১. জুমু'আর নামাযের পূর্বে গোসল করা
আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “জুমু'আর দিন” প্রত্যেহ সাবালেগ (মুসলিম নর-নারীর) উপর গোসল করা ওয়াজিব । (বুখারী: ৮৫৮) অনেক ফকীহ জুমু'আর দিনের গোসলকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন, আর যদি কারো গায়ে দুর্গন্ধ থাকে, এ দ্বারা অন্য মুসল্লীর কষ্ট হয়, তবে তার জন্য এ দিনের গোসল ওয়াজিব।
আবু সাঈদ খুদরী (রা) ও আবু হোরায়রা (রা) বর্ণিত অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যে লোক জুমু'আর দিন গোসল করল, তার কাপড়-চোপড় থেকে সবচেয়ে ভালো পোশাকটি পরিধান করল, তার কাছে থাকলে গায়ে সুগন্ধিও লাগাল, অতঃপর জুমু'আয় হাজির হলো, কারো ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে এগিয়ে গেল না, তারপর ইমাম সাহেবের আগমনের পর থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত চুপচাপ রইল (অর্থাৎ মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনল), উক্ত ব্যক্তির পূর্ববর্তী জুমুআ থেকে বর্তমান জুমু'আ পর্যন্ত ৭ দিন এবং এতদসঙ্গে আর ৩ দিন যোগ করে মোট দশ দিনের গোনাহখাতা আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদ: ৩৪৩)।
আউস ইবনে আউস আস সাকাফী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “জুমু'আর দিন যে ব্যক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরয গোসল করে এবং) নিজেও ফরয গোসল করে । পূর্বাহ্নে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়, ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনে, কোন কিছু নিয়ে তামাশা করে না- ঐ ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে রয়েছে। বছরব্যাপী রোযা পালন ও পুরো একবছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সাওয়াব।” (আবু দাউদ: ৩৪৫)
২. দুই ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে গোসল করা
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (স) থেকে সরাসরি কোন হাদীস পাওয়া যায় না। তবে বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন । (মুয়াত্তা মালেক- কিতাবুল ঈদাইন: ২)
৩. হজ্জ বা উমরার ইহরাম বাঁধার পূর্বে
যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইহরাম বাঁধার পূর্বে যাবতীয় কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে গোসল করতেন।” (দারেমী: ১৮০১)।
৪. মক্কায় প্রবেশের পর তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে
হাদীসে এসেছে, “সাহাবী ইবনে উমর (রা) যখনই মক্কায় আগমন করতেন তখন সেখানে তিউয়া (বর্তমানে জারওয়াল) নামক স্থানে রাত্রি যাপন করতেন এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত এখানেই অবস্থান। করতেন। অতঃপর গোসল করতেন (তারপর তিনি কাবায় প্রবেশ করতেন)। তিনি উল্লেখ করেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) এমনই করতেন। (বুখারী, হজ্জ অধ্যায়: ১৫৭৪)।
৫. আরাফার দিনে গোসল
“ইমাম বায়হাকী (র) ইমাম শাফেয়ী (র)-এর সূত্র ধরে যাযান নামক একজন তাবেয়ী থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক আলী (রা)-কে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, ইচ্ছা করলে তুমি প্রত্যেক দিনই গোসল করতে পার । লোকটি আবার বলল, সেটা আমার উদ্দেশ্য নয়; আমার উদ্দেশ্য বরং ঐ গোসল, যা শরী'আত নির্দেশিত । তখন (আলী [রা]) বললেন, তা হলো- জুমু'আ ও আরাফাতের দিন এবং কুরবানী ও ঈদুল ফিতরের দিন গোসল করা।” (ইবনে আবী শাইবা- ১/৪৩৪)।
৬. মেয়েদের রোগজনিত কারণে স্রাব হলে প্রতি নামাযের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব
মেয়েদের ইস্তিহাদা অর্থাৎ রোগজনিত কারণে অনিয়মিত স্রাব হলে প্রতি নামাযের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব। হায়েযের নির্ধারিত পিরিয়ড অতিক্রম হওয়ার পর যে গোসল করবে সেটা হলো ফরয গোসল । তাছাড়া মাসিকের যে নির্ধারিত সময় যেমন প্রতি তিন, চার, পাঁচ বা সাত দিন, যা ব্যক্তি বিশেষের অভ্যাসের উপর নির্ভরশীল। উক্ত সময়ের পরও যদি রক্তস্রাব চলতে থাকে। তাহলে ঐ বর্ধিত সময়কে রোগজনিত সময় বলে ধরা হবে। ঐ সময় প্রতি নামাযের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব। অথবা প্রতি এক গোসলে যোহর-আছর একত্রে এবং মাগরিব-ইশা একত্রে পড়া জায়েয । (এ বিষয়ে দেখুন আবু দাউদ: ২৮৭)।
৭. ইসলাম গ্রহণের পূর্বে
কোন কাফির মুসলিম হতে চাইলে কালেমা পড়ার আগে ওযু করা মুস্তাহাব। সাহাবী কাইস ইবনে আছেম (রা) বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (স)-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলাম। তিন আমাকে বরই পাতামিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করে আসতে নির্দেশ দিলেন।” (আবু দাউদ: ৩৫৫, নাসাঈ: ১৮৮)। এ গোসলকে কোন কোন ফকীহ ওয়াজিব বলেছেন। তবে শেখ ইবনে বায (রা) এ গোসলকে সুন্নাত বলেই অভিমত দিয়েছেন।