শির্ক কী ও কেন? চতুর্থ পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী ১ টি

এ সব শির্কে আসগার ছাড়াও সমাজে প্রচলিত আরো কিছু বিষয়াদি রয়েছে যা বাহ্যত কুসংস্কারের মতই মনে হয়। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রেও বস্তুর প্রতি অপকারের ধারণা থাকায় মানুষের মনের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা শির্কে আকবার বা শির্কে আসগারে পরিণত হতে পারে। নিম্নে এর কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো :

১. বাড়ীর খাদ্য দ্রব্যের বরকত কমে যাওয়া এবং মৃত আপনজনদের রূহের উপর পানি পড়ে যাওয়ার ভয়ে রাতের বেলা ঘরের ব্যবহৃত পানি বাইরে না ফেলা।

২. ভ্রমণের প্রাক্কালে কোনো গাভী বা কুকুর হাঁচি দিলে এতে দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা করা।

৩. রবিবারে বাঁশ কাটাকে বাঁশ ঝাড়ের জন্য অশুভ মনে করা।

৪. ভ্রমণের প্রাক্কালে বাড়ীর পিছনের দরজা দিয়ে বের হওয়াকে অশুভ বলে মনে করা।

৫. কোন ভাল কাজের উদ্দেশ্যে বের হলে অকল্যাণ হতে পারে এ ভয়ে পিছনের দিকে ফিরে না তাকানো।

৬. পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার ভয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকা।

৭. পেঁচা দেখলে বা এর আওয়াজ শুনলে এটাকে অশুভ মনে করা।

৮. দিনের বেলা ঘরের চালে বসে কাক ডাকলে এটাকে কোনো মেহমান আগমনের পূর্বাভাস বলে মনে করা।

৯. বরকত লাভের উদ্দেশ্যে নতুন বউ এর পিতার বাড়ী থেকে শাড়ীর আঁচলে বেঁধে কিছু চাউল এনে তা স্বামীর বাড়ীর গুদামে ছিটিয়ে দেয়া।

১০. রাতের বেলা ঘরের চালে বসে পেঁচা ডাকলে এতে বিপদের আশঙ্কাবোধ করা।

১১. নবজাত শিশুকে জিনের অশুভ দৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য বাচ্চার কানে ছিদ্র করা।

১২. একই উদ্দেশ্যে বাচ্চার বালিশের নিচে জুতার টুকরা রাখা।

১৩. বাংলা বর্ষ পঞ্জিকার বর্ণনানুযায়ী সপ্তাহের শনিবার, মঙ্গলবার ও অমাবশ্যার দিনকে অশুভ মনে করা এবং তাতে কোনো বিবাহ অনুষ্ঠান না করা।

১৪. ব্যবসায়ে লোকসান হওয়ার ভয়ে বেলা ডুবার পর চিটাগুড় ও হলুদ বিক্রি করা থেকে বিরত থাকা।

১৫. সোমবার ও শুক্রবার ব্যতীত অন্যান্য দিনসমূহে কৃষিকাজ আরম্ভ করলে ভাল ফলন হয় না বলে মনে করা।

১৬. কলার চারা রোপণের পূর্বে ঘরের আঙ্গিণা অতিক্রম করলে কলার ফলন ভাল হয় বলে মনে করা।

১৭. কাঁচা মরিচের চারা লাগিয়ে হাতের দ্বারা আগুনের তাপ নেওয়া এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে যে, এতে কাঁচামরিচ অধিক ঝাল হবে।

১৮. হালুয়া বা মিষ্টি খেয়ে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করলে এতে কুমড়ায় মিষ্টি বেশী হয় বলে মনে করা।

১৯. রাতের বেলা কাউকে টাকা দিলে এতে ভাগ্য খারাপ হবে বলে মনে করা।

২০. পৃথিবী একটি ষাড়ের শিং এর উপর রয়েছে, যখনই উহা শিং নাড়া দেয় তখনই ভুমিকম্প হয় বলে মনে করা।

২১. ভ্রমণের সময় রাস্তায় কোনো বিধবা মহিলার সাথে সাক্ষাৎ হলে বিপদের ভয়ে ভ্রমণ বাতিল করা।

২২. নতুন পোশাক পরিধান করার পর হাঁচি আসলে এটাকে অশুভ বলে মনে করা।

২৩. বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে দোকানে মাল বাকী বিক্রি করাকে অশুভ মনে করা।

২৪. সকাল বেলা দোকান খুলে সারাদিন বিক্রি না হওয়ার ভয়ে প্রথমে কারো কাছে বাকীতে কিছু বিক্রি না করা।

২৫. চল্লিশা পালন না করলে মৃত ব্যক্তির কবরে আযাব হয় বলে মনে করা।

২৬. নবজাত শিশুকে জিনের কুদৃষ্টি থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে শিশুর মাথার চুল না কাটা।

২৭. শনিবার ও মঙ্গলবারকে অশুভ মনে করে ভ্রমণে না যাওয়া।

২৮. সন্তান বিকলাঙ্গ জন্ম হওয়ার ভয়ে স্ত্রী গর্ভবতী থাকাবস্থায় গরু ও ছাগল যবাই করা থেকে বিরত থাকা।

২৯. পেট ব্যথা হলে তা নিবারিত হওয়ার আশায় বিরিয়ানী পাক করে তিন রাস্তার মাথায় একটি পাত্রের মাঝে কিছু খাবার রেখে আসা।

৩০. কোনো কলাগাছের কাঁদি সঠিকভাবে বের না হলে গর্ভবতী মহিলার সন্তান প্রসবের সময় সমস্যা হবার আশঙ্কায় তাকে সে কাঁদির কলা খেতে না দেয়া।

৩১. জমজ সন্তান হবার ভয়ে যুক্ত কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা।

উপর্যুক্ত বিষয়াদি ছাড়াও দেশের মানুষের মাঝে আরো অনেক বিষয়াদি রয়েছে যা শুনতে কুসংস্কারের মত মনে হয়। তবে মানুষের অন্তরের অবস্থা বিচারে এ সব ধ্যান-ধারণা শির্কে আকবার বা আসগারে পরিণত হতে পারে।