সালাত আদায় স্রষ্টার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এমন এক ইবাদত যা বালেগ-বালেগা সকল মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক। এ সালাত আদায়ে আখেরাতের অফুরন্ত কল্যাণের পাশাপাশি দুনিয়াবী নগদ কল্যাণও আছে।
(ক) কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
(১) “নামাযীরা পাবে জান্নাতে সম্মানজনক আসন যারা নিজেদের সালাত হেফাযত করে, (পরকালে) তারা (অতীব) মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতে অবস্থান করবে।” (সূরা ৭০; মা'আরিজ ৩৪৩৫)।
(২) সালাতের কারণে অপরাধ থেকে আল্লাহ নিজেই তাদেরকে হেফাযতে রাখেন। “নিঃসন্দেহে সালাত (মানুষকে) অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা ২৯; আনকাবুত ৪৫)
(৩) সালাত আদায়কারীরা সফলতা লাভ করে ফেলেছে, “ঐসব মুমিন বান্দারা নিশ্চিত সফলতা লাভ করে ফেলেছে, যারা তাদের সালাতে (খুশু-খুযূ ও) বিনয়াবনত থাকে” (সূরা ২৩; মুমিনূন ১-২)। এখানের আয়াতে ‘ফালাহ' শব্দের মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের কল্যাণ বুঝানো হয়েছে।
(৪) সালাত হলো এক উত্তম যিকির।আর এর মধ্যে রয়েছে আত্মার প্রশান্তি। “যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে এবং যাদের অন্তকরণ আল্লাহর যিকিরে প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, একমাত্র আল্লাহর যিকিরই (মানুষের) অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করে।” (সূরা ১৩; রা’দ ২৮)
(৫) ইহ ও পরকালের কাজকর্মের সহায়ক হলো সালাত। এ জন্য আল্লাহ তাআলা সবর ও সালাতের মাধ্যমে সহায়তা চাইতে বলেছেন, “(হে ঈমানদার ব্যক্তিরা!) তোমরা সবর ও নামাযের মাধ্যমে (আল্লাহর) কাছে সাহায্য চাও।” (সূরা ২; বাকারা ৪৫)। এ জন্য যখন কোন সমস্যা আসতো বা বড় বড় কাজ আসতো তখন রাসূলুল্লাহ (স) সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। আর এরই মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন।
(৬) এ আমলের মধ্যে রুযী-রোজগারেরও প্রশস্ততা রয়েছে, যে প্রাপ্তি একেবারেই নগদ । “তোমার পরিবার-পরিজনকে নামাযের আদেশ দাও এবং তুমি (নিজেও) তার ওপর অবিচল থেকো।” (সূরা ২০; ত্বা-হা ১৩২)
(৭) ঈমান ও কাজকর্মে দৃঢ়তা এনে দেয় সালাত।
“(আসলে) মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে ভীরু জীব হিসেবে, যখন তার ওপর কোন বিপদ আসে তখন সে ঘাবড়ে যায়, (আবার) যখন তার সচ্ছলতা ফিরে আসে তখন সে কার্পণ্য করতে আরম্ভ করে। কিন্তু সেসব লোকদের কথা আলাদা যারা সালাত আদায় করে। যারা নিজেদের সালাতে সার্বক্ষণিকভাবে কায়েম থাকে।” (সূরা ৭০; মাআরিজ ১৯-২৩)
(খ) হাদীস শরীফে আছে,
(১) প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করলে যেমন কোন ময়লা থাকে না, তেমনই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে তার সমস্ত গুনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন।(বুখারী: ৫২৮)
(২) কবীরা গুনাহ না করলে প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমুআবারের জুমুআ আদায়-এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া পাপরাশি এমনিতেই মুছে যায়। (মুসলিম: ২৩৩)
(৩) কোন মুসলিম যখন ভালো করে ওযু করে পাঁচ বেলা সালাত আদায় করে। তার পাপরাশিগুলো এমনভাবে ঝরে যায়, যেমনভাবে শুষ্ক ডালা থেকে এর পাতাগুলো ঝরে যায়। (সহীহ তারগীব: ৩৫৬
(৪) যার সালাত সুন্দর হবে তার অন্যান্য আমলগুলোও শুদ্ধ ও সঠিক হয়ে যাবে।বিপরীতে যার সালাত শুদ্ধ নয়, তার অন্য আমলও শুদ্ধ হবে না। (সহীহ তারগীব: ৩৬৯)।
(৫) রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, তুমি বেশি বেশি আল্লাহকে সিজদা কর। কেননা, তুমি যখনই একটা সিজদা কর তখনই এর বিনিময়ে জান্নাতে (আল্লাহ) তোমার একটা মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং একটা গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (মুসলিম: ৪৮৮)।
(৬) সাহাবী বারীরা বিন কা'ব (রা) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতে আমি আপনার সাহচর্যে থাকতে চাই। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (স) বললেন, “তাহলে বেশি বেশি সিজদা কর (অর্থাৎ নফল সালাত বেশি বেশি পড়)। (মুসলিম: ৪৮৯)।
(৭) যে লোক সুন্দর করে ওযু করে শুধু সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে যায় তার প্রতি পদক্ষেপে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (বুখারী: ৬৪৭)।
(৮) জামাআতে নামায পড়লে এক নামাযে এর প্রতিদান পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় (বুখারী: ৬৪৭)। আরেক হাদীসে আছে সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব হয়। (বুখারী)
(৯) নবী (স) তার সাহাবী বুরাইদা (রা)-কে বললেন, যে ব্যক্তি রাতের আঁধারে (সালাতের জন্য) মসজিদে আসা-যাওয়া করে তাকে কিয়ামতের দিনের নূরের সুসংবাদ দাও। (সহীহ তারগীব: ৩১০) (১০) যে ব্যক্তি তার দুই নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে কোন বেহুদা (কথা ও) কার্যকলাপ না করে তাহলে তার নাম ইল্লিয়্যিনে লেখা হয়। (সহীহ তারগীব: ৩১৫)
(১১) যে লোক এক নামাযের পর অপর নামাযের অপেক্ষায় থাকে যেন তার কলব মসজিদের সাথে ঝুলে আছে, এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা হাশরের মাঠে আরশের ছায়ার নিচে জায়গা দেবেন। (বুখারী: ৬৬০)
(১২) মসজিদ হলো প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ লোকের ঘর। যে ব্যক্তির ঘর হবে মসজিদ, সেই ব্যক্তির জন্য রয়েছে আরাম, দয়া, সন্তুষ্টি এবং জান্নাতের পথে আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে পুলসিরাত পার করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন (সহীহ তারগীব: ৩২৫)।
(১৩) ফজরের দু'রাকাআত সুন্নতের ফযীলত দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম (মুসলিম)। তাহলে ভেবে দেখুন, ফজরের ২ রাকআত ফরজের ফযীলত কত হতে পারে!
(১৪) যেসব লোককে জান্নাতে নেবেন বলে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নামাযীরা তাদের মধ্যে গণ্য হয়ে যায়।(আবু দাউদ)
(১৫) সালাত কিয়ামতের দিন বান্দার ঈমানের দলীল হয়ে যাবে। বান্দা তখন তার সামনে নূর ও জ্যোতি দেখতে পাবে।
(১৬) সালাতে সিজদার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং আল্লাহর একদম কাছে চলে যায়।(মুসলিম)।
(১৭) সালাত হলো বান্দার মন্দ কাজের কাফফারা যতক্ষণ সে কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হয়। (মুসলিম)
(১৮) সালাত আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম আমল হিসেবে গৃহীত।(বুখারী)
(১৯) সালাত হলো নয়ন জুড়ানো ও চক্ষু শীতলকারী ইবাদত। (নাসাঈ)
(২০) সালাত হলো আত্মার যাকাত, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা (সূরা আনকাবুত ৪৫), যা মানুষকে অশ্লীলতা ও পাপাচার থেকে বিরত রাখে।
(২১) সালাত ইহকালীন জীবনে এবং পরকালের জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তাদানকারী ইবাদাত। (মুসলিম)। [বাকি ফযীলত দেখুন, জামাআতে সালাত (২.১২ নং) পরিচ্ছেদে ।