেকে শয়তান তাদেরকে কবরবাসীর মধ্যস্থতায় দু‘আ করা এবং তাদেরকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করার আহবান জানায়। তারা যখন এটি করে অভ্যস্ত হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে সরাসরি কবরবাসীর নিকট দু‘আ করা, তাদের ইবাদত করা এবং তাদের কাছে শাফা‘আত চাওয়ার আহবান জানায়।

পরিশেষে তাদের কবরগুলো এমন মূর্তি পূজার আড্ডায় পরিণত হয়, যাতে তারা প্রদীপ বাতি জ্বালায়, তাতে মূল্যবান পর্দা ঝুলিয়ে রাখে, তাকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করে, তাতে স্পর্শ করে এবং চুম্বন করে। এতে যখন তারা অভ্যস্থ হয়ে যায়, তখন তারা অন্যান্য মানুষকেও কবর পূজা করা, সেটাকে ঈদের স্থান হিসাবে গ্রহণ করা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কেন্দ্র বানানোর আহবান জানায়। অতঃপর শয়তান তাদেরকে এ বিশ্বাসের দিকে নিয়ে যায় যে, যারা কবর পূজা করতে নিষেধ করে, তারা অলীদেরকে অবমাননা করে, তাদেরকে ঘৃণা করে এবং মনে করে যে, অলীদের কোনো সম্মান-মর্যাদা ও কদর নেই।

অনেক মূর্খ সাধারণ মানুষের অন্তরে এমনকি ইলম ও দীনের দাবিদার অনেক লোকের অন্তরে কবর পূজার ফিতনা প্রবেশ করেছে। তারা সত্যিকার তাওহীদ পন্থীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে, বড় বড় অপবাদ দিয়েছে এবং মানুষকে তাদের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এসব কিছুই তারা করছে সৎ লোকদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন ও সম্মান প্রদর্শনের ছত্রছায়ায়। তারা তাদের কথায় মিথ্যুক। কেননা সৎ লোকদের প্রতি তখনই প্রকৃত ভালোবাসা প্রদর্শন করা হবে, যখন সেটা আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাত মোতাবেক হবে। তাদের ফযীলত সম্পর্কে অবগত হওয়া, শৈথিল্য ও বাড়াবাড়ি ব্যতীত ভালো কাজে তাদের অনুসরণ করার মাধ্যমেই তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন হতে পারে। যেমন-

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ﴾

‘‘তারা বলে, হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে ক্ষমা করো। আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না’’। (সূরা আল হাশর: ১০)

শাইখুল ইসলাম ইমাম তাইমীয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তিই কোনো নবী বা সৎ লোকের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে অথবা তার মধ্যে উলুহীয়াতের আকীদা পোষণ করেছে সেই বলেছে,

يا سيدي فلان! أنصرني أو أغثني أو ارزقني أو أنا في حسبك

হে আমার সাইয়্যেদ অমুক! আমাকে সাহায্য করুন অথবা আমাকে উদ্ধার করুন, অথবা আমাকে রিযিক প্রদান করুন কিংবা বলেছে, আমার জন্য আপনিই যথেষ্ট। অথবা এ ধরণের অন্যান্য কথা বলেছে। এসবগুলোই শিরক ও গোমরাহী। যারা এগুলো বলবে, তাদেরকে তাওবা করতে বলা হবে। তারা যদি তাওবা করে তাহলে তো ভালো। অন্যথায় তাদেরকে হত্যা করা হবে।[16]

কেননা আল্লাহ তা‘আলা রসূলদেরকে এ জন্য পাঠিয়েছেন এবং আসমানী কিতাবসমূহ এ জন্যই নাযিল করেছেন, যাতে একমাত্র তারই ইবাদত করা হয়, তার সাথে অন্য কাউকে আহবান না করা হয়। তিনি একক এবং তার কোনো শরীক নেই। যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কোনো ইলাহকে আহবান করে, যেমন ঈসা আলাইহিস সালাম, ফেরেশতা কিংবা মূর্তি তারা এটি বিশ্বাস করে না যে, এরা সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে অথবা বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারে অথবা উদ্ভিদ উদগত করতে পারে। বরং তারা এগুলোর ইবাদত করতো অথবা তাদের কবরের উপাসনা করতো অথবা তাদের ছবির পূজা করতো এবং বলতো,

﴿مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى﴾

‘‘আমরা তাদের ইবাদত এ জন্যই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়’’। (সূরা আয যুমার: ৩)

তারা আরো বলে, এ মাবুদগুলো আমাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুপারিশকারী মাত্র। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা রসূলদেরকে পাঠিয়েছেন, যাতে মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে দু‘আ না করে। ইবাদতের দু‘আ এবং ফরিয়াদের দু‘আ, -এ দু’টির কোনোটিই যেন আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো কাছে না করে। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়ার কথা এখানেই শেষ।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়ার উপরোক্ত কথার মাধ্যমে কবর পূজারীদের সন্দেহের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেল। যেসব কবর পূজারী তাদের কাজকে এই বলে বৈধ করতে চায় যে, তারা অলী-আওলীয়াদের ব্যাপারে এমন বিশ্বাস করে না যে, এরা সৃষ্টি করা, রিযিক দেয়া, জীবিত করা কিংবা মৃত্যু দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহর শরীক। তারা কেবল তাদের ব্যাপারে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, এরা হলো তাদের প্রয়োজন পূরণ করা এবং বিপদাপদ দূর করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ও তাদের মাঝে মধ্যস্থতাকারী মাত্র। আসলে জাহেলী যুগে মক্কার মুশরিকরা এ কথাই বলতো। আর আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে এ কথা উল্লেখ করেছেন এবং তা খণ্ডন করেছেন।

বাস্তব কথা হলো, পরবর্তীকালের লোকদের শিরক জাহেলী যুগের মুশরিকদের শিরকের চেয়ে বেড়ে গেছে। তারা তাদের প্রত্যেক অনুষ্ঠানেই এগুলোর নাম উচ্চারণ করে চিল্লাতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার নাম তারা খুব কমই স্মরণ করে। তাদের মুখে সবসময় অলীর নাম শুনা যায়। পূর্বযুগের মুশরিকরা কেবল সুখের সময় আল্লাহর সাথে শরীক করতো আর বিপদের সময় তারা এখলাসের সাথে আল্লাহকেই ডাকতো। আর এদের শিরক সব সময়ই হয়ে থাকে। সুখের সময়ও তারা শিরক করে এবং বিপদের সময়ও শিরক করে।

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আস সানআনী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

وقـد هتفـوا عنـد الشدائد باسمهـا كمـا يهتـف المضطر بالصمد الفرد

বিপদাপদ ও মুছীবতের সময় তাদের নাম ধরে তারা কতই না আহবান করল। যেমন বিপদগ্রস্থ একক অমুখাপেক্ষী সত্তার নাম ধরে আহবান করে। হে মুসলিমদের আলেম সম্প্রদায়! পথহারা, ভ্রান্ত ও হতবুদ্ধি মানুষগুলোকে সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব আপনাদের স্কন্ধে অর্পিত।

হে আলেম সম্প্রদায়! আপনারা তাদেরকে সঠিক পথ দেখাচ্ছেন না কেন? এই ভয়াবহ শিরক থেকে তাদেরকে নিষেধ করছেন না কেন? অথচ আপনারা তাদের সাথেই মিলে মিশে বসবাস করছেন। দাওয়াত দেয়া ও মানুষের কাছে হক বয়ান করার যে দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে দিয়েছেন, তা নষ্ট করছেন কেন? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴾  ﴿وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ

‘‘স্মরণ করো সেই সময়ের কথা! যখন আল্লাহ আহলে কিতাবদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তোমরা কিতাবের শিক্ষা মানুষের মধ্যে প্রচার করবে, তা গোপন করবে না’’। (সূরা আলে-ইমরান: ১৮৭)

আলেমগণ কি নবীদের ওয়ারিছ নন? নবীগণ তো শিরকের প্রতিবাদ করার জন্যই আগমন করেছেন এবং দীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তা‘আলার জন্য না হওয়া পর্যন্ত মুশরিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্যই আগমন করেছেন।

সুতরাং হে আলেমগণ! আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন। যিনি আপনাদেরকে এ দায়িত্ব প্রদান করেছেন, তিনি অচিরেই এ সম্পর্কে আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন। সহীহ হা্দীছে বর্ণিত হয়েছে, যে আলেম তার ইলম অনুযায়ী আমল করবে না, তার দ্বারাই কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হবে।

আপনারা যদি শিরক দেখেও প্রতিবাদ না করেন এবং তাদেরকে যদি তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেন, তাহলে ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। আর যদি এগুলোকে আপনারা শিরক মনে না করেন, তাহলে বিষয়টি আরো ভয়াবহ। কেননা আপনারা এমন একটি বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ রয়েছেন, যা অত্যন্ত সুস্পষ্ট।

হে আল্লাহ! তুমি মুসলিমদের অবস্থা সংশোধন করো, তাদেরকে গোমরাহী থেকে উদ্ধার করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।

১০) ছবি উঠানো শিরকের অন্যতম মাধ্যম:

التصوير অর্থ হলো হাত দিয়ে আর্ট করার মাধ্যমে অথবা মেশিনের মাধ্যমে কিংবা খোদাই করার মাধ্যমে কোনো জিনিসের আকৃতি স্থানান্তর করা এবং সেটাকে বোর্ডে, কিংবা কাগজে অঙ্কন করা অথবা প্রতিমূর্তি আকারে স্থাপন করা।

আলেমগণ আকীদা সম্পর্কিত কিতাবগুলোতে ছবি আঁকা সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন। কেননা এটি শিরকের মাধ্যম। সে সঙ্গে এতে সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক হওয়ার দাবি করা হয় অথবা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। ছবি উঠানোর মাধ্যমে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম শিরক সংঘটিত হয়েছে। যখন নূহ আলাইহিস সালামের কাওম ছবি তুলতে অগ্রসর হয়েছিল এবং তাদের ছবিগুলো বিভিন্ন মজলিসে স্থাপন করেছিল, তখন থেকেই পৃথিবীতে শিরকের সূচনা হয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল প্রকার ছবি উঠানো থেকে নিষেধ করেছেন। যারা ছবি আঁকে তাদেরকে তিনি কঠিন শাস্তির ধমক দিয়েছেন, তিনি ছবি মিটিয়ে ফেলতে এবং সেটার নাম-নিশানা পরিবর্তন করে ফেলতে বলেছেন। কেননা ছবি উঠানোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি করা বিশেষণের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হয়। অথচ তিনিই একমাত্র স্রষ্টা। আল্লাহ তা‘আলা যা একাই সৃষ্টি করেন, ফটোগ্রাফার তাতে তার সাদৃশ্য গ্রহণ করতে চায়। আর ছবি উঠানো শিরকের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং ছবি উঠানো থেকেই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম শিরক এসেছে। শয়তান নূহ আলাইহিস সালামের কাওমের জন্য সৎ লোকদের ছবি উঠানোকে এবং তাদের অবস্থার স্মরণার্থে ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণার্থে ছবিগুলো বিভিন্ন মজলিসে রেখে দেয়াকে খুব সুন্দর করে দেখালো। পরিশেষে এ কাজ তাদেরকে ঐ ছবিগুলোর ইবাদতের দিকে নিয়ে গেলো এবং শয়তান তাদের মধ্যে এ বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিলো যে, আল্লাহ ব্যতীত এগুলো মানুষের উপকার ও ক্ষতি করতে পারে।

সুতরাং ছবি উঠানো থেকেই মূর্তিপূজার সূচনা হয়েছে। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ সৃষ্টির প্রতি তা’যীম-সম্মান প্রদর্শন ও তার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যই ছবি তুলে। বিশেষ করে যার ছবি উঠানো হয়, সে যদি ক্ষমতাবান, জ্ঞানী কিংবা সৎ লোক হয়ে থাকে এবং দেয়ালে, রাজপথে অথবা মাঠে-ময়দানে ছবি স্থাপন করে যখন সেগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, সময়ের ব্যবধান ও কালের পরিক্রমায় এটি পথহারা মানুষকে ছবিগুলোর সাথে সম্পৃক্ত করে তুলে। সর্বপোরি সৎ লোকের ছবি স্থাপন করার মাধ্যমে ঐসব মূর্তি ও ভাস্কর্য স্থাপনের দরজা খুলে যায়, যাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে ইবাদতও করা হয়।


ছবি অঙ্কন সম্পর্কে আমি এখানে সহীহ ও সুস্পষ্ট হাদীছ উল্লেখ করবো। সাধ্যানুসারে তার সাথে কিছু টিকা-টিপ্পনিও যোগ করবো, ইনশা-আল্লাহ।

১) আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِي فَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً ولْيَخْلُقُوا حَبَّةً أو ليَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً

‘‘আমার সৃষ্টির মত যে কেউ কিছু সৃষ্টি করতে চায়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে? পারলে তারা একটি দানা বা একটি অণু সৃষ্টি করুক তো দেখি। অন্য বর্ণনায় আছে, তারা একটি গম তৈরী করুক তো দেখি’’।[17]

অর্থাৎ ছবি অঙ্কনকারীর চেয়ে বড় যালেম আর কেউ নেই। কেননা সে যখন রূহ ওয়ালা কোনো সৃষ্টি যেমন মানুষ, চতুষ্পদ জন্তু অথবা অন্য কিছুর আকৃতিতে ছবি তুলে, সে তখন সবকিছুর স্রষ্টা ও প্রভু আল্লাহ তা‘আলার সাদৃশ্য গ্রহণ করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলাই সমস্ত মাখলুকের আকার-আকৃতি দান করেছেন এবং জীবিত রাখার জন্য তাতে প্রাণ সঞ্চার করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ﴾

‘‘তিনি আসমান ও যমীনকে যথাযথ রূপে সৃষ্টি করেছেন তিনি তোমাদেরকে আকার-আকৃতি দান করেছেন এবং অতি উত্তম আকার-আকৃতি দান করেছেন। অবশেষে তার কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে’’। (সূরা আত তাগাবুন: ৩)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ﴾

 ‘‘তিনিই আল্লাহ, خَالِق (সৃষ্টিকারী), بَارِي (উদ্ভাবক) এবং مُصَوِّر (রূপদাতা)। তার জন্য রয়েছে অনেক অতি সুন্দর নাম। আর তিনিই عَزِيز (পরাক্রমশালী) ও  حَكِيم (প্রজ্ঞাবান)’’। (সূরা হাশর: ২৪)।

আল্লাহর অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলীর বিষয়ে এমনি আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যার বেশ কিছু নমুনা সম্মানিত শাইখ সামনে উল্লেখ করবেন।

এসব ছবি অঙ্কনকারীদের যারা আল্লাহর সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করতে চায় তাদের সাথে আল্লাহ তা‘আলা চ্যালেঞ্জ করেছেন। পারলে তারা যেন তাদের অঙ্কিত ছবিগুলোতে প্রাণের সঞ্চার করে দেখায়, যাতে করে আল্লাহর সৃষ্টির মতই ও গুলো বাঁচতে পারে। আসলে এ চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে তাদেরকে অক্ষম করা হয়েছে এবং তাদের প্রচেষ্টায় তাদেরকে ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তারা যেমন প্রাণ ওয়ালা কোনো প্রাণী সৃষ্টি করতে অক্ষম, তেমনি তারা একটি ফল ও ফলের দানা তৈরী করতেও অক্ষম। সুতরাং প্রাণী সৃষ্টি করা তো দূরের কথা তারা একটি দানা সৃষ্টি করতে পারবে না।

বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ

‘‘কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদেরই, যারা আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির মতো ছবি বা চিত্র অঙ্কন করে’’।[18]

এ হাদীছে কিয়ামতের দিন ছবি অঙ্কনকারীদের কঠিন শাস্তি এবং তাদের নিকৃষ্ট পরিণতির কথা বলা হয়েছে। যদিও তারা দুনিয়াতে নিরাপদে জীবন যাপন করে, কিন্তু পরকালে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। এ ছবি অঙ্কনকারীদেরকে শিল্পী বলা হয় এবং তাদেরকে বিভিন্ন পক্ষ থেকে তাদের কাজে উৎসাহ প্রদান করা হয়। তারা যদি তাওবা না করে, তাহলে তাদের জন্য কঠিণ পরিণতি অপেক্ষা করছে। কেননা তারা এই কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য গ্রহণ করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ তারা যেসব ছবি তুলছে, তার মাধ্যমে তারা আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি কর্মের অনুরূপ করতে চাচ্ছে, যা আল্লাহ তা‘আলা একাই সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি হলেন মহান স্রষ্টা ও মহাজ্ঞানী।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ قُل اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ﴾

‘‘তবে কি তারা আল্লাহর এমন শরীক স্থাপন করেছে যারা তার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করেছে যে কারণে সৃষ্টি তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুন, আল্লাহ সকল বস্তুর স্রষ্টা; তিনি একক ও পরাক্রমশালী’’। (সূরা আর রা’দ: ১৬)

ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ উপরোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, কেউ কেউ বলেছেন, যে ব্যক্তি ইবাদতের উদ্দেশ্যে ছবি বানায়, তার ক্ষেত্রে এ হাদীছটি প্রযোজ্য। সে হলো মূর্তি এবং অনুরূপ বস্ত্ত নির্মাণকারী। এ লোক কাফের। কিয়ামতের দিন তার আযাব হবে সবচেয়ে বেশি। কেউ কেউ বলেছেন, হাদীছে বর্ণিত আযাব ঐ ব্যক্তির হবে, যে ইবাদতের নিয়তে আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য করবে এবং অনুরূপ আকীদা পোষণ করবে। এ লোকও কাফের হবে। কাফেরের আযাবের ন্যায় তারও কঠিন আযাব হবে। কুফরী বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে আযাবও বেশি হবে। আর যে ব্যক্তি ইবাদতের নিয়তে ছবি আঁকবে না এবং আল্লাহর সাদৃশ্য করার নিয়তও করবে না, সে কাফের হবে না। কিন্তু সে কবীরাহ গুনাহকারী বলে গণ্য হবে, যা তাওবা ছাড়া ক্ষমা হবে না।

আব্দুর রাহমান ইবনে হাসান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির আকৃতিতে ছবি অঙ্কনকারীর যদি এ শাস্তি হয়, তাহলে যে ব্যক্তি কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহ রাববুল আলামীনের সমান মনে করে এবং তার জন্য ইবাদতের কোনো অংশ নির্ধারণ করে, তার শাস্তি কেমন হতে পারে?

বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا يُعَذِّبُ فِى جَهَنَّمَ

প্রত্যেক চিত্র অঙ্কনকারীই জাহান্নামী। চিত্রকর যতটি প্রাণীর চিত্র অঙ্কন করবে, তার প্রত্যেকটির বদলে একটি করে প্রাণ সৃষ্টি করা হবে। এর মাধ্যমে তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে।[19]

অর্থাৎ সে দুনিয়াতে যত ছবি এঁকেছে, কিয়ামতের দিন তা হাজির করা হবে এবং সেগুলোর প্রত্যেকটির মধ্যে একটি করে রূহ সঞ্চার করা হবে। অতঃপর সেটার মাধ্যমে তাকে জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেয়া হবে। কম অঙ্কন করুক আর বেশী অঙ্কন করুক,- সে সেটার আযাব ভোগ করবেই। প্রত্যেক ছবি দ্বারা এমন একটি প্রাণী বানানো হবে, যার মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।

বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত ‘মারফু’ হাদীছে এসেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ صَوَّرَ صُورَةً فِى الدُّنْيَا كُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَيْسَ بِنَافِخٍ

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো প্রাণীর চিত্র অঙ্কন করবে, কিয়ামতের দিন তাকে ঐ চিত্রে আত্মা দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে আত্মা দিতে সক্ষম হবে না’’।[20]

এটি হচ্ছে ছবি অঙ্কনকারীর আরেক প্রকার শাস্তি। এর অর্থ সুস্পষ্ট। ছবি অঙ্কনকারী দুনিয়াতে যত ছবি এঁকেছে, সবগুলো কিয়ামতের দিন তার সামনে হাজির করা হবে। অতঃপর তাকে প্রত্যেকটির মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়ার হুকুম করা হবে। এমন কাজ করার শক্তি সে পাবে কোথায়? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا﴾

‘‘এরা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। বলে দাও, রূহ আমার রবের আদেশ মাত্র। কিন্তু তোমরা সামান্য জ্ঞানই লাভ করেছো’’। (সূরা বানী ইসরাঈল: ৮৫)

সুতরাং ছবি অঙ্কনকারীর অক্ষমতা প্রকাশ করার জন্য এবং তাকে শাস্তি দেয়ার জন্যই তাকে এমন আদেশ দেয়া হবে। তার উপর এমন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হবে, যা সে সম্পন্ন করতে পারবে না। ফলে সে অবিরাম শাস্তি পেতেই থাকবে। মোটকথা হাদীছটি তাকে দীর্ঘ মেয়াদী শাস্তি দেয়া এবং দুনিয়াতে আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য করার ব্যাপারে তার অক্ষমতা প্রকাশের প্রমাণ করে।

ইমাম মুসলিম আবুল হাইয়াজ আল-আসাদী রহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একদা আমাকে বললেন,

أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أن لا تدع صُورَةً إِلَّا طَمَسْتَهَا و لَا تَدَعَنَّ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ

‘‘আমি কি তোমাকে এমন কাজে পাঠাবো না, যে কাজে স্বয়ং রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? সে কাজটি হচ্ছে, ‘তুমি কোনো প্রাণীর ছবি দেখলেই তা বিলুপ্ত না করে ছাড়বে না। আর কোনো উঁচু কবরকে মাটির সমান না করে ছাড়বে না’’।[21]

এ হাদীছে ছবি মিটিয়ে ফেলার আদেশ করা হয়েছে। তার আকার-আকৃতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করার মাধ্যমেই সেটা করা সম্ভব। যাতে করে আল্লাহর সৃষ্টির অনুরূপ অবস্থায় সেটি অবশিষ্ট না থাকে। এতে কবরের উপরে নির্মিত গম্বুজ, মসজিদ এবং শিরকের অন্যান্য লক্ষণাদিও মুছে ফেলতে বলা হয়েছে।

এ হাদীছে শিরকের সর্বাধিক বড় দু’টি রাস্তা বন্ধ করার আদেশ এসেছে। একটি হলো ছবি উঠানো এবং অন্যটি হলো কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করা। ছবি মিটিয়ে ফেলা এবং কবরের উপর নির্মিত গম্বুজ, মসজিদ ইত্যাদি ভেঙে ফেলায় দীনের বিরাট কল্যাণ অর্জিত হবে এবং মুসলিমদের আকীদারও সংরক্ষণ হবে।

বর্তমান সময়ে ছবি অঙ্কন করা, ছবি ব্যবহার করা, ছবি ঝুলিয়ে রাখা, স্থাপন করা এবং স্মরণার্থে নির্মিত ছবি সংরক্ষণ করা ব্যাপকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।[22] কবরের উপর নির্মাণ কাজও বেড়ে গেছে। এমনকি বর্তমানে এগুলো সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দীনের সঠিক শিক্ষার অভাব, সুন্নাতের বিলুপ্তি, বিদআত ছড়িয়ে পড়া, অনেক আলেমের নিরব ভূমিকা পালন এবং বাস্তব পরিস্থিতির কাছে তাদের নতি স্বীকার করার কারণেই এমনটি হয়েছে। অধিকাংশ দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো মন্দে এবং মন্দ ভালোয় পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য ছাড়া এ ধরণের অন্যায় থেকে বিরত থাকা এবং সঠিক তাওহীদের উপর টিকে থাকা মোটেই সম্ভব নয়।

সুতরাং আমাদের সতর্ক হওয়া আবশ্যক, আল্লাহর জন্য, আল্লাহর কিতাবের জন্য, তার নবীর জন্য, মুসলিমদের ইমাম এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য নছীহত পেশ করা। বিশেষ করে গোমরাহী দাঈ এবং বাতিল প্রচারকদের সংখ্যা যখন বেড়ে চলেছে, তখন নছীহতের প্রয়োজন আরো বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুতরাং বাতিলপন্থীদের মুখোশ উন্মুক্ত করা, তাদের গোমরাহীর প্রতিবাদ করা এবং তাদের ক্ষতি থেকে মুসলিমদেরকে জ্ঞান দান করা আবশ্যক। তাহলেই তারা সাবধান ও সতর্ক হতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে তার কিতাব এবং তার রসূলের সুন্নাত মোতাবেক আমল করার তাওফীক দিন।

[16]. এখানে বিশেষভাবে একটি কথা স্মরণ রাখা দরকার যে, কুরআন, সুন্নাহ কিংবা অন্যান্য ইসলামী বই-পুস্তকের যেখানেই হত্যা করা কিংবা শারীরিক শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তা দ্বারা সাধারণ মানুষ কিংবা সংগঠন বা সংগঠনের ব্যক্তি বিশেষ সম্বোধিত নয়। কারণ ইসলামে কোনো মুসলিমকে অন্য মুসলিম বা অমুসলিমের উপর শারীরিক শাস্তি কায়েম করার অধিকার দেয়া হয়নি। সে যত বড় অপরাধই করুক না কেন। শাস্তি প্রয়োগ কিংবা দ-বিধি কায়েম করা কেবল ইসলামী সরকার অথবা তার যথাযথ প্রতিনিধির দায়িত্ব। কারণ কোনো ব্যক্তি বিশেষ যদি নিজস্ব উদ্যোগে অন্য কোনো লোকের উপর শাস্তি প্রয়োগ করতে যায়, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এবং মানুষের জান-মাল ও মান-ইজ্জতের চরম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সাধ্যানুযায়ী জবান দ্বারা অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা সকল মুসলিমের উপরই আবশ্যক। সুতরাং বিষয়টি ভালোভাবে বুঝা উচিত।

[17]. মুখতাসার সহীহ আলবুখারী, হাদীছ নং- ১৯৫৩।

[18]. সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ছবিকে পদদলিত করা। হাদীছ নং- ৫৯৫৪।

[19]. সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: যে ঘরে ছবি থাকে, তাতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। হাদীছ নং- ২১১০।

[20]. মুসলিম, অধ্যায়: প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা হারাম। হাদীছ নং- ২১১০।

[21]. নাসায়ী, অধ্যায়: কবরকে মাটির সমান করে দেয়ার আদেশ, হাদীছ নং- ২০৩১।

[22]. তবে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি উঠানো জায়েয আছে। যেমন ব্যক্তিগত পরিচয় পত্রের জন্য ছবি তুলা, পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলা, ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী করাসহ আরো কিছু প্রয়োজনীয় অবস্থায় ছবি তুলা জায়েয আছে। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে ব্যাপক আকারে ছবি তুলা যাবে না। কেননা অনুমতি কেবল বিশেষ প্রয়োজনেই প্রদান করা হয়েছে।