নারীদের সাথে সমকামিতা বৈধতার আকিদা:

আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী ‘আল-ইসতিবসার’ (الاستبصار) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন:

“আবদুল্লাহ ইবন আবি ইয়া‘ফুর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীর সাথে তার পিছনের পথে সংগমে মিলিত হয়; তখন তিনি বললেন: সে রাজি থাকলে কোন অসুবিধা নেই। আমি বললাম: তাহলে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُ (তখন তাদের নিকট ঠিক সেভাবে গমন করবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন) —এর বাস্তবতা কোথায়? তখন তিনি বললেন: এই আয়াতের বিধান সন্তান কামনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং তোমরা সন্তান অনুসন্ধান কর, আল্লাহ যেভাবে তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ْ نِسَآؤُكُمۡ حَرۡثٞ لَّكُمۡ فَأۡتُواْ حَرۡثَكُمۡ أَنَّىٰ شِئۡتُمۡ﴾ [سورة البقرة: 223]

“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর। —(সূরা আল-বাকারা: ২২৩)।”[1]

তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ (الاستبصار) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:

“মূসা ইবন আবদিল মুলক থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবুল হাসান রেজা আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক তার স্ত্রীর পিছনের পথে সংগমে মিলিত হওয়ার বিষয়ে; তখন তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি আয়াত তা বৈধ করে দিয়েছে, লুত আ.-এর উক্তি: ﴾هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡ﴿ (এরা আমার কন্যা, তোমাদের জন্য তারা পবিত্র); কারণ, তিনি জানতেন যে, তারা সম্মুখস্থ গুপ্তাঙ্গের প্রত্যাশী ছিল না।”[2]

তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ (الاستبصار) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:

“আলী ইবন হেকাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাফওয়ানকে বলতে শুনেছি: আমি রেজা আ.কে বললাম: তোমার আযাদ করা গোলামদের একজন আমাকে অনুরোধ করল যাতে আমি তোমাকে একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করি; কারণ, সে তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে ভয় ও লজ্জাবোধ করে; তখন তিনি (রেজা আ.) বললেন, মাসআলাটা কী? সে বলল, পুরুষ ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রীর পিছন দিকে সংগমে মিলিত হওয়ার বৈধতা আছে কি? তিনি বললেন: এটা তার জন্য বৈধ আছে।”[3]

তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ (الاستبصار) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:

“ইউনুস ইবন ‘আম্মার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ. অথবা আবুল হাসান আ.কে বললাম: আমি কখনও কখনও দাসীর সাথে তার পায়ু পথে মিলিত হই এবং তা ফেটে যায়। অতঃপর আমি আমার নিজের উপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি যদি স্ত্রীর সাথে পুনরায় অনুরূপ করি, তবে আমার উপর এক দিরহাম সদকা করা আবশ্যক হবে; আর এটা আমার উপর কঠিন হয়ে গেল; তখন তিনি বললেন, তোমার কিছুই দিতে হবে না; আর এটা তোমার জন্য বৈধ।”[4]

তিনি ‘আল-ইসতিবসার’ (الاستبصار) নামক গ্রন্থে আরও বর্ণনা করেন:

“হাম্মাদ ইবন ওসমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.কে জিজ্ঞাসা করলাম অথবা এমন ব্যক্তি আমাকে সংবাদ দিয়েছে, যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে ঐ পুরুষ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীর সাথে ঐ জায়গায় (পিছন পথে) মিলিত হয়; আর সে অবস্থায় (জিজ্ঞাসার সময়) ঘরের মধ্যে একদল লোক উপস্থিত ছিল। অতঃপর তিনি আমাকে তার উচ্চ কণ্ঠে বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার গোলামকে সাধ্যাতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিয়ে কষ্ট দেয়, সে যেন তাকে বিক্রি করে দেয়; অতঃপর তিনি ঘরে অবস্থানরত সকলের চেহারার দিকে তাকালেন, অতঃপর আমার কথায় মনোযোগ দেন এবং বলেন: তাতে কোন অসুবিধা নেই।”[5]

‘আল-ইসতিবসার’ (الاستبصار) নামক গ্রন্থের লেখক এমন দু’টি হাদীসের অবতারণা করেন যাতে নারীদের সাথে সমকামিতার ব্যাপারে নিষেধের কথা বর্ণিত হয়েছে। তারপর তিনি সে হাদীস দুটির টীকার মধ্যে দুইটি হাদিসের পর্যালোচনা করে বলেন:

“এই হাদিস দু’টির মধ্যে একটি দিক হল, অপছন্দনীয়তার (মাকরূহ) বর্ণনা করা। কারণ, উত্তম কাজ হল, তা (সমকামিতা) থেকে বিরত থাকা; যদিও তা হারাম (নিষিদ্ধ) নয় ...। তাছাড়া এ হাদিস দু’টি ‘তাকীয়া’র নীতির স্থলাভিষিক্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রাখে; কারণ, সাধারণ জনগণের কেউ এটাকে বৈধ বলে অুমোদন দেয় না।”[6]

আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যেসব হাদিস সমকামিতা বৈধতার ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো ‘তাকীয়া’র নীতি অনুসরণ করে বর্ণিত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কারণ, মানুষ সাধারণভাবে এই বিষয়গুলো কামনা করে; ফলে ইমামগণ তাদের (জনগণের) কারণে এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘তাকীয়া’র পথ বেচে নিয়েছে। নিশ্চয় প্রত্যেক বস্তু এবং প্রত্যেক খবরের (হাদিসের) মধ্যে ‘তাকীয়া’র সম্ভাবনা রয়েছে।সমগ্রিকভাবে বলা যায় যে, এই বিষয়টির অসারতা সুস্পষ্ট এবং তা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে যা এসেছে, তার বিপরীত। আর এর সবকিছুই হয়েছে শুধুমাত্র খেয়াল-খুশি ও প্রবৃত্তির অনুসরণে।

>
[1] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩

[2] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩

[3] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩

[4] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, (باب النساء فيما دون الفرج) পৃ. ৪৪৪

[5] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩

[6] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন হাসান আত-তুসী, আল-ইসতিবসার (الاستبصار), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৪