শির্ক কী ও কেন? চতুর্থ পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী ১ টি
বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিমদের মাঝে প্রচলিত শির্ক

ইসলামের বিধান মহান আল্লাহ প্রদত্ত একটি অতুলনীয় নে‘আমত। যারা তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে তারা বড়ই সৌভাগ্যবান। একজন মানুষের পক্ষে মুসলিম হওয়া তার জন্য অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। সে জন্য বাংলাদেশের একজন সাধারণ মুসলিমও এ জন্য গর্ববোধ করে। এমনকি কেউ ইসলাম বিরোধী বা ইসলাম বিনষ্টকারী কোনো কাজ করলেও এ-জন্য কেউ তাকে অমুসলিম বলুক, এমন কথা তারা বরদাশত করতে পারেন না। তবে আসল কথা হচ্ছে মুসলিম হওয়ার বিষয়টি প্রকৃত আনন্দ ও গর্বের বিষয় হচ্ছে কেবল সে ব্যক্তির জন্যেই যে ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছে এবং ইসলাম বিরোধী যাবতীয় চিন্তা, চেতনা, কর্ম ও অভ্যাসকে চুড়ান্তভাবে পরিহার করে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং এর মধ্যে থেকেই তার জীবন অতিবাহিত করেছে।

বাংলাদেশের মুসলিমরা যদিও নিজেদেরকে সত্যিকারের মুসলিম বলে দাবী করে থাকেন, তবে তাদের অধিকাংশের চিন্তা, চেতনা, কর্ম, বক্তব্য ও অভ্যাস এ কথারই সাক্ষ্য দেয় যে, আদম সন্তানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য শয়তান বিতাড়িত হওয়ার সময় যে প্রতিজ্ঞা করেছিল এবং তা বাস্তবায়নের জন্যে পরবর্তীতে সে যে সব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, তাদের উপর শয়তান তার সে প্রতিজ্ঞা ও পরিকল্পনা বাস্তবেরূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। তাদেরকে তাদের অজান্তেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়কার আরবের মুশরিকদের অবস্থার শিকারে পরিণত করেছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছিলেন :

﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾ [يوسف: ١٠٦]

‘‘এদের অধিকাংশই মুশরিক অবস্থায় আল্লাহর উপর বিশ্বাস করে।’’[1]

বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অধিকাংশ মুসলিমদের মাঝে যে শির্কের ছড়াছড়ি রয়েছে, এ বিষয়ে শরী‘আত বিশেষজ্ঞদের সাক্ষ্য প্রমাণ আমরা দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে উপস্থাপন করেছি। নিম্নে আমরা তাদের বাস্তব কিছু শির্কী আক্বীদা-বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের উদাহরণ উপস্থাপন করবো ইন-শাআল্লাহ, যা এ কথারই উত্তম সাক্ষ্য বহন করবে যে, তারা নিজেদেরকে একেকজন মুসলিম বলে দাবী করলেও তাদের অধিকাংশরাই এর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন।

তারা তাদের বিভিন্ন বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসের দ্বারা যে শুধুমাত্র আরবের মুশরিকদের সমতুল্যই হয়েছেন তা নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের চেয়েও অগ্রগামী হয়েছেন।আমাদের দেশের মুসলিমদের ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা পর্যালোচনা করে আমার কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে, তাদের অধিকাংশের বিশ্বাস, কর্ম ও অভ্যাসে যে সকল শির্কের প্রচলন রয়েছে, তা শির্কে আকবার এর চার প্রকারকেই শামিল করে। নিম্নে তা এক এক করে বর্ণনা করা হলো :

>
[1] . আল-কুরআন, সূরা ইউসুফ : ১০৬।